ইনসুলিন আবিষ্কারের ইতিহাস জানার আগে ইনসুলিন জিনিসটা কি, সে সম্পর্কে আমরা একটু জেনে নি।
এটা সম্ভবত সকলেই জানেন, ইনসুলিন তৈরি হয় অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াসের আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্সের বিটা সেল থেকে।
অগ্নাশয় আমাদের দেহের একটি মিশ্র গ্রন্থি। এখন প্রশ্ন হল মিশ্র-গ্রন্থি কাকে বলে? যে গ্রন্থির মধ্যে অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা দুইরকম গ্রন্থিই থাকে তাকে মিশ্র গ্রন্থি থাকে।
অগ্নাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ পরিপাক তন্ত্রের একটি গ্রন্থি, যেটি থেকে নির্গত অগ্ন্যাশয় নালী পিত্ত নালীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামের মধ্য অংশে উন্মুক্ত হয়। বহিঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত উৎসেচক আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।
অগ্নাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশের নাম আইলেট অফ ল্যাঙ্গারহান্স। এখান থেকে তৈরি হয় নানারকম হরমোন; যা রক্তের মধ্যমে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যায়, এবং দেহের বিভিন্ন জায়গায় নির্দিষ্ট কিছু কাজ করে।
আইলেট অফ ল্যাঙ্গারহান্স নাম কেন হল? আইলেট মানে ছোট দ্বীপ। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে পর্যবেক্ষণ করলে, অগ্ন্যাশয়ে হালকা রং-এ রঞ্জিত দ্বীপের মতো ছড়িয়ে থাকা কোষগুলোকে বলা হয় আইলেট অব ল্যাংগারহ্যান্স। এখানে চার রকম কোষ থাকে এবং প্রতি কোষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন হরমোন তৈরি হয়।
যেমন
• বিটা কোষ (৫০-৮০%)– ইনসুলিন এবং অ্যামাইলিন— রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়
• আলফা কোষ (১৫-২০%)—গ্লুকাগন– রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়
• ডেল্টা কোষ (৩-১০%)—সোমাটোস্ট্যাটিন– অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকে কাজে বাধা দেয়
• পিপি কোষ (১%)– অগ্ন্যাশয়ের পলিপেপ্টাইড–বহিঃক্ষরা গ্রন্থিকে কাজে বাধা দেয়
সব কটি হরমোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে গুরুপাক করে লাভ নেই। আমরা শুধু ইনসুলিন সম্পর্কে একটু জেনে নেব।
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি ইনসুলিন তৈরি হয় অগ্নাশয়ের আইলেট অব ল্যাংগারহ্যান্সের বিটা কোষ থেকে। এটি একটি পলিপেপটাইড হরমোন। পলিপেপটাইড মানে বেশ কিছু অ্যামাইনো অ্যাসিড পরপর যুক্ত হয়ে এই হরমোন তৈরি করে।
ইনসুলিন বিটা কোষের মধ্যে প্রথমে তৈরি হয় প্রিপোইনসুলিন হিসাবে, যাতে ৮৬টি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। প্রিপোইনসুলিন থেকে কিছু অ্যামাইনো অ্যাসিড বাদ গিয়ে তৈরি হয় প্রোইনসুলিন। প্রোইনসুলিন ভেঙে হয় C-পেপটাইড(৩১ টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের চেন) এবং ইনসুলিন। ইনসুলিনে দুটি পেপটাইড চেন থাকে(A চেন= ২১ অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং B চেন= ৩০ অ্যামাইনো অ্যাসিড)।
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলেই সাথে সাথে বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন ও C পেপটাইড রক্তে মেশে। ইনসুলিন আমাদের যকৃতে ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে গ্লুকোজ তৈরিতে বাধা দেয় এবং মাংস পেশীতে গ্লুকোজের প্রবেশ ও ব্যবহারে সাহায্য করে। যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। তবে কিছু কোষের যেমন মস্তিষ্কের কোষের গ্লুকোজ ব্যবহারের জন্য ইনসুলিনের সাহায্যের দরকার হয়না।
আর রক্তে C- পেপটাইড মেপে টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মধ্যে পার্থক্য করা যায়। পরবর্তী কোনও পর্বে তাই নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
আগামীকাল শোনাবো ইনসুলিন আবিষ্কারের আশ্চর্য গল্প। আজ এটুকুই থাক। কারো কোনও প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় করতে পারেন।
খুব ভালো লাগছে। অনেক কিছু জানছি। ধন্যবাদ।