আগাগোড়াই শান্ত নির্বিবাদী মানুষ ছিলেন বান্টিঙ। কিন্তু চট করেই হারিয়ে ফেলতেন তাঁর মেজাজ। তখন আবার এক ভিন্ন ধরণের মানুষ তিনি। বেস্ট, ম্যাক্লাউড, কলিপ সমেত একাধিক বন্ধু স্থানীয়দের সাথে বিশ্রী বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। মিতভাষী এই মানুষটা শহুরে হৈচৈর মধ্যে আরও হারিয়ে ফেলতেন নিজেকে। তার চেয়ে বরং নিজের লাইব্রেরি, নিজের ল্যাবে বা নির্জন কোনও প্রান্তরে অনেক বেশি সাবলীল ছিলেন তিনি। এমনকি বিয়ের পরেও অনেকটা সময়ই ল্যাবে, স্টাডিরুমে বা ছবি আঁকার পিছনে ব্যয় করতেন তিনি। আত্মমগ্ন মানুষটা ভুলেই যেতেন যে আজ মারিয়নের জন্মদিন! প্রথম প্রথম ব্যাপারটা মেনে নিলেও, ক্রমেই বান্টিঙের হালচাল বেমানান ঠেকতে শুরু করে মারিয়নের কাছে। ডাক্তারের মেয়ে হিসেবে শুধুমাত্র শহুরে আদব কায়দাতেই অভ্যস্ত নন, মারিয়ন ছিলেন আদ্যন্ত আধুনিকা, শিক্ষিতা, নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মহিলা। অবাধে তিনি বহু বন্ধুবান্ধবের সাথে মেলামেশা করতেন। পার্টি কিম্বা চ্যারিটিতে চৌখস ছিলেন তিনি। সেটা আবার একেবারেই না-পসন্দ বান্টিঙের। বান্টিঙ চাইতেন তাঁর মায়ের মতো, গ্রাম্য গৃহবধূর মতো, নিজের সংসারটা সামলান মারিয়ন। আর মারিয়ন চাইতেন, তাঁর বন্ধুদের সাথে সাবলীল ভাবে মিশুন বান্টিঙ। তিনি চাইতেন একঘেঁয়ে ফর্ম্যাল ড্রেসকোডের বাইরে ক্যাসুয়াল ড্রেস পড়ুন বান্টিঙ। নিজের পোষাকের ব্যাপারে আবার কিছুটা উদাসীনই ছিলেন বান্টিঙ। মানান সই কিছু একটা পড়লেই হলো। চিন্তাটাই আসল, পোষাক নিয়ে অতো চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন তিনি। আর এতেই আপত্তি মারিয়নের। বান্টিঙের পছন্দের সাথে মারিয়নের পছন্দ খাপ খাচ্ছে না ইদানীং।
এই রকমই, নিতান্ত ছোটো ছোটো পছন্দ অপছন্দগুলো পুঞ্জীভূত হয়ে ক্রমেই বড় অসন্তোষের মেঘের আকার ধারণ করল বান্টিঙ পরিবারে। বান্টিঙ পরিবারে ঘনিয়ে এলো অশান্তির ঘনঘটা। ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে নিত্য লেগে থাকত তর্কবিতর্ক, উত্তপ্ত কথা কাটাকাটি। এই তর্কবিতর্ক ক্রমেই ঝগড়াঝাঁটিতে পরিণত হলো। এরই মাঝে, ২৯শে এপ্রিল ১৯২৯ সালে জন্ম হয় বান্টিঙ-মারিয়নের একমাত্র সন্তান, উইলিয়ম রবার্টসন বান্টিঙের [৫৩]। পরিবারের শুভানুধ্যায়ীরা ভাবলেন, ছেলের জন্মের পর এবার নিশ্চয় বান্টিঙ পারিবারের অশান্তি অনেকটাই কমে যাবে। কিন্তু ঘটনা ঘটল পুরো উল্টো, সন্তানের জন্মের পর বান্টিঙ-মারিয়নের সম্পর্ক আরো জটিল আকার ধারণ করলো। চূড়ান্ত চিৎকার চেঁচামিচি, ঝগড়াঝাঁটি প্রায় রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়ালো। ইতিপূর্বেও আমরা দেখেছি, মুহূর্তের মধ্যেই দপ করে রেগে উঠেন বান্টিঙ, তখন আর কোনও হিতাহিত জ্ঞান থাকে না তাঁর। এবারও তেমনই ঘটল। একদিন ঝগড়ার সময়, রাগের মাথায় দিলেন চড়িয়ে মারিয়েনকে, অন্তত বান্টিঙের শ্বশুরমশাই সেই রকমই অভিযোগ করেছিলেন।
মারিয়নের গায়ে হাত তোলায় বান্টিঙের ঘনিষ্ঠ মহলে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বান্টিঙের ভাবমূর্তি। কেউ তাঁর আড়ালে নিন্দা করছেন, তো কেউ তাঁকে সংযত হবার বুদ্ধি দিচ্ছেন। বান্টিঙ কিন্তু বেপরোয়া। জাহান্নামে যাক ভাবমূর্তি, জানুক সবাই জানুক, একটা বোকা হদ্দকে বিয়ে করেছি আমি। আর নয়, অনেক হয়েছে, এবার নিষ্কৃতি চান তিনি। হ্যাঁ, ডিভোর্স চান তিতিবিরক্ত বান্টিঙ।
মারিয়নের কোলে বিল বান্টিঙ। |
কিন্তু ডিভোর্স বললেই কি আর ডিভোর্স পাওয়া যায়? বিশেষত সেই সময়ের কানাডায় বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা করা সহজ ছিল না। ‘সলিড এভিডেন্স’ ছাড়া, খুঁটিনাটি ঝগড়ার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ মঞ্জুর হতো না সেই সময়ে। ‘সলিড এভিডেন্স’ বলতে বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্কের কথা বোঝানো হতো। সেই ‘সলিড এভিডেন্স’ নিয়মের কথা জানতেন বান্টিঙও। আর তিনি এও জানতেন, সেই রকম কোনও প্রমাণ তাঁর হাতে নেই। তাই, প্রবল ইচ্ছা সত্ত্বেও সেই মুহূর্তে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করতে পারেন নি বান্টিঙ। তবে মারিয়নের সঙ্গ এড়িয়ে চলতেন শুরু করলেন তিনি। তাই যখন তখন বেডিয়ে পড়তেন বাড়ি থেকে, জ্যাকসনের সাথে চলে যেতেন দূরে, কোনও আঁকার ট্রিপে।
আইন ডিভোর্স দেয় দেবে না দেয় না দেবে, ক্ষিপ্ত বান্টিঙ সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছেন, কোনও মতেই আর মারিয়নের সাথে এক ঘরে থাকবেন না তিনি। মুখ দর্শন করতে চান না তিনি মারিয়েনের। বান্টিঙ চলে গেলেন বাড়ির দোতলায়। গবেষণার কাজ, পড়াশুনা, ছবি আঁকা নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আর মারিয়ন থাকতেন একতলায়, ছেলের সাথে, নিজের মতো করে। স্বাভাবিক কথাবার্তা বলা বন্ধ তো হয়ে গেলই, জুলাই ১৯৩০ সাল নাগাদ, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো যেন বান্টিঙ জানেনই না যে এই বাড়িতে অন্য কেউ থাকেন। থাকলেও তিনি চেনেন না তাঁদের। তিনি নিজের মতো বাড়িতে ঢোকেন, আবার নিজের মতো বেড়িয়ে যান। স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনের চিড় তখন ফাটল হয়ে উঠেছে। যদিও তখনও পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস বান্টিঙ’ হিসেবে কৃত্রিম হাসি মুখে নিয়েই উপস্থিত হচ্ছেন তাঁরা। তবে তাঁদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তখন বিস্তর।
বান্টিঙের জীবনের বেশ বড় একটা অংশ জুড়ে উপস্থিত আছেন জ্যাকসন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ প্রকৃতির বুকে একান্তে সময় কাটিয়েছেন তাঁরা। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছেন ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়। এহেন জ্যাকসনকে যে পারিবারিক অশান্তির কথা বলবেন তিনি, তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে। ফলে বান্টিঙ-মারিয়ন কলহ সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে ওয়াকিবহাল ছিলেন জ্যাকসন। জ্যাকসন যথেষ্ট বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। বান্টিঙের খ্যাতি ও সামাজিক পদমর্যাদার কথা বিলক্ষণ জানা তাঁর। বান্টিঙের দাম্পত্য কলহ প্রকাশ্যে এলে যে বিরাট শোরগোল তৈরি হবে তা অনুমান করতে ভুল করেন নি জ্যাকসন। জ্যাকসন শিল্পী মানুষ। তিনি প্রকৃতির কোলে আশ্রয় নিতে ভালোবাসেন। শহুরে তর্ক বিতর্ক থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করেন তিনি। তাই বান্টিঙের পারিবারিক সমস্যা নিয়ে বিশেষ কোনও মন্তব্য করতেন না জ্যাকসন। চুপচাপ শুনতেন সব কিছু। কিন্তু মুখ খুলতেন না বড় একটা। অসমর্থিত সূত্রে জানা যায় জ্যাকসন মনে করতেন, মারিয়নের উচিত হয় নি বান্টিঙকে বিয়ে করা, কারণ বান্টিঙ ছিলেন ভয়ঙ্কর রকমের একগুঁয়ে।
আঁকার পাশাপাশি, গল্প লেখার জন্যও একবার বিশেষ সচেষ্ট হয়েছিলেন বান্টিঙ। আর্থার কোনান ডয়েলের গল্প বা উপন্যাসের বড় ভক্ত ছিলেন তিনি। ডয়েলের গল্প তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে, শার্লক হোমস ধাঁচের একটা গোয়েন্দা গল্প লেখার কথা ভাবলেন একবার। ১৯২৭ সালে একটা গোয়েন্দা গল্প লিখেও ফেললেন তিনি। বান্টিঙ তাঁর গোয়েন্দা চরিত্রের নাম দিয়ে ছিলেন সাইলাস ইগলস্। গল্পটা ছাপানোর জন্য একটা ম্যাগাজিনে পাঠিয়েও দিলেন তিনি। মনোনীত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অবশ্য ছাপা হয় নি সেই গল্পটা।
কিন্তু বান্টিঙ তো দমে যাবার পাত্র নন। একটা গল্প ছাপা হয় নি, তো কি হয়েছে? আবার গল্প লিখবেন তিনি। আবার পাঠাবেন ম্যাগাজিন দপ্তরে। দেখা যাক না, পরের গল্পটার কি হাল হয়। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁডাচ্ছে- সময়। একদিকে আঁকার নেশায় কোনদিন কোথায় যে থাকবেন তার ঠিক নেই। তাছাড়া আছে ডাক্তারি জীবন, আছে ছন্নছাড়া পারিবারিক জীবন। মানসিক অশান্তি আর কাজের চাপে গল্প লেখার সুযোগই যেন পাচ্ছেন না তিনি। পাচ্ছেন না সময়ও। আঁকার টানে বান্টিঙ তখন জ্যাকসনের সাথে কানাডার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুর বেড়াচ্ছেন। কথা প্রসঙ্গে একদিন জ্যাকসনের কাছে গল্প লেখার কথাও পাড়লেন তিনি। বললেন, গল্পতো লিখতে পারি, কিন্তু সময় করে লিখে উঠতে পাচ্ছি না। অনুলেখকের মতো, যদি তাঁর হয়ে কেউ লিখে দিতেন গল্পটা তাহলে কিছুটা সুবিধা হতো তাঁর।
বান্টিঙের ব্যক্তিত্বকে সবসময়ই সমীহ করে চলতেন জ্যাকসন। বান্টিঙ যখন বলেছেন গল্প লেখার লোক চাই, তখন ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করলেন জ্যাকসন। সত্যি, সত্যি বান্টিঙের জন্য একটা অনুলেখকের ব্যবস্থা করে দিলেন জ্যাকসন। টরন্টো স্টার পত্রিকার ফ্রিল্যান্সার, তরুণী সাংবাদিক ব্লোডওয়েন ডেভিস তখন আর্ট অ্যান্ড লেটারস ক্লাবেও যাতায়াত শুরু করেছেন। সংবাদ জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে, বড় খবরের আশায় আছেন তখন ব্লোডওয়েন। বান্টিঙের গল্পের অনুলেখক হিসেবে ব্লোডওয়েনকে নির্বাচন করলেন জ্যাকসন। বড় খবরের আশায় সাগ্রহে বান্টিঙকে সাহায্য করতে রাজি হলেন ব্লোডওয়েন। সেই মতো ব্লোডওয়েনের সাথে বান্টিঙের পরিচয়ও করিয়ে দিলেন তিনি। এরপর থেকে নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন বান্টিঙ ও ব্লোডওয়েন। তখন প্রায়ই এখানে সেখানে গল্প করতে দেখা যেতো ব্লোডওয়েন আর বান্টিঙকে। যত দিন যায় ততই বেড়ে চলল তাঁদের মেলামেশা। মেলামেশাটা যেন একটু বেশি মাত্রায় হচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে। মেলামেশাটা এখন যে আর নিছক বন্ধুত্বের মধ্যে আবদ্ধ নেই, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না কারও। বিষয়টা নিয়ে কানাঘুষো চলছে সর্বত্র। ব্যাপারটা কানে গেছে মারিয়নেরও। এমনকি বান্টিঙের শ্বশুরমশাই পর্যন্ত জেনে গেছেন ব্যাপারটা। এক কানাডিয়ন ট্যাবলয়েডে এই বিষয়ে তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ করে লেখা হয়, “গত কয়েক মাস ধরে ডা. বান্টিঙ এবং মিস ব্লোডওয়েনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কথা শিল্পী জগতের জানা থাকলেও, এটা মনে করা হয়ে থাকে যে তাঁদের সান্নিধ্যের মধ্যে প্রকৃত বুদ্ধিগত সহমতের স্বাদ বিদ্যমান, মোটেও নোংরা যৌন সম্পর্কের নয়, যা [নিয়ে] অভিযোগ করেছেন ডা. বান্টিঙের শ্বশুর মশাই”।
বান্টিঙের জীবনে তখন ঘটনার ঘোর ঘনঘটা। আর্ট অ্যান্ড লেটার্স ক্লাবে ডোনাট এম. লিবৌরদেস নামের এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় ঘটেছিল বান্টিঙের। লিবৌরদেস ছিলেন ‘কানাডিয়ন ন্যাশনাল কমিটি অন মেন্টাল হেলথ’এর ‘এডুকেশন ডিরেক্টর’। অক্টোবর ১৯৩১, ব্লোডয়েনের দেওয়া এক পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস বান্টিঙ’। এই পার্টিতেই লিবৌরদেসের সাথে আলাপ মারিয়নের। এরপর থেকে প্রায়ই মারিয়ন আর লিবৌরদেসের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হতে লাগল। বান্টিঙ একদিন জ্যাকসনকে বলেন, লিবৌরদেসের সাথে মরিয়মের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলেই তাঁর ধারণা। আর তাঁর স্ত্রীর এই অবৈধ সম্পর্ক কিছুতেই মেনে নেবেন না তিনি।
সাধারণত ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ বান্টিঙ। কিন্তু রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। এবারও তাই হলো। মারিয়ন-লিবৌরদেসের অবৈধ সম্পর্ক প্রমাণ করতে, এইচ.এ. শেরম্যান এবং এল. ইকলে নামে দুই ‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ’কে নিয়োগ করলেন তিনি। তাঁদের কাজই হলো মারিয়ন-লিবৌরদেসের অবৈধ সম্পর্কের ‘সলিড এভিডেন্স’ জোগাড় করা। শুধু তাই নয় এখন তিনি তাঁদের পুত্র বিলের পিতৃত্ব নিয়েও সন্দিহান। এই সময়ে, বিলকে তাঁর নিজের পুত্র হিসেবে পরিচয় দিতেও অস্বীকার করেন বান্টিঙ। এক ভয়ঙ্কর পারিবারিক জটিলতায় জড়িয়ে পড়লেন বান্টিঙ।
মারিয়নের অগোচরে দুই গোয়েন্দা অনবরত নজর রেখে চললেন মারিয়নের উপর। ৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৩২, লিবৌরদেসের লেখা একটা স্ক্রিপ্ট পাঠ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মারিয়ন। সেই সূত্রে, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ, লিবৌরদেসের ফ্ল্যাটে হাজির হন মারিয়ন। তক্কে তক্কে ছিলেন দুই গোয়েন্দা। লিবৌরদেসের ফ্ল্যাটে মারিয়নের আগমন বার্তাটা সাথে সাথে ফোন করে বান্টিঙকে জানিয়ে দেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, স্বচক্ষে ‘সলিড এভিডেন্স’ দেখে যান বান্টিঙ। গোয়েন্দা সূত্র ধরে, দ্রুত লিবৌরদেসের ফ্ল্যাটে হানা দেন বান্টিঙ। ফ্ল্যাটের সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধই ছিল। সদর দরজার উপরের অংশে কাঁচ লাগানো ছিল। দরজার কাঁচের অংশ ভেঙ্গে, ভিতরে হাত ঢুকিয়ে লক খুলে ঘরে ঢোকেন বান্টিঙ ও তাঁর সহযোগী দুই গোয়েন্দা। ঘরে ঢুকে সামনেই লিবৌরদেসকে দেখতে পান বান্টিঙ। লিবৌরদেসের পিছনে দাঁডিয়ে ছিলেন মারিয়ন। ক্ষিপ্ত বান্টিঙ, লিবৌরদেসের জামার কলার ধরে ছুঁড়ে ফেলেন সোফার উপর। সহযোগী গোয়েন্দাদ্বয়ের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায় নি ব্যাপারটা। ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত মারিয়ন। বান্টিঙ তখন চেঁচিয়ে যাচ্ছেন, ডিভোর্স দেবো আমি তোমায়। তৈরি থাকো তুমি ডিভোর্সের জন্য।
(চলবে)
[৫৩] উইলিয়ম রবার্টসন বান্টিঙ (১৯২৯-১৯৯৮) ‘বিল’ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। ১৫ বছর বয়সে বাবা-মা দুজনেই মারা গেলে অনাথ হস্টলে থেকে বড় হতে থাকেন বিল। বড় হয়ে ফটোগ্রাফার, লেখক, ডকুমেন্টারি চিত্র পরিচালক হিসেবে বিবিসি এবং সিবিসি তে কাজ করতেন বিল। বাবা বান্টিঙ সম্পর্কে ২০ মিনিটের তাঁর একটা ইন্টারভিউ রেকর্ড করা আছে সিবিসিতে। তাঁর সেই স্মৃতিতে অবশ্য বেশ ধূসর বাবা ফ্রেডরিক বান্টিঙ। কারণ মাত্র ১২ বছর বয়সে পিতৃহারা হন বিল। বিল কিন্তু কখনই পিতৃ পরিচয় দিয়ে কোনও বাড়তি সুযোগ নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। তবে ‘বান্টিঙ’ পদবীর জন্য সব সময়েই গর্ব বোধ করতেন তিনি।