পার্ক হোটেলের গ্যালাক্সি। আজ সন্ধ্যায় তারায় তারায় খচিত।এA0কটু আগেই আমাদের সামনে দিয়েই ঢুকলেন টিচার অফ দি টিচার্স ডা বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী,স্যরি বি এন সি।
ISAR Bengal এর Inauguration অনুষ্ঠানে ডা সুভাষ মুখার্জীর স্মরণ।
আমি সুভাষ বলছি
ছোট খাটো মানুষটা হেঁটে আসছেন। হাতে পেটমোটা একটা ব্যাগ।আর জি করে তৎকালীন অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং এর বারান্দায় আমরা যথারীতি গজল্লায় ব্যাস্ত। কে যেন বলে উঠল উনি ডা সুভাষ মুখার্জী। উনি নাকি টেস্ট টিউব বেবি করছেন। আমাদের ডাক্তার রাহার কাছে প্রায়ই আসেন।
এর পর মাঝে মাঝেই দেখা হতো, সেই যুগের এক নন-গ্ল্যামারাস স্যার হিসেবে। একদিন চমকে উঠেছিলাম ওঁর চোখের দিকে তাকিয়ে। এক উজ্জ্বল চোখের মধ্যে স্বপ্ন দেখার আশ্বাস।
এরপর নানা গুজগুজ ফুসফুস।
তৎকালীন তাবড় তাবড় গাইনোকোলজিস্টরা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন, ধ্যুস, এভাবে হয় নাকি, এতোই সোজা?
আমি সুভাষ বলছি, বিশ্বাস করুন আমি পেরেছি।
কিন্তু যুগ যুগ ধরে সুভাষকে কে কবে বিশ্বাস করেছে বা আস্থা রেখেছে!?
সকলের মুখে মুচকি হাসি। আমেরিকার স্টেপটো যা করেছেন কয়েক দিন আগে, তা নাকি কলকাতার ল্যাবরেটরির অন্ধকারে সুভাষিত। এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হয় না। অতএব চলল সুভাষকে হাস্যাস্পদ করে তোলার প্রচেষ্টা।
তখনও দেখেছি পেটমোটা ব্যাগটা নিয়ে ক্লান্ত অবসন্ন দেহটাকে টেনে নিয়ে চলতে।
তখন তো আমরা ইন্টার্ন, জুনিয়র ডাক্তার। হঠাৎই শুনলাম সুভাষ অস্তমিত। তখনও জানি না সেই স্যুইসাইড নোটের খবর!–
—“প্রতিদিন কবে হার্টে-অ্যাটাক হবে এ অপেক্ষায় আর বসে থাকতে পারছি না।”
আলোকিত মঞ্চে উজ্জ্বল স্বপ্নিল সুভাষ মখার্জীর চোখের সামনে গৌতম খাস্তগীর যখন বলছেন, আজ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে আমাদের ডাক্তার সুভাষ মুখার্জীর পদ্ধতির অনুসরণ করা হয়, তখন কি চোখটা একটু চিকচিক করে উঠল!
আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে
ষোলোই আগস্ট উনিশ শো ছিয়াশি। হর্ষবর্ধন রেড্ডি, বুরি– ভারতের প্রথম টেস্ট টিউব বেবির জন্ম হলো ডা টি সি আনন্দের হাত ধরে। ভারতে প্রথম টেস্ট টিউব বেবির স্বীকৃতি ।
সাল 1997। ডা টি সি আনন্দ কলকাতার এক অনুষ্ঠানে এসে আমাদের সুভাষের কথা শুনলেন। তারপর খুঁটিয়ে দেখলেন তাঁর সমস্ত কাগজপত্র। গোটা বিশ্বকে জানালেন, না আমি নই, ভারতের প্রথম টেস্ট টিউব বেবির জনক ডা সুভাষ মুখার্জী, আমাদের সুভাষ।
আহা কী আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে।
মঞ্চে তখন উপস্থিত টি সি আনন্দের গর্বিত পুত্র ডা আনন্দ। পিতার নামাঙ্কিত স্মারক গ্রহণের মুহূর্তে গোটা কোলকাতা অশ্রুসজল নেত্রে অবনত হলো সেই মহান চিকিৎসকের উদ্দেশ্যে, যিনি বিস্মরণের অতলে তলিয়ে যাওয়া এক অগ্রজকে তুলে ধরার জন্য নিজের খ্যাতি, অনেক কিছু প্রাপ্তিকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করেন না।
আমাদের দুর্গা
অনুষ্ঠানের বেশ কিছুটা আগেই পৌঁছে গেছি। একই সোফায় আমি, আমার আর জি করের সহপাঠিনী, এক উচ্ছল সদা হাস্যময়ী অথচ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মহিলা ও সৌম্যদর্শন পক্ককেশ প্রবীণ।
হঠাৎই খুব চেনা চেনা লাগল ঐ মহিলাকে।
মঞ্চে তখন ঘোষণা হচ্ছে ডা সুভাষ মখার্জীর জীবনকৃতি “সুপ্রজনন রত্ন” পুরস্কার তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁরই সৃষ্টি কানুপ্রিয়া আগরওয়ালের হাতে।
ঐ তো ঐ সেই মেয়ে,একটু আগেই আমাদের পার্শ্ববর্তিনী।
এক অপূর্ব মুহূর্তের সাক্ষী হলাম। সারা শরীর রোমাঞ্চিত।
‘মিট মাই ফাদার ‘ —কানুপ্রিয়ার কাছাকাছি আমি। থিঙ্ক হাউ প্রোগ্রেসিভ হি ওয়াজ!
–আপনার বাড়ি কোথায়? আমি লর্ড সিনহা রোডে থাকি।— পরিষ্কার বাংলায় বললেন পক্ককেশ প্রবীণ।
আপনি বাংলা জানেন?
আরে আমি তো বহুদিন কোলকাতায় আছি। কানুপ্রিয়ার পড়াশোনা কোলকাতায় ।
—আমিও কিন্তু বাংলা জানি। হাসছে আমাদের দুর্গা, বাংলার দুর্গা।