বগমবা বম বম ভোলে
শিব আল্লা দোলে
জয় শ্রী রামকৃষ্ণ| জয় স্বামী বিবেকানন্দ| ধন্য আপনাদের শিষ্য| ধন্য তারাপীঠের সেবায়েত| হ্যাঁ– আমি ময়ূরী মিত্র– গোটা জীবনের একটা মিনিটও যে ঈশ্বর নিয়ে ভাবেনি সেই আমি আপনাদের নতজানু হয়ে প্রণাম করছি| সরকারী অনুমতি থাকা সত্ত্বেও মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে বিজ্ঞানকে অগ্রাধিকার দিলেন আপনারা| খুললেন না মন্দিরের দরজা| বললেন– খুলবেন সেদিনই যেদিন দর্শনার্থীর সর্বরকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারবেন| প্রমাণ করলেন– বিজ্ঞান, শাস্ত্র ধর্ম সব সব মানুষের মঙ্গলের জন্য| তারাপীঠের সেবায়েতরা দেখালেন– মানুষের বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যবোধ শুধু অর্জিত ডিগ্রির ওপর নির্ভর করে না|
প্রয়াত দুই সংস্কারক– রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ| ইচ্ছে করেই আর কোনো বিশেষণ দিলাম না তোমাদের| কারণ—তোমাদের দুজনের প্রতি আমার প্রেম কেবল দুই উন্নত ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের প্রতি প্রেম– ভারতের দুই মহান সংস্কারকের প্রতি এক সাধারণ মানবীর শ্রদ্ধা| কোনোদিন ধর্মগুরু ভাবিনি তোমাদের| তা ছিলেও কি তোমরা? রামকৃষ্ণ– নিজের স্ত্রীর অসুখের জন্য তোমার পা ধোয়া জল নিতে এসেছিল তোমারই এক শিষ্য| লাথি মেরে জলের বাটি উল্টে বলেছিলে–“ডাক্তার দেখা”| আর তুমি বিবেকানন্দ– তুমি তো বলেছিলেন– “বেদ ফেলে ফুটবল খেলতে যাতে যুবকের শরীর সুঠাম হয়|” এ কাহিনি যেদিন পড়েছিলাম প্রেমে উন্মাদ হয়েছিলাম আমি| আবার বলি– সেরফ তোমাদের দুটো কোমল প্রাণের প্রতি ছিল আমার এই পাগলভাব|
এতবছর আগে মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষা নিয়ে এত ভেবেছিলে তোমরা? তাই আজ তোমাদের ছাত্ররা মঠমন্দির ফেলে, তেরপল খাদ্য পানীয় ওষুধ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সুন্দরবনের কালো জলে ডোবা শিশুর কাছে, মায়ের কাছে| প্রিয় মঠকর্মীরা– একদিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দুটি সেলফি তুলে কী গালাগাল খেয়েছিলে তোমরা এই ফেসবুকে! তোমরা সন্ন্যাসী কিনা সে প্রশ্নও উঠেছিল| বিশ্বাস কর ভাই– আমার কিন্তু খারাপ লাগেনি সামান্য দুটি ছবি তোলা| কারণ আমি তো তোমাদের সন্ন্যাসী ভাবিইনি| ভেবেছি কর্মী| আজ দেখো মানুষের সাহায্যে তোমাদের মহৎ ছবিগুলো অন্য লোকে তুলে তুলে পাঠাচ্ছে আমাদের| সেলফি নয়!
আর ধর্মস্থান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত? ওরে বাপ রে! একী কাণ্ড করলে তোমরা? দীর্ঘদিন ধর্মকার্যে যুক্ত থেকে কী নিখুঁত অংকে বুঝলে– মারণরোগে ধর্মভীরু ভারতীয়র ধর্মালয়ে যাবার Tendency ও Possibility দ্বিগুণ হারে বাড়বে! ফলে দ্বিগুণ হারে অসুস্থ হবেন তাঁরা! এতো গণতন্ত্রে গণসম্মেলন করে বিরাটসংখক ভোটদাতাদের তুষ্ট রাখার এক্সক্লুসিভ ফর্মুলাটাই নিকেশ করে বসে রইলে তোমরা! ধর্মস্থান যে অতিমারীতে necessary service কিংবা commodity নয়– এইভাবে বুঝিয়ে ছাড়লে! মরেছে রে অথচ কী মজা দেখো! ধর্মমুখী ভারতীয়দের যে psychology কে অক্ষরে অক্ষরে বুঝে তোমরা ধর্মস্থানে জমায়েত বাদ দিলে সেই একই মনের খেলাকে একই ভাবে বুঝে মানুষের অযৌক্তিক কাজকে তাতিয়ে গেল আমাদের উঁচু মনের নেতারা|
একটা crucial period! চিকিৎসক বলছেন–“বাড়বে এ রোগ! এ দুমাসে আরো বাড়বে| মরবে– আরো মরবে|” আর ঠিক এই অবস্থায় ধর্মস্থান খোলা হবে| হিন্দু মুসলিম যে যার মত করে পুজো দিয়ে যাবে| ধর্মভীরু তৃপ্ত হবে দেবতার আরাধনায়| ভাববে– “দেবতা আছেন তো! আর কী দরকার স্বাস্থ্যবিধির?” —ওরে! কী ফট ফট করে মরবে রে লোকগুলো! ভেড়ার মত মানুষগুলো কেন ভেড়ালেন মন্দির মসজিদে? অদেখা কিটস Finished?
হা রামকৃষ্ণ! হা বিবেকানন্দ| ঈশ্বর ভজেও তোমরা যেটুকু মানুষ খুঁজেছিলে আজকের ধর্মনিরপেক্ষ গণবৈঠকে সেটুকুও নেই গো| সাংবাদিক সম্মেলনে কখনো আলোচিত হয় না কম্পিউটার কিংবা আইফোনবিহীন শিশুর শিক্ষার আগ্রহের কথা| একবারও ভাবা হয় না– একটি গরিব ছাত্র যখন দেখে ক্লাসে তার ঠিক পাশে বসা বন্ধুটি কম্পিউটারে অনলাইনে পড়ছে– আর সে ইচ্ছে থেকেও পড়তে পারছে না– তখন কী কষ্টটাই না হয় তার! কেন ক্ষমা চাইলেন না প্রশাসন ওই পড়তে আগ্রহী গরিব শিশুগুলোর কাছে? ওহে! পুরাকালের রাজতন্ত্রেও যে ছাত্রের অসীম সম্মান ছিল!
জলে ভাসে বইপত্র! একটিবার কেন বললাম না আমরা– ওরে তোরাও আমাদের সন্তান– একটু সবুর কর–ঠিক নতুন বই পাঠাব! কেন বললেন না? কেন?.শিশুর ভোটার হতে দেরি আছে বলে? অবশ্য এ দেশে তো শিশু চাদর তুলে মৃত মাকে জাগাতে গিয়ে বার বার ফিরে যায়| এবার নাহয় নিজের মৃতদেহ চাদর তুলে দেখবে আর চলে যাবে!
গণবাস আর গণট্রেন– নির্দেশ: বাসে সবাই পাশাপাশি গা ঘেঁষে বসবে| সিট ফুল হয়ে গেলে আর যাত্রী উঠবে না| ব্যাস! এই হয়ে গেল আপনার Finest Social Distance| আমার ফেলু বিজ্ঞানবোধ কিন্তু শাসাচ্ছে আমায় : “এই ময়ূর বল না– একজন সিটে আরেকজন ঠিক তার থেকে তেরছা দাঁড়ালে অনেক Scientific হবে Social Distance| যে দাঁড়াবে তার ঠিক সামনে কোনো লোক বসবেই না| ফাঁকা থাকবে জায়গাটা স্রেফ| “কী করে বোঝাই হৃদয়ের পাখিটাকে– “ওরে এ জনবাস| টিকিট কাটা জনতাকে দাঁড় করিয়ে খচানো যাবে না রে| দেখছিস না জনগণট্রেন ৩৫ ঘন্টার পথ নিয়ে যাচ্ছে ৭০ ঘন্টায়–পায়খানা পেচ্ছ্যাপে মাখামাখি শ্রমিককে! জানলা দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গণসিনেমা দেখে যাচ্ছে খালিপেট শ্রমিক| বোঝ ময়ূর বোঝ! গণতন্ত্রের Making Process বোঝ| Implimentation বোঝ| হি হি- -দুটোর কতটা তফাৎ রাখতে হয় সেটাও বোঝ| চুপচাপ বোঝ|”
যাবেন না দাঁড়ান– এখনো শেষ হয়নি আমার| একবারও নাম বলা হয় না যৌনকর্মীদের| বুঝতে পারছেন ন–তাঁদের অন্তত বছরদুয়েকের খাদ্যসংস্থান ও rehabiltation লাগবে! কেন বুঝছেন না– মানুষকে স্পর্শে সুখ দেয়া ছাড়া আর কিছু জানে না তারা! কী নতুন পেশায় যুক্ত করা হবে তাঁদের? বিবেকানন্দ– তুমি কিন্তু সবার আগে এঁদের জন্য খুলেছিলে মন্দিরের দুয়ার! তখন বোধহয় ব্রিটিশরাজ ছিল– তাই না? আজকের জনগণতন্ত্রে পারতে না তুমিও। আমি Definite| এখানে জন আছে| গণ আছে| আর মন? বরফের খাটে|
পরিশেষে একটি ছোট খবর| তথ্যসূত্র: আজকের এইসময় পত্রিকার পৃষ্ঠা ৩| নাখোদা মসজিদ কমিটির আহবায়ক নাসির আহমেদ প্রশ্ন করেছেন– “যদি নামাজ পড়ার জন্য দশজনকে আনা হয় বাকিরা তবে কী করবেন”?
উত্তর দিলাম: যদি ভারতবর্ষকে নিজের দেশ মনে করেন যদি সত্যি সব মানুষের মঙ্গল চান, স্বাস্থ্য চান, সবল শিশু চান কিংবা যদি সত্য অর্থে সম্প্রীতি চান তাহলে বাকিরা নামাজ বন্ধ করে মানুষের ত্রাণে ঝাঁপিয়ে পড়ুন| বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করুন| সুন্দরবনে বহু বাচ্চা বউ ফুল ল্যাংটো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে| আরো দাঁড়াবে| মৌলনা সাহেব– নামাজপড়ুয়ারা তো আপনার ছাত্র | আপনি আচার্য হয়ে বোঝান আপনার ছাত্রদের| আমি গিয়ে আপনার পা জড়িয়ে ধরব|
জানেন– আমি আপনাদের হাতে তৈরি করা সালোয়ার ছাড়া পরিই না|
কী ভেবেছিলেন ঘন ঘন দলবদলের বাঙালী বুদ্ধিজীবী? আমি কেবল আপনাদের পছন্দসই বিষয় নিয়ে selective প্রতিবাদ করে যাবো? আপনাদের বানানো সম্প্রীতির শ্লাঘা চরিতার্থ করতে থাকব?– Noooooooo|
আর ভাগ করবেন না| প্রেমেও নয়| প্রতিবাদেও নয়|
আমারও আর ভাগ নেই|
প্রতিবাদী বলিষ্ঠ লেখা এবং সময়োপযোগী। ধন্যবাদ আপনাকে।
মানুষের বিবেক জাগ্রত হোক । বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আলোকিত হোক জগতবাসি । বলিষ্ঠ লেখনী
অসামান্যলেখা।