ফিল্ড এরিয়ায় নতুন সংসার জীবন
১৯৬৩ সাল। যুদ্ধ শেষ হলেও restriction শেষ হল না। সকল unit-কে প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির পরিস্থিতি বজায় রাখতে নির্দেশ দিল। যুদ্ধে আমাদের ফলাফল ভালো ছিল না। তাই প্রশিক্ষণে সকলকে জোর দিতে বলল। সমস্ত ছুটিও বন্ধ।
এমন সময় বছরের মাঝে আমার দিদি এক ভদ্র মহিলার ছবি পাঠিয়ে আমার সঙ্গে সম্বন্ধ করার প্রস্তাব পাঠালো। ছবিটা দেখে আমার পছন্দ হল। কয়েকদিন দেখার পর ভাবলাম, আমাদের unit-এর পাশে এক ‘পীরবাবার মাজার’ ছিল, যেখানে প্রতি শুক্রবার অনেক লোকের সমাগম হয়, সেখানে গিয়ে মানত করি। গেলাম এবং শান্তি পেলাম। তবে একটা চিন্তা ছিল। আর্থিক অস্বচ্ছলতা। মাইনে মাত্র ৫০০ টাকা মাসে অর্ধেক পাঠাতে হত দাদার কাছে, বাবা নেই, ২ ভায়ের পড়াশুনা, তার মধ্যে বিবাহিত জীবন চালনা কি সহজ হবে! অনেক চিন্তার পর বাড়িতে জানালাম আমার মত আছে। বেশ কিছুদিন পরে খবর এল অপর পক্ষও রাজি।
কিন্তু ছুটি পাই কি করে। Medical HQ-এ যতীনদাকে বললাম Special ছুটির ব্যবস্থা করতে। কিন্তু ও কোন ভরসা দিল না। বলল সামনের বছর ছুটি খুলে যাবে, তখন বিয়ে করো।
আমার ফিল্ড এম্বুলেন্সে দিলীপদাকে ধরলাম। সেও কোন সাহস দিতে পারল না। এদিকে আমার বাড়ী থেকে খবর এল, মেয়েকে দেখাশুনার পর বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে গেছে, Dec. 1963।
ভাবনা চিন্তা করে আমি আমার unit-এর Commanding Officer (CO) কর্নেল প্রভুকে সমস্ত জানালাম। উনি ওখানে Govt. Quarter-এ family নিয়ে ছিলেন। উনি সমস্ত শুনে ভেবে বললেন, যে তুমি এক মাসের ছুটির জন্য আবেদন কর। আমি চেষ্টা করবো। আমি suggestionও দিলাম যে আমাদের পাশের Armoured Car Unit-এর ডাক্তার আছে, যে ছুটির সময় cover দিতে পারবে।
এর মধ্যে আবার দিদির চিঠি। সমস্ত ব্যবস্থা করতে হবে। কবে আসছিস, তাড়াতাড়ি আয়।
November-এর মাঝামাঝি খবর এল, ২১ দিনের বিশেষ ছুটি মঞ্জুর হয়েছে। বাড়িতে জানালাম December-এর প্রথমেই যাচ্ছি। Unit থেকে রেলের পাশ নিয়ে reservation করে ২রা ডিসেম্বর বাড়ি পৌছালাম।
পাত্রীর ছোট বোন ও বড় দাদা আমাকে দেখতে এল আমাদের বাড়িতে। ওর দাদা হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে আমার সঙ্গে ২ বছর পড়েছে। পরিচিত। অনেক গল্পগুজব করে প্রস্থান করল। আমাকে ওদের বাড়ীতে পাত্রী দেখার প্রস্তাবে জানালাম, কোন প্রয়োজন নেই, একেবারে বিয়ের পিঁড়িতে দেখা হবে। ওরা খুশী হয়ে ফিরে গেল বিয়ের ব্যবস্থা করতে।
আমি আমার CO-জানালাম, পাত্রী কুন্তলা সিনহা এম এ (ফিলোজফি), বিবাহ 11 Dec 1963. প্রথাগত ভাবে ওনার অনুমতি চাইলাম। আর আবেদন করলাম, ওখানে family নিয়ে থাকার অনুমতি চাইলাম। আর অনুরোধ করলাম একটা family accomodation-এর জন্য। উনি সম্মতি জানালেন।
সানাই বাজিয়ে ধূমধাম করে বিয়ে করলাম। অনেক পরিচিত বন্ধুবান্ধব এবং আমার অতি পরিচিত মাস্টার-মশাই ও আত্মীয়স্বজন এসে আমাদের আশীর্বাদ করল।
Unit-এ সময়মত ফেরার জন্য রেলের reservation করলাম। কুন্তলা বলল আমরা জম্মুতে হানিমুনে যাচ্ছি। বিয়ের অল্প কয়েক দিন পরে ফিরে এলাম জম্মুতে। Satwari-তে পৌছে আমার বন্ধু শ্রুতিদার বাড়ীতে উঠলাম। সেখানে দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে unit-এ গেলাম।
Unit-এর মধ্যেই পুরোনো JCO-র Quarter, ২ খানা ছোট ঘর ও খাটা পায়খানা আর রান্নাঘর ও স্নানঘর। সেখানেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। আমার সেবাদার ছিল পালোয়ান হরপাল সিং। সেই সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছিল আমার নেওয়ার খাটের পাশে বাক্স জুড়ে বড় বিছানা করেছিল। আর unit থেকে sofa set দিয়েছিল। এই রকম আরও দুটো quarter-এ আমাদের অফিসার family নিয়েছিল। যাই হোক মাথা গোঁজার জায়গা পেয়ে নিশ্চিন্ত হলাম। Mess থেকে কিছু দিন খাবার আসার পর কুন্তলা নিজেই রান্নাবান্না শুরু করল।
Unit থেকে আমাদের silver salvo দিয়ে সম্বর্ধনা দিল। আমরাও কিছু দিন পর সকল অফিসার ও family-দের খাওয়ালাম ঐ কোয়ার্টারেই। Officers Mess Staff আমাদের সাহায্য করেছিল।
মাঝে মাঝে mess-এ পার্টি হোত। সেখানে প্রথমে drinks চলত। প্রথমে ladies-রা পেত। সকলেই প্রায় soft drinks নিত। অফিসাররা বেশীর ভাগ hard drinks-এর প্রেমী। আমি soft drinks-এর দলে, কারণ সর্বদাই মনে পড়ত মিসেসের ফতোয়া wine বা wife. পার্টিতে কুন্তলা গান গেয়ে সকলকে মাতাল।
আমরা জম্মু শহরে রঘুনাথ মন্দিরে যেতাম। আর পাশের বাজারে কুন্তলা নতুন সংসারের জন্য বেশকিছু আসবাবপত্র কিনল।
মাঝে মধ্যে যে বন্ধুরা family নিয়ে থাকত, তাদের বাড়ি যেতাম। ওরাও আসত আমাদের quarter-এ। ওদের সকলকে সস্ত্রীক নিমন্ত্রণ করলাম আমাদের quarter-এ লাঞ্চে। খুব হৈ-চৈ ও আনন্দ হল। শেষ হল চায়ের আসরের পর।
Problem ছিল যাতায়াত ও কথাবার্তা বলা। বেশিরভাগ পায়ে হেঁটে সাতওয়ারী, সেখান থেকে বাসে বা প্রাইভেট ট্যাক্সিতে। বাড়িতে খবরাখবর চিঠির মাধ্যমে। ফিল্ড এরিয়ায় free inland letter পাওয়া যেত। তারই মাধ্যমে খবাখবর। যদিও সেগুলো censor হত। কোন গোপন খবর যাচ্ছে কিনা তারই checking.
1964 সাল । ছুটি খুলে গেল। যতীনদা যে আমার ছুটির জন্য বাধা দিয়েছিল, সে গেলো ছুটিতে বিয়ের জন্য। সেখানে মেয়েকে দেখতে গিয়ে শোনে, যার সঙ্গে বিয়ের কথা হয়েছে সে পালিয়েছে এক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে। পরে তার ছোট বোনের সঙ্গে বিয়ে হয়। যাইহোক family নিয়ে এসেছিল। থাকতো GOC-র বাংলোয় Staff Medical Officer-এর quarter-এ। আমরা যেতাম এবং কুন্তলার সঙ্গে ওর স্ত্রীর খুব বন্ধুত্ব হয়।
জম্মুতে family নিয়ে থাকার অল্প কিছু দিন পরে unit-এর annual camp প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে হয়। সকল officer-দের ওখানে গিয়ে থাকতে হবে। কুন্তলাকে ছেড়ে আমাকেও যেতে হল। কেবল কোয়ার্টার মাস্টার পিছনে রইল security-র জন্য এবং ration supply এর জন্য। আমার সেবাদারকে ছাড়পত্র দেওয়া হল, ও আমার কোয়ার্টারে এবং আমার স্ত্রীর দেখাশুনার জন্য। Telephone-এ কথাবার্তা বলা যেতো না। দিন দশেক পর খবর এল কুন্তলা জ্বরে ভুগছে। CO সাহেব নিজেই সিদ্ধান্ত নিল আমাকে unit-এ ফিরে যেতে। আর কোনও অসুস্থ জওয়ান ও family-দের দেখতে। সেনা জীবনে family ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা অনেক হয়েছে। কুন্তলা সামলে নিয়েছে সেই অনুপস্থিতি।
বছরের শেষে আমার Medicine-এ Specialist Course এসে গেল AFMC পুনেতে। আমাদের জম্মুর জীবনে ইতি টানতে হল। কুন্তলাকে বাড়ী পাঠিয়ে দিলাম সেবাদার হরপালের সঙ্গে। আমি সময়মত চললাম পুনা।
ক্রমশ…