ভবানীপুর যাচ্ছি বাসে ৷ পার্ক স্ট্রিটের কাছে বাসে উঠলেন দুইজন আধাপুরুষ বা আধানারী ৷ ইচ্ছে করেই এদের চলতি নাম ব্যবহার করলাম না ৷ আমার ইচ্ছে করে না ৷ না-ইচ্ছের কথা বলে মহান হতে যেমন চাই না —-ইচ্ছেটুকু ছেঁটে ফেলে ক্ষুদ্র হতেও না ৷
এ পথে যতবার যাই এঁদের দেখি ৷ বাসে উঠে মানুষের ঔদাসীন্যেই বাঁচার রসদ খোঁজেন তাড়াতাড়ি ৷ আজো বাসে উঠেই পয়সা চাইলেন ৷ দিয়েও দিলাম – অভ্যেসমতো সামান্য ঝামেলা করে ৷ দেখি —একজন কেমন এক পরিপূর্ণ মায়াচোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে ৷ তারপর একগাদা রঙিন চুড়িভরা হাতখানা বুলিয়ে দিলেন আমার মাথায় ৷ মাথার বড় খোঁপাটি তাঁর বেশ । ছেলেবেলায় মায়ের সাজের টেবিলে যে খোঁপা মেয়ে সন্তানরা লোভী চোখে দেখত –কিংবা বায়না করে নাচের অনুষ্ঠানে ব্যবহার করত ওমন ৷
আমার বখাটেপনায় ততক্ষণ একটু ভাবমতো হয়ে গেছে ৷ খোঁপায় আঙুল ঘুটবার অনুমতি মিলল ৷ কী নরম কী নরম ! আর তো সময় নেই ৷ ওঁকে যেতে হবে পরের বাসে ৷ হড়বড় থেকে নামতে নামতে এলোমেলো বললেন — পড়াশুনো জানি ৷ 4 – 5 বাচ্চাদের ——–৷
আর শুনতে পাইনি ৷ ততক্ষণে ভিক্ষার্জনের খলবলে হাসিটা ফিরে এসেছে তাঁর মুখে আর ছন্দে বাজছে তালি ৷ লোকের বিরক্তি পাত্তাই দিচ্ছেন না মোটে ৷ নিজেকে সাজিয়েও নিয়েছেন কী যত্নে কী প্রেমে ৷ দুপুরের মেঘচাপা আকাশতলে কী খুলেছে তাঁদের চড়া গুলাবি বসন !
বাড়ি ফিরে দেখি নার্স আমার মায়ের বয়কাট চুলে দুটো মোরগঝুঁটি বেঁধে দিয়েছেন ৷ একদিক চেপে শুয়ে থাকার জন্য একটা ঝুঁটি লেতকে ৷ অন্যটা খাড়া ৷ মা শিশুর মতো বায়না করছেন লেতকানোটাকে অন্য ঝুঁটির মতো খাড়া করে দিতে হবে ৷ তাই করে দিলেন সিস্টার ৷ মায়ের মাথায় দুটো ফুল এখন সমান ফোটা ৷ আমার রুগ্ন মায়ের চোখ ভর্তি জলে এখন ফিকে ফিকে হাসি –জলে ভাসছে যেন দুই রাজহাঁস ৷
বারান্দায় দশমীর চাঁদ ৷ পূর্ণ নয় বলে অর্ধ দেখার পুণ্য জোটে ৷
গাছের পাতায় আলো ছায়া সমান ৷ তাতে ঘুমন্ত পাখির অবয়ব টের পাওয়া যায় ৷ দুয়োরপাশের পড়শী হারায় না ৷
বাসভূমি এক ৷ বেড়াগুলো লীন ৷
সুন্দর