জম্বুর ফিল্ড এরিয়ার জীবন ও ভারত-চীন যুদ্ধ
১৯৬২ সাল
আমাদের Unit পাঠানকোট থেকে জম্মুর Satwari-তে চলে এল। সুন্দর পরিবেশ। Airport-এর পাশে। বেশকিছু গাছপালা, পাশে পাহাড়ী নদী, বেশী জল থাকত না বর্ষাকাল ছাড়া। বিশাল সাতওয়ারী হাউসে আমাদের মেস ও থাকার জায়গা।
আমার কাজ, কোন জওয়ান অসুস্থ বা আহত হলে Unit M I Room (Medical Inspection Room)-এ পরীক্ষা করে চিকিৎসা দেওয়া। প্রয়োজনে হাসপাতালে পাঠানো। হাসপাতাল Unit-এর খুব কাছে এবং airfield-এর পাশেই ছিল।
4 Sec 148 G-H HQ Udhampur-এ। Section হলেও বেশ বড়ো হাসপাতাল। Major Specialist-রা থাকত। অন্য Specialist-রা প্রয়োজনমত HQ থেকে আসত।
আমার M I Room-এ সাহায্যের জন্য একজন জওয়ান হাসপাতালে training নিয়ে First Aid, ওষুধ distribution ও injection দিত। Unit-এর পাশে একটা ছোট্ট Unit AT Coy (Animal Transport) থাকত। তাদেরও দেখাশুনা করতে হোত। আর বিশেষ কাজ ছিল মাঝে মাঝে Unit-এর hygiene inspection করা। প্রধানতঃ Area Cleanliness ও ৪ টা Cook House দেখা এবং CO (Commanding Officer)-এর কাছে লিখিত report দেওয়া। Unit-এর কাজ শেষ হলে হাসপাতালে যেতাম রুগী দেখতে আর ও সব ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সংযোগ রাখতে। প্রতিদিন Unit থেকে বিকালে Part I Order বেরোত, Unit-এ কি কি কাজ এবং কার কার কি কি duty তার নির্দেশ থাকত, সে সবের খবর নিতে হত।
ফিল্ড এরিয়ার অনেক বাধা নিষেধ আছে। তার মধ্যে বিশেষ হল, অনুমতি ছাড়া Unit-এর বাইরে যাওয়া যাবে না। সাতওয়ারী এসে দেখলাম অনেক Office ও জওয়ান family নিয়ে বাইরে আছে। এবং কিছু Govt. Quarters আছে যেখানে officers ও জওয়ান family নিয়ে থাকে। এছাড়া অনেকে civil-এ বাড়ী ভাড়া করে family নিয়ে থাকে। Station HQ থেকে permission নিতে হয়।
আমি একটা cycle জোগাড় করলাম। বিকালে বিশেষ কাজ থাকত না। বেরিয়ে যেতাম হাসপাতালে রুগী দেখতে বা কিছু বঙ্গ সন্তানদের বাড়ীতে আড্ডা মারতে।
বিশেষ করে দুজনের কথা খুব মনে পড়ে। হাসপাতালের ডাক্তার মনোজ ভট্টাচার্য আর Hygiene Unit এর OC ডাক্তার শ্রুতিপদ চ্যাটার্জী। ওরা family নিয়ে থাকত। এছাড়া Airforce Unit-এ ডাক্তার সহ অনেক এয়ারমেন বঙ্গ সন্তানদের সঙ্গে আলাপ ছিল।
দুর্গাপূজা এসে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে ঠিক হল, আমরা পুজো করব War Memorial Hall এ। সকলে আমাকে দায়িত্ব দিল ব্যবস্থাপনার। পূজো, ভোগ ও বিনোদন। Airforce-এর ছেলেদের বললাম পূজোর দায়িত্ব নিতে। ওরা উৎসাহ নিয়ে পাঠানকোট থেকে ঠাকুর নিয়ে আসার বন্দোবস্ত করল। ব্রাহ্মনও জোগাড় করল। আমাদের College-এর এক দাদা অমল শঙ্কর ভাদুড়ী ওখানে কোন Unit-এ posting ছিল। খুব ভাল গান করত। ওনাকে বিনোদনের ভার দিলাম। হাসপাতালের মনোজদার গান্ধীনগরের বাড়িতে রিহার্সালের আয়োজন হল। Medical HQ-এর পাশের মাঠে মন্ডপ সাজাতে। আমার দায়িত্ব ছিল, ভোগের ব্যবস্থা করা আর চাঁদা তোলা। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হল। মহিলারা আনন্দমেলায় খাবারের Stall খুলে নিজেদের খাবার বিক্রী করল। সকল Unit খুব সাহায্য করেছিল। আমার Unit-ও খুব সাহায্য করেছিল আমার কাজে। পূজো খুব ধূমধাম করে হল। পূজো, খাওয়া দাওয়া, বিনোদন খুবই successful হয়েছিল। অনেক দূরের Unit থেকে লোকজন এসে আনন্দ করেছিল। সকলেই প্রশংসা করেছিল জম্মুর মত জায়গায় এইরকম অনুষ্ঠান করা নিয়ে। Jammu-র দূর্গাপূজার ছবি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। একটা ছবি এখনও আমার ঘরে ঠাকুরের পাশে রাখা আছে। পূজোর পরেই মনোজদার বাড়িতে বিজয়ার চা চক্র । বেশ কিছু অফিসার ও family মিলিত হতাম। জমিয়ে গান ও আড্ডা। Army life-এর জীবনে এই আনন্দ বিশেষ পাওনা।
১৯৬২ সাল এমনই uniform জীবনে ভালমন্দেই কাটছিল। হঠাৎ খবর এল সব Unit-কে STAND TO. যুদ্ধের জন্য তৈরী হওয়ার জন্য নির্দেশ। ছুটি নেওয়া বন্ধ হল। ছুটিতে যারা ছিল তাদের recall করা হল, তাড়াতাড়ি Unit Join করার জন্য। লাডাকে ভারত-চীন সীমান্তে চাইনীজরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। Eastern Sector-এ NEFA (এখন অরুণাচল)-এর সীমান্তেও চীন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সকল Unit-কে তৈরী থাকতে বলা হল। Security-র জন্য অবাধ-বিচরN বন্ধ হল।
আমরা চাইনীজ সীমান্ত থেকে অনেক দূরে ছিলাম পাকিস্থান এই সুযোগ নিতে পারে, সেই জন্য আমাদেরও বর্ডার এরিয়াতে তটস্থ থাকতে বলা হল।
লাডাকে অনেক high altitude-এ টুকরো টুকরো জায়গা ছিল যেখানে অল্প কিছু সেনা থাকত (picket), তার তত্ত্বাবধানে কোন অফিসার থাকত না, কাজ security এবং শত্রুর খবরাখবর দেওয়া। এখানে বিশেষ করে মেডিকাল problem হল High Altitude Pulmonary Oedema (HAPO)। এটা শ্বাস প্রশ্বাসের emergency এবং সময়মত চিকিৎসা না করলে মৃত্যু অবধারিত। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে Helicopter Evacuation করতে হয়। সময়মত সেই সুযোগ পেতে দেরী হয়। এরকম প্রায় ৪০ টি picket ছিল।
আমাদের মেডিক্যাল ডাইরেক্টর সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিটি picket এ ডাক্তার পাঠানো এবং তাদের acclamatisation করে তৈরী থাকা। এর জন্য লাডাক এরিয়ায় অনেক ডাক্তার প্রয়োজন। Relatively peaceful এরিয়া থেকে RMO-দের temp duty-তে পাঠাতে আরম্ভ করল। শঙ্কায় ছিলাম আমাকে আবার temp duty-তে না যেতে হয়। যাই হোক আমাকে target করেনি। তবে হাসপাতালে duty করতে হোত, আমাদের Unit-এর কিছু অংশ (Battery) কয়েকটা Unit-এর সঙ্গে যুক্ত হল। তাদের Medical Cover ছিল।
একদিন হাসপাতালে duty তে গেছি। দেখি ward-এর সামনের জায়গায় অনেক লোকের ভীড়। খোঁজ নিয়ে দেখি হাসপাতালের এক মানসিক রোগী ওখানের পরিত্যক্ত কুয়োর জলে প্রায় ৩০ ফুট নীচে নেমে গেছে। কুয়োতে একটা বড় গুণ দড়ি নামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ও দড়ি ধরে উঠছে না। উপায়, ওকে ঐ দড়ির সঙ্গে বেঁধে তোলা। জওয়ানদের মধ্যে ভয়ে কেউ এগোচ্ছে না। পাছে তাকেই না জলে ডুবিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর Major Sitaraman আর আমি জামা-প্যান্ট ছেড়ে নেমে গেলাম। দুজনে রুগীকে জলের মধ্যে দড়ির শেষ প্রান্তে বেঁধে ফেলি। তারপর ওপরের লোকেদের ধীরে টেনে নিতে বলি। এইভাবে রুগী উদ্ধার হল। আমরা পরে দড়ি ধরে উঠে আসি। এই ব্যতিক্রমী সমস্যা সমাধানে আমাদের senior কর্তারা খুব প্রশংসা করেছিল।
ভারত-চীন যুদ্ধে চীন অনেক জায়গার আমাদের এরিয়া দখল করে নিয়েছিল এবং আমাদের পিছতে হয়েছিল, বিশেষ করে NEFA এরিয়ায়। বেশ কিছু হত, আহত এবং prisoners of war (POW) হয়েছিল। POW-দের মধ্যে বেশ কিছু ডাক্তারও ছিল। আমাদের হাসপাতালে খুব বেশী casualty আসেনি। HQ থেকে কিছু transfer এসেছিল।
কিছুদিনের মধ্যে ভারত ও চীনের মধ্যে মিটমাট হল। চীন আমাদের এরিয়া ছেড়ে নিজের এরিয়ায় চলে গেল।
(ক্রমশ…)