কাল লকডাউনে রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। লকডাউন সফল করার জন্য প্রশাসনকে তেমন কোন কষ্ট করতে হয়নি। মানুষ আতঙ্কে ঘর থেকে বেরোয়নি।
আতঙ্কিত হওয়ার কারণও আছে। গত কয়েক সপ্তাহে মধ্যমগ্রামে করোনা রোগী প্রচুর বেড়েছে। আমার মত একজন বেসরকারি চিকিৎসকের প্রতিদিন চার- পাঁচজন রোগীর করোনা ধরা পড়ছে।
পাল্লা দিয়ে জ্বরের রোগী বাড়ছে। হঠাৎ করে এত জ্বরের রোগী বাড়ার সাথে করোনা মহামারী সম্পর্ক বোঝার জন্য জনস্বাস্থ্য বিশারদ হওয়ার দরকার নেই। প্রায় সকলকেই কোভিড- ১৯ পরীক্ষার জন্য লিখছি। করাচ্ছেন খুব অল্প মানুষই।
প্রাইভেটে কোভিড-১৯ (RT PCR) পরীক্ষার খরচ বেশ বেশি। প্রায় ২৫০০ টাকার মতো। সরকারি জায়গায় টেস্ট করার হাজার হ্যাপা। ঘোরাঘুরি করতে করতেই জ্বর কমে যাচ্ছে। তাছাড়া অনেকের মধ্যেই করোনা হলে সমাজচ্যুত হওয়ার ভয় কাজ করছে। সকলে টেস্ট করলে রোগীর সংখ্যাটা নিঃসন্দেহ কয়েক গুণ বেশি হতো।
রোগ ধরা পড়লে আরেক সমস্যা। অনেকেরই শ্বাস কষ্ট, প্রচণ্ড জ্বর থাকছে। তাঁরা ভর্তি হওয়ার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছেন। সব জায়গাতেই শুনতে হচ্ছে, বেড খালি নেই।
তবে এতো অন্ধকারে একটাই আশার আলো, করোনার মর্টালিটি রেট নিঃসন্দেহ খুবই কম। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখছি অধিকাংশ মানুষই হোম আইসোলেশনে থাকছেন এবং সুস্থ হয়ে উঠছেন।
অতএব করোনা আক্রান্ত হলেই সব শেষ এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ভাগ্য খুব খারাপ না থাকলে আপনি বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে যাবেন। এবং তার জন্য হাতি ঘোড়া চিকিৎসাও কিছু লাগবে না।
যারা হোম আইসোলেশনে থাকছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে – তারা একটি আলাদা ঘরে থাকবেন। সবসময় একটি সার্জিক্যাল মাস্ক পরে থাকবেন এবং আলাদা বাথরুম, থালা-বাসন, জামা- কাপড় ব্যবহার করবেন। বাড়িতেও অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে সরাসরি কথা না বলে মোবাইলে কথা বলবেন। জ্বর কমে গেলেও বা সুস্থ হয়ে উঠলেও অন্তত চৌদ্দ দিন আইসোলেশনে থাকবেন।
আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিকে কখন হসপিটালাইজেশনের দরকার হয়, তাই নিয়ে গাইডলাইন আছে। পরে তা নিয়ে বিস্তারিত লেখা যাবে। তবে করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য একটি পালস অক্সিমিটার অবশ্যই জোগাড় করতে হবে। প্রতি তিন চার ঘন্টা অন্তর অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখতে হবে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৫% এর কম হলে ভর্তির চিন্তা ভাবনা করতে হবে এবং ৯০% এর কম হলে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
আমাদের দূর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো করোনার প্রথম ঢেউতেই টলমল করছে। এই পরিকাঠামো টিকিয়ে রাখতে গেলে অধিকাংশ রোগীকেই হোম আইসোলেশনে থাকতে হবে।
মিডিয়াতে বারবার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু গুলিকে হাইলাইট করছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এগুলো ব্যতিক্রমী ঘটনা। অধিকাংশ মানুষই কিন্তু বাড়িতে থেকেই সুস্থ হচ্ছেন। এসময় টিভিতে খবর বেশি না দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
তবে চিকিৎসক হিসাবে রোগীকে হোম আইসোলেশনে থাকতে বলার সময় যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি সেটা হলো, অধিকাংশ রোগীর বাড়িতেই একটি বা দুটি ঘর। রোগীকে আলাদা ঘরে রাখা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া গোটা বাড়িতে একটাই বাথরুম।
মধ্যমগ্রাম অঞ্চলে এরকম রোগীদের জন্য একটি সেফ হোম থাকলে হয়তো সমস্যা কিছুটা মিটতো। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন- মধ্যবিত্ত রোগীরা সেখানে থাকতে পারতেন। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া সেফ হোম চালু প্রায় অসম্ভব।
সম্ভবত ভ্যাক্সিন বাজারে আসার আগেই এ অঞ্চলে প্রায় সকলেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবো। তাছাড়া RNA ভাইরাসের ভ্যাক্সিন কতটা কার্যকরী হবে তাও এখনো বলা মুশকিল। তাই নিজের ইমিউনিটি ও মাস্ক, হাত ধোওয়া এবং শারীরিক দূরত্ব রক্ষার উপরই আপাতত আমাদের ভরসা করতে হবে। দু’বেলা পুষ্টিকর খাবারের সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
যদিও দেশের অধিকাংশ মানুষের পক্ষে দু’বেলা পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করা অসম্ভব। দীর্ঘ দিনের লকডাউন তাঁদের অর্থনৈতিক ভাবে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দিয়েছে।