Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

নিরীহাসুরের আরেকটা সপ্তমী

IMG-20211020-WA0000
Dr. Sabyasachi Sengupta

Dr. Sabyasachi Sengupta

General physician
My Other Posts
  • October 20, 2021
  • 8:13 am
  • No Comments
নাঃ, এ কাহিনীর সাথে সপ্তমীর যোগাযোগ নেই এতটুকুও। এবং তবুও সপ্তমীর রাতেই এ কাহিনী আমি লিখছি। কেন লিখছি? কারণ, লেখালিখি যতই ছেড়ে দিই না কেন, কিছু কিছু ঘটনা আমার জীবনে ফিরে ফিরে আসে বারেবার।
যেমন, নিয়ম মাফিক হরেক সপ্তমীতে আমার নাইট ইমারজেন্সি ডিউটির আগমন। আর একগুচ্ছ মাতাল আর মারামারি আর মাকড়া রোগীকে সামলে, ভোরের দিকটায় শিরশিরে হাওয়া দেয় যখন, আর ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে…ঝিমিয়ে ক্রমে থম মেরে আসে উৎসবের শব্দ আর কানে এসে ধরা দেয় পাখার আওয়াজে কাগজ ওড়ার ফড়ফড়, তখন হঠাৎ হঠাৎ মাথার মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারে কিছু মুখ, কিছু ছবি, কিছু মুহূর্ত। এ লেখা, তাদের নিয়েই লেখা।
এ ঘটনার শুরুয়াৎ ‘করোনা কাল’-এর বেশ কিছু আগে। ভারত বিখ্যাত ‘লকডাউন’ জাঁকিয়ে বসেনি তখনো। লোকজন দিব্যি হাসছে, গাইছে, আড্ডা মারছে, কলকলাচ্ছে দঙ্গলে দঙ্গলে। স্বাস্থ্য হোক অথবা অন্ন কোন বিষয়েই তেমন কোনো ভ্রূকুঞ্চন নেই মানুষের আপাত। ‘আপাত’ , কারণ এ লেখা যাঁরা পড়ছেন এবং এ লেখাটি যে মানুষটি লিখছেন তাঁরা সকলেই ছদ্মনিরাপত্তায় বসবাস করতেই শিখে গেছে একরকম। ভুলে গেছেন নয়ন মেলে দেখিতে।
সে কথা যাক। মোটের ওপর এইরকম এক সুখী সুখী পৃথিবীতেই এ গল্পের সূচনা। আর সেইটে লিখব বলেই কলম বাগিয়ে বসেছি।
এ গল্পের নায়ক হল এক জোড়া বুটজুতো। জুতো দুটোর তেমন কোনো ভূমিকা নেই যদিও কাহিনীতে। তবুও… ঘটনাটার কথা ভাবতে বা লিখতে বসলেই আমার সব্বার আগে ওই জুতো দুটোই চোখে ভাসে।
বড়ই আশ্চর্য ছিল লোকটার জুতো জোড়া। বেখাপ্পা, বেঢপ, বিদঘুটে। সম্ভবত লেদারের। ভাঁজে ভাঁজে এখানে ওখানে ফুটিফাটার দাগ দ্যাখা যাচ্ছে যদিও। তবুও যত্ন করে পালিশ করা আছে কালোরঙের। গ্লেজ নেই একটুও। বরং বড্ডো বেশী কালো। কুচকুচে একেবারে। এ জুতো আর যাই হোক, এই লোকটার পায়ে একেবারেই মানায় না। রোগা সিড়িঙ্গে দুঃখী গাল তোবড়া। নিম্নাঙ্গে একটা ধূলিধূসরিত সাদাটে ঢোলা কটন প্যান্ট।আর উর্দ্ধাঙ্গে, সস্তার কালো রঙের ঝোল্লা জ্যাকেট।
তবে এইগুলো কিন্তু বেশ মানানসই। এরকমই দেখে আমি অভ্যস্ত। চা বাগানের এই এক্কেবারে ‘ধুর’ টাইপের কুলি-মজুরগুলো এরকমটাই পরে থাকে সারাটা বছর ধরে। অন্তত … বাইরে কোথাও গেলে টেলে। ঘরে হয়ত অন্য কিছু পরে টরে। গেরুয়া রঙের শিবের মুখ আঁকা ‘বোলেবোম’ গেঞ্জী, কিম্বা ‘লাফার্জ সিমেন্ট’ লেখা ময়লা মলিন টি শার্ট। কোমরে দড়ি খিঁচে বেঁধে রাখে তেলচিটে ঢিলঢিলা বারমুডা।
এসব আমি জানি। এসব দেখেছি চা বাগান ভিজিট করতে গিয়ে। ‘বাগান-ওয়ার্কার’ -দের কোয়ার্টারে। বা বলা ভালো কলোনি। কিম্বা খুপরি। ছাগল কুকুর শুয়োর মাছি মশা আর মানুষের কারবার। মামড়ি ওঠা খোকা। গাঢ় লিপস্টিক লাগানো তরুণী। লম্বা পুঁতির মালা পরা বউ-ঝি। আর ওই বোলে বোম বা লাফার্জ সিমেন্ট পুরুষ। দিন কাটাচ্ছে স্রেফ ভাত জোটাতে। এর বাইরে, কিছুই জানেও না। জানার সময়ও নেই। দরকারও নেই। তবে হ্যাঁ মদ খায় এরা। চুটিয়ে । ফাটিয়ে। হাঁড়িয়া। বা বাংলা। দোকানও তো আছে সবক’টা চা বাগান কলোনীর আসপাশে গাদাগুচ্ছের। এসব না থাকলে চলে? এতদিনে তাহলে বিদ্রোহ জন্ম নিতো না?
সে যাক। তবে এই লোকগুলোই, মানে যাদের বয়স উর্দ্ধ চল্লিশ, তারা যখন বাইরে কোথাও যায় টায়, মানে…ধরা যাক হাসপাতাল কিম্বা পুলিশ স্টেশন বা ভোটের বুথ…এর বাইরে আর কোথায়ই বা যাওয়ার আছে …তখন এই জ্যাকেটগুলোকেই চাপায় গায়ে। হ্যাঁ। গ্রীষ্ম কালেও। ওই একটাই সম্ভবত বাইরে পরার ভদ্রস্থ। ঢেকেঢুকে রাখে গেঞ্জির ফুটিফাটা। ‘ শালা ম্যায় তো সাব বন গ্যায়া’ আমেজও আসে মনে মনে। কিন্তু পায়ে তো এর আগে এরকমটা দেখি নি কখনো। এই যে এই লোকটার জুতোজোড়ার মতো। এরা তো সাধারণত চপ্পলই পরে। বা খুব জোর হলে, দড়ি বাঁধা শস্তার ‘পাওয়ার’ শ্যু। লেদার বুট-টা সেখানে এক্কেবারে নতুন রকমের চমক। তাও আবার এরকম মোটা সোলের।
ওই দিকেই তাকিয়ে ছিলাম আমি ভুরু কুঁচকে। দাঁতে দাঁত পিষছিলাম কিড়মিড়। তাকাবো না…তাকাবো না কিছুতেই। ওই হেঁ হেঁ মুখটার দিকে তাকালেই কন্ট্রোল ল্যুজ করে ফেলবো। গলা টিপে খুন করে দিতে পারি একে আমি যেকোনো মুহূর্তে। বা ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে পারি দোতলার সিঁড়ি দিয়ে। শাল্লা! জানোয়ার! আবার হাসছে দ্যাখো শুয়োরের বাচ্চার মতো হেঁ হেঁ করে। শয়তানের বাচ্চা!
দাঁতে দাঁত চিপে আরেকবার জিজ্ঞেস করলাম মাথা নীচু করেই। প্রশ্নটা, কাটা কাটা, স্পষ্ট উচ্চারণে। যে কেউ দেখলেই বুঝবে যে ডঃ সব্যসাচী সেনগুপ্ত একটা ফেটে পড়া বোমাকে কৌটো চাপা দিতে চেষ্টা করছে প্রাণপণ। –” তুমহারা চার বেটি হ্যায়? ইয়া পাঁচ? এক বেটি মর্ গ্যায়ি হ্যায় না? ক্যায়সে? বোলো। বোলোহঃ! আখরি বার পুছ রাহা হু..। চার? ইয়া পাঁচ?”
লোকটা হাসলো। শব্দ করে হাসি না। এম্নি হাসি। হাসি হাসি গলায় কথা বলার হাসি। –” চার.. মেরা চারঠো বেটি। চারঠো-হি জিন্দা হ্যায় ডাগদর বাবু..।”
কৌটোটা চাপা রাখতে পারলাম না আর। সম্ভবই নয়। এ লোকটা, এই যে এই বুটজুতোওয়ালা লোকটা, একটা কুত্তা। এ হলো সেমিনা কুজুরের পেশেন্ট পার্টি। সম্পর্কে সেমিনার বাবাও বটে। আস্ত একটা শয়তান। গিরগিটি। নপুংসক। ওর হাসিতে হাসিতে বিষ ভরা আছে দগদগে।
কৌশিকদা খবর দিয়ে রেখেছিল এসবের আগেভাগেই। —” স্যার, পেশেন্ট পাঠাচ্ছি একটা। সেমিনা কুজুর। এগারো বছর। মেয়ে। বাপটা হারামি। পাঁচ মেয়ে এক ছেলে।বড় মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছিল সিকিমের এক পার্টির কাছে। মেয়েটা মরে যায়। এটা ছোট। এটাকেও বেচে দিয়েছিল। পালিয়ে এসেছে টিবি নিয়ে। একটু চোখে চোখে রাখবেন।”
কৌশিকদা ওখানকার এস টি এল এস। সিনিয়ার টিবি ল্যাবরেটরি স্যুপারভাইজার। এসব জানার ওঁর কথা নয়। ভদ্রলোকের কাজ, ল্যাবরেটারির চার দেওয়ালেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু গত কয়েকমাস হলো বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে ফিল্ড লেভেল ওয়ার্কেরও। একজন কর্মী ছুটিতে। অসুস্থ। কৌশিকদা করিতকর্মা লোক। বাজে কথা বলে না খুব একটা। এ আমি খুব ভালো মত জানি। আর তাই লোকটাকে ধরে কড়কাচ্ছিলাম বেশটি করে!
এসব আমার করার কথা নয় যদিও। পেশায় আমি ডাক্তার। পুলিশ বা আইনরক্ষক নই। লাথ মেরে সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দেওয়া তো তো দূরের কথা, চিকিৎসা ব্যতীত একটি কথাও বলার অধিকার নেই আমার।
কিন্তু সেসব আমি মানি না। মানি না কোনোকালেই। হাসপাতালটা আমার ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি পেশেন্টদের জন্য। এমন পেশেন্ট, যাদের পাড়া পড়শি তো দূরস্থান, অন্যান্য সাধারণ হাসপাতলের স্বাস্থ্যকর্মীরাও খুব একটা সুবিধার নজরে দেখেন না। এটা, এই হাসপাতালটা, এদের একমাত্র ভরসার স্থল। শেষমাত্র আশা।
চিকিৎসা চলে প্রায় সক্কলেরই নয় থেকে ছত্তিরিশ মাস। ছুটি হয়ে গেলেও নজরদারিতে রাখতে হয় হরবখত। অন্তত ওই ছত্তিরিশ মাস তক্। এদের একরকম বাপ কিংবা ভাই অথবা দাদা-ই হয়ে গেছি আমি তাই। বাড়িতে ঝামেলা হলেও এরা আমায় ফোন করে জ্বালাতন করে। এবং সেটা আমি সামলাই-ও। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী, আমাকে সেরকমটাই শিখিয়েছে। To provide every possible support to a TB patient। টিবি রোগীদের পাশে, সর্বত ভাবে থাকা।
যাক গে যাক! এসফ জ্ঞানের কথা যাক গিয়ে চুলোয় এবারে! বাস্তবে বরং এইবেলা ফেরত আসি আমি গুটিগুটি। জঘন্য, জ্বালাময়, যন্ত্রণাদায়ক একটা বাস্তব। যে বাস্তবের বোঝা ওঠাতে ওঠাতে আমি দিন কে দিন বোবা হয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত। ক্ষয়ে যাচ্ছি আর মরে যাচ্ছি বড় দ্রুত। সেসব ‘লিখিত রক্ত খরচ’-এরও কথা বরং থাক। থাক বরং ‘ প্রত্যহ যারা ঘৃণিত আর পদানত’-দের কথা।
মোটমাট কথা এই যে, লোকটাকে আমি খিস্তাচ্ছিলাম গুছিয়ে। চিৎকার করে বলছিলাম–” এক লাথ্ মার কে না..তুমকো শালা সিঁড়ি সে ফেক দেঙ্গে! ইউ স্কাউন্ড্রেল..”
উত্তরে লোকটা হাসলো। হাত কচলালো সরীসৃপের মতো–” হেঁ হেঁ..ডাগতর বাবু গুসসা করতা! “
মেরেই দিতাম। মাক্কালি! সত্যি সত্যিই মেরে দিতাম দু চার থাপ্পড়, যদি না ঠিক সেই মুহূর্তেই আরেকজন পেশেন্টের বাড়ির লোক… ইয়াসমিনের মা…. ছুটতে ছুটতে এসে বলতো–” বচ্চি বোল রহি হ্যায়..উসকা এক সিস্টার থি। মর গ্যায়ি ..আপ জল্দি সে আইয়ে।”
এর পরের ঘটনাটা মারাত্মক। সেমিনা, এগারো বছরের ওই বাচ্চাটা, নিরাসক্ত মুখে বলে গেল আশ্চর্য একটা আখ্যান।
ওরা সত্যি সত্যিই পাঁচ বোন। এক ভাই। বড় বোনকে ওর বাবা শিলিগুড়ির কোনো এক ‘পার্টি’র কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। তারপর মেয়েটা ফেরত চলে আসে পালিয়ে। পালিয়ে আসে বছর তিনেক পর।
–” এড্ছ হুয়া থা। টিবি ভি। মর গ্যায়ি দিদি।”
সেমিনাকেও ওই একইরকম ভাবে বিক্রি করে দিয়েছিল ওর বাবা। ওই শিলিগুড়িতেই। ‘বাচ্চা সাম্ভালনা আর খানা বানানা’ র কাজ করতো নাকি। ওকে নিয়ে তারপর ‘পার্টি’ চলে যায় সিকিম। কেন যায়, কিজন্য যায়, গিয়ে তারপর কী করে..জানার সাহস হয় নি আর আমার। এগারো বছরের মেয়ে বাচ্চা সামলায় আর রান্না করে…এ দুটো তথ্যই যথেষ্ট ছিল আমার জন্য। শুধু জেনেছিলাম, সেমিনাও ওর দিদির মতোই একদিন পালিয়ে আসে। ওর অবশ্য এইডস হয় নি। যক্ষ্মা বা টিবি হয়েছে শুধু। এক্সটেনসিভলি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকিউলোসিস। মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির ঠাকুর্দা।
রাগে ঘেন্নায় কাঁপতে কাঁপতে নীচে চলে এসেছিলাম আমি। ফাইলে অ্যাডভাইস লিখেছিলাম আউটডোরে বসে বসে। তারপর গুম মেরে বসেছিলাম চুপচাপ। সেমিনার, ওই দিন থেকেই অ্যাডভাইস মাফিক চিকিৎসা শুরু হয়ে গিছলো। এবং দিন সাতেক বাদে…ছুটিও। বুটজুতো হারামি বাপটাই নিতে এসেছিল ছুটির সময়। সেমিনা চলে গিছলো ওই লোকটারই হাত ধরে বোঁচকা বগলে। এরপর বাদবাকি ওষুধ, সেমিনা সাবসেন্টার থেকেই খাবে।
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো। এবং তাহলে আমাদের সব্বার ‘মার শালা বাঞ্চোৎকে’ বলে খিস্তি মেরে গায়ের ঝাল মেটানোরও সুযোগ মিলতো।
হয় নি। মেলে নি। জীবনের গল্প এরকম হয় না। সেখানের রূপ রস গন্ধ সমেত কদর্য্যতা বা পঙ্কিলতাকে ডুব মেরে নেড়ে ঘেঁটে দেখতে হয় সবটা। তবেই সাত রাজার ধন এক মানিকের সুলুক মেলে। যেমন, আমার মিলেছিল। সেইবার। সেমিনা আর বুটজুতোর গপ্পোতে।
ততদিনে লকডাউন শুরু হয়ে গেছে ঢাকঢোল পিটিয়ে। খবরে,বার্তায় আর সংবাদের শিরোনামে শিরোনামে ছয়লাপ শুধু করোনা। বাস ট্রেন তো বটেই মায় রিক্সা টোটোও বন্ধ। বন্ধ হয়ে গেছে অফিস কাছারি, কলকারখানা, দোকানপত্তর। মুচি, ছুতোর, ফেরিওয়ালা সব্বাই অন্তর্হিত। অন্তর্হিত হতে শুরু করেছে আমার আউটডোরের রোগীরাও। একটা বুড়ি, লাঠি ঠুকঠুকিয়ে, কোমর ঝুঁকিয়ে হাঁটতো আর বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতো গাইগরুর দুধ। আসে না। আসছে না অনেকদিন। আসছে না তেগবাহাদুর রিক্সাওয়ালা, বিশ্বজিৎ বাদামওয়ালা আর ছোটন মিস্তিরিও। কেমন আছে, কোথায় আছে মালুম করার উপায় নেই। মাঝে একদিন খালি তেগবাহাদুরের সাথে দেখা হয়েছিল। খালি রিক্সা নিয়ে ঘুরছে। সামনের হ্যান্ডেলে তিনটে অস্বাভাবিক রকমের বড় মুলো ঝোলানো প্লাস্টিক ক্যারিবেগে।
স্কুটি থামিয়েছিলাম। — কোথায় চললে তেগ বাহাদুর?
— বাড়ি। এক কথার জবাব। তেগবাহাদুর এরকমই। গম্ভীর। কথা বলে না খুব একটা। বললেও, তেড়িয়া ভাব থাকে একটা চোখে মুখে। ও কিছু নয়। তেগবাহাদুরের ধরণটাই এম্নিধারা।
আঙুল দেখালাম মুলোর দিকে– কিনলে?
— হহঃ
— শুধু মুলো?
— প্যাসেঞ্জার নাই। ভাড়া নাই। রেশনের ভাত দিয়া আর কয়দিন খামু? সবজি লাগে না? সবজি?
— মুলো শুধু?
— ট্যাকা নাই। যাই গিয়া… বাড়ি।
চলে গেল তেগবাহাদুর। মুলোর তরকারি দিয়ে ভাত খেতেই সম্ভবত। আর আমিও রওনা দিলাম ফিরতি পথে। খানিকটা নিশ্চিন্তি। লোকটা বেঁচে আছে। থাক থাক। বেঁচে থাক মুলো খেয়ে। এরকম অবস্থা অবশ্য প্রায় সব্বারই। ‘সব্বার’ বলতে এই যারা এই লেখা পড়ছে আর যে বেকুব এই লেখাটা লিখছে, তাদের বাদে বাদবাকি সিংহভাগ ভারতবাসীর।
সে হোক। করোনা থামানো জরুরি। এসব বিষয়ে না ভাবলেও চলবে। তাছাড়া, চাল টাল দিচ্ছে তো শুনেছি। তাহলে! থাক এসব কথা। বরং মূল ঘটনায় ফেরত আসি।
তো, এরকমই সময়ে আবার একদিন ফোন এলো আমার কাছে। সেদিন ছিল রোববার। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। ঘুম ভেঙে উঠে ফেসবুক করছিলাম পা ছড়িয়ে চা খেতে খেতে। হঠাৎ, কৌশিকদার ফোন।
–” স্যার, সেমিনা..ওই যে এগারো বছরের এক্স ডি আর… ও স্যার খাওয়া দাওয়া পাচ্ছে না ভালো করে। লক ডাউন চলছে বোঝেনই তো…। আর তাছাড়া এত্তো গরিব। পাঠাবো? আপনার ওখানে? আরেকবার?”
ব্রেকফাস্টে চায়ের সাথে ডার্ক চকলেট আর সানি সাইড আপ উইথ আমন্ড অ্যান্ড ওয়ালনাট রাখা ছিল আমার প্লেটে। এটা আমার সানডে স্পেশাল ইনডালজেন্স। সেই চিবোতে চিবোতেই বলেছিলাম–” পাঠিয়ে দিন। এখানেই থাকুক পুরো ডিউরেশেন-টা। অবসার্ভেসনে থাকুক। সেন্ড হার..”
আর গল্পের দ্বিতীয় পর্যায়টার এখানেই শুরুয়াৎ। বুটজুতো হারামি সমেত সেমিনা হাজির হলো পরদিন বিকেলে। নাকি ভোরবেলা বেরিয়েছে। পায়ে হেঁটেছে মাইল তিনেক। তারপর একটা শেয়ার গাড়ি। তারপর আরো অনেকটা হাঁটা। কাঁধে করে এনেছে নাকি মেয়েকে। পুলিশ নাকি আটকেছিল বেশ কয়েকবার।
শুনে বিশ্বাস হল না। বাপটাকে আমি চিনি। এসব ওর শয়তানি মার্কা কথাবার্তা মন ভেজানোর জন্যে। সেমিনার দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে বললাম –” এঁহি পে রেহ্ যা বাচ্চি। খানা মিলে গা। চার টাইম। আন্ডা বান্ডা মাছ মাংস..সবকুছ্! রহে গি?”
সেমিনা আমায় সেদিন অবাক করে দিয়ে বলেছিল–” পাপা কে সাথ..।”
অগত্যা। অগত্যা আমি সরকারি নিয়মনীতিকে ভুলে গিয়ে অনুমতি দিয়েছিলাম বুটজুতো-কে থাকার। ঘর দিয়েছিলাম একটা সেপারেট। বলেছিলাম সিস্টারদের চোখ মটকে–” একটা ‘ডায়েট’ জল মেশান। সেমিনার বাপটাও নাহয় এখানেই খাক। নয়তো পালাবে মেয়েকে ফেলে। আর মেয়েটাও তাইলে পালাবে মালটার পেছন পেছন..।”
এবং ম্যাজিক। ঢ্যান ট্যাঁ ড়্যাঁ। জাস্ট জমজমাট ম্যাজিক এক্কেবারে! যাকে বলে জাদু! বুটজুতো লোকটা হাত কচলে নুয়ে পড়েছিল একেবারে–” খানা মিলেগা সাব? ফ্রি মে? ভাত? দোনোকো হি? আপ… আপ ভগবান হ্যায় সাব.. “
সেমিনার বাবা টানা তিনমাস ছিল এরপর থেকে এখানে। মেয়ের চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। খেয়াল রেখেছিল, যত্ন নিয়েছিল বিনা বাক্যব্যয়ে। মাঝে একবার ছুটিও নিয়েছিল অবশ্য। কে না কে মারা গেছে ওদের। তিনদিনের ছুটি। মেয়েটাকে রেখে গিছল আমাদের দায়িত্বে। তারপর আবার এসে হাজির হয়েছিল গুটিগুটি। পায়ে, ওই বুটজুতো। গায়ে, ওই জ্যাকেট। মুখে ওই হেঁ হেঁ হাসি। এবং রাউন্ড দিতে গিয়ে প্রত্যেকটা দিন আমি প্রত্যক্ষ করতাম একটা অপার্থিব দৃশ্যর।
লোহার খাটে পাশাপাশি ঠ্যাং ঝুলিয়ে হাপসে ভাত মাছ খাচ্ছে বাপ মেয়ে দু খানা সানকিতে। ঘেঁষাঘেঁষি। পাশাপাশি। শরীরে শরীর ঠেকিয়ে। চোখে মুখে শান্তি। পরিতৃপ্তি। আর…নিশ্চিন্দি।
একটা দুটো দিন অবশ্য ব্যতিক্রমও ঘটতো। সেদিন ওদের খাওয়া হয়ে যেত আগেভাগেই। যদিও বসে থাকতো ওভাবেই দুজনে ঘেঁষাঘেঁষি। আর আমি ওয়ার্ডের বাইরে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাতাম। উপভোগ করতাম তারিয়ে তারিয়ে।
সাপটে ভাত খাওয়া দুটো তৃপ্ত মুখ চকচকাচ্ছে। বড় মুখটা যার, সেই বাপটা হাসছে নিঃশব্দে। হাতে, শিউলি ফুল ধরা। আর ছোট মুখটা যে অভাগীর, সেই সেমিনা ফুলটার পাঁপড়িতে আলতো তর্জনী রাখতে রাখতে হাসছে সশব্দে–” হি হি..কিৎনা সফেদ হ্যায় না? হাঁ? পাপা?”
আমি বোকার মত এদিক ওদিক চাইতে চাইতে ঘরে ঢুকতুম–” কেয়া রে? বচ্চি? সব্ ঠিকঠাক?”
এর অনেক অনেক দিন পরে, লকডাউন শিথিল হওয়ার দিন চারেক বাদে, সেমিনা একদিন সুস্থ হয়ে বুটজুতোর হাত ধরে বাড়ি চলে গিছলো নাচতে নাচতে।
আমি সেইদিন একলা আউটডোরে গুনগুনিয়েছিলাম সুকান্ত। সলিল। হেমন্ত।
“অবাক পৃথিবী, অবাক যে বারবার..”
আমার সারা জীবনের সমস্ত বাঁচা শেষ হয়ে গিছল ওইদিনই।
PrevPreviousবিবর্তনঃ যৌননির্বাচন- বহুগামী পাখি
Nextপিজিয়ান সুপারস্টিশনNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

চুরির পাঁচালী

May 26, 2022 No Comments

কেউ খায় ডুবে ডুবে,কেউ খায় ভেসে নেতানেতি ঘুষ খায় ফিকফিক হেসে। কেউ খায় চাকরি, কেউ খায় টাকা ঘুষাকার রাজ‍্যের কোষাগার ফাঁকা। কেউ খায় লুটেপুটে, কেউ

চেম্বার ডায়েরী ১

May 26, 2022 No Comments

সপ্তাহটা শুরু হোক একটা মিঠি মিঠি লেখা দিয়ে। এটাও পুনর্মুদ্রণ যদিও। এখন এই বয়স ব্যালান্স ভেঙেই খাবার বয়স। ______ বাগনান-কাশমলি অটোতে চাঁপা বসে আছে। শীতের

দল্লী রাজহরার ডায়েরী ১

May 26, 2022 No Comments

যদিও নাম দিয়েছি ডায়েরী, ডায়েরী আমি কোনদিন লিখিনি। দল্লী রাজহরায় থাকাকালীন  আমি  যে চিঠিগুলো লিখি (মূলত আমার স্ত্রীকে) আর যে চিঠিগুলো অন্যদের কাছ থেকে পাই

মরিশাস-মরীচিকা

May 25, 2022 No Comments

গোরাদা ক্যামেরা ব্যাপারটা সবচেয়ে ভালো জানে। ঐতিহাসিক ভাবেই এটা সত্যি। আমাদের এই ক’জনের মধ্যে একমাত্র ওরই একটা আগফা ক্লিক থ্রি ক্যামেরা ছিল। আর সেই মহামূল্য

IVF কেন ব্যর্থ হয়, বিশদে জানুন।

May 25, 2022 No Comments

ডা ইন্দ্রনীল সাহার ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া।

সাম্প্রতিক পোস্ট

চুরির পাঁচালী

Dr. Chinmay Nath May 26, 2022

চেম্বার ডায়েরী ১

Dr. Belal Hossain May 26, 2022

দল্লী রাজহরার ডায়েরী ১

Dr. Asish Kumar Kundu May 26, 2022

মরিশাস-মরীচিকা

Dr. Arunachal Datta Choudhury May 25, 2022

IVF কেন ব্যর্থ হয়, বিশদে জানুন।

Dr. Indranil Saha May 25, 2022

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

395713
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।