সপ্তম অধ্যায় – মেডিক্যাল কলেজে কাদম্বিনী এবং মেডিসিনে নারীশিক্ষার বিকাশ
মেডিক্যাল কলেজে কাদম্বিনী গাঙ্গুলি প্রবেশ করলেন, পাশ করলেন এবং নারীদের মেডিক্যাল শিক্ষার পথ প্রশস্ত করলেন – এগুলো ইতিহাসের ঘটনা। কিংবা চন্দ্রমুখী বসু, অবলা বসু, সরলা দাস বা শ্রীমতী ডি’আব্রু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হলেন অথবা বাংলার বাইরে মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজে পড়তে গিয়ে ইতিহাস তৈরি করলেন – এ ঘটনাগুলোও এখন স্কুলপাঠ্য বিষয়। কিন্তু উপনিবেশিক ভারতে এ ইতিহাস গড়ে উঠল কিভাবে, সে ইতিহাস আমাদের কম জানা। এখানে পরস্পরসংযুক্ত একাধিক বিষয় একসঙ্গে কাজ করেছে – (১) ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক বোধের প্রতিসৃত (refracted) প্রবেশ ঘটেছে বাংলার তথা ভারতের ওপরতলার “আলোকপ্রাপ্ত” শিক্ষিত মানুষের মাঝে, (২) সমাজের বিভিন্ন স্তরে স্থিত ব্যক্তি মানুষের বৈশিষ্ট্য ও উপস্থিতি অনুঘটক হিসেবে সামগ্রিক বিষয়কে ত্বরাণ্বিত করেছে, (৩) ঐতিহাসিক সমাপতন হিসেবে ইংল্যান্ডের কয়েকজন বিশিষ্ট নারী ১৮৬০-৭০-এর দশকেই বাংলার নারীদের নিয়ে তাঁদের কার্যকলাপ প্রসারিত করেছেন, এবং, সর্বোপরি, (৪) কলকাতার ব্রাহ্ম সমাজের একাংশ “pressure group” হিসেবে সমাজের অভ্যন্তর থেকে চাপ তৈরি করে এ ইতিহাসকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে।
১৮৬০ থেকে ১৮৮০-র দশক জুড়ে এরকম বিভিন্ন স্তরায়িত পারম্পর্যপূর্ণ ঘটনা ঐতিহাসিকভাবে সমাপতিত হয়েছে। একে কেবলমাত্র ব্রাহ্ম সমাজের আন্দোলন বা প্রগতিপন্থী ইংরেজদের উদারতা এরকম দ্বিত্ত্বতায় দেখা সম্ভবত কালের বিচারে অনুচিত। এ ধরণের কোন সমসত্ত্ব (homogeneous) কার্য-কারণ সম্পর্কও এর মাঝে ছিলনা। ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা একসঙ্গে জুড়ে গেছে। ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা আলাদা করে সামনে এসেছে – ইতিহাস লিখেছে সে কথা। এবার আমাদের জানার সময় এসেছে।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, ঐতিহাসিক এবং ভারতবেত্তা জেমস মিল ১০ খণ্ডে সুবিপুল ভারতবর্ষের ইতিহাস (The History of British India) লিখলেন। ১৮১৭ সালে প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৮৫৮ সালে আরেক যশস্বী ভারততত্ত্ববিদ হোরেস হেম্যান উইলসনের সম্পাদনায় সবগুলো খণ্ড নতুন করে প্রকাশিত হয়। আমি ১৮৫৮ সালে সংস্করণটিকে ব্যবহার করেছি। মিল লিখেছিলেন – “The condition of the women is one of the most remarkable circumstances in the manners of nations. Among rude people, the women are generally degraded; among civilized people they are exalted … A state of dependence more strict and humiliating than that which is ordained for the weaker sex among the Hindus cannot easily be conceived.” (The History of British India, 1858, Vol. I, পৃঃ ৩০৯-৩১০)
সহজ করে বললে, মিলের মতে, সমাজে নারীর অবস্থান সভ্যতার মানদণ্ড বোঝায়। এক্ষেত্রে, মিলের ধারণানুযায়ী, নারীদের অধঃপতিত অবস্থানের কারণে সভ্যতার মাপকাঠিতে ভারতের স্থান “সিভিলাইজড পিপল”দের অনেক নীচে। ১৮১৭ সালের প্রতিনিধিত্বকারী এরকম ধারণা ভারতকে বোঝার একটি “entry point” ছিল। এরপরে ইংরেজ শাসনকর্তাদের মাঝে কিছু বিশেষ পরিবর্তন যেমন আসে তেমনি ইংরেজি শিক্ষা ও প্রশাসনিকতার অভিঘাতে শিক্ষিত বাঙালি এবং ভারতীয়দের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গীরও পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু মিলের বলা কথার তাৎপর্য দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় নারী সম্পর্কে ব্রিটিশ অবস্থানকে প্রভাবিত করেছে। তবে সেসময়ে খোদ ইংল্যান্ডে যে নারীর সামাজিক অবস্থান খুব উজ্জ্বল ছিল এমনটা কিন্তু নয়।
ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারছি – “The legislative side of the British regulation of medicine, on the other hand, was a retarding factor. The Medical Act of 1858 stipulated that no foreign degree would qualify anyone for the medical register. Until the 1870s, all the medical doctorates won by women were foreign. Only in 1876, with the Russell Gurney Enabling Act, were women assured of medical legitimacy.” (Johanna Geyer-Kordesch, “Women in Medicine”, in Companion Encyclopedia of the History of Medicine, ed. W. F Bynum and Roy Porter, Vol. 2, 1997, পৃঃ ৮৯৮) অর্থাৎ, ১৮৭০ সাল পর্যন্ত নারীদের মেডিক্যাল প্র্যাকটিস করার অনুমতি ছিলনা। তাদেরকে বিদেশী বলে ধরা হত – খোদ ব্রিটেনে। ১৮৭৬-এর নতুন অ্যাক্টের পরে প্র্যাকটিস করার অধিকার পায়।
১৮৭৪ সালে প্রথম London School of Medicine for Women (LSMW) তৈরি হয়। এলিজাবেথ গ্যারেট অ্যান্ডারসন ইংল্যান্ডের প্রথম মহিলা মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট। তবে পাস করেছিলেন জুরিখ থেকে, ইংল্যান্ডে অনুমতি ছিলনা। তিনি এই স্কুল প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান স্থপতি ছিলেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে Isabel Thorne, Edith Pechey, Matilda Chaplin, Helen Evans, Mary Anderson, এবং Emily Bovell হলেন এডিনবার থেকে পাস করা প্রথম ৬ জন ব্রিটিশ মহিলা ডাক্তার। (Bryan Christie, “First women to study medicine in the UK are honoured”, British Medical Journal, 2019; 365: l1635)
“র্যাডিকাল” ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনে মেয়েদের মেডিক্যাল শিক্ষার অনুমতি মেলে ১৮৭৮ সালে – “One of the special glories of the University of London is that it was the first British university to award degrees to women. In 1878 sex discrimination in the examinations was ended, and the first women graduates were produced in 1880. By contrast, women were not permitted to graduate at Oxford until 1920, or at Cambridge until 1923.” (N. B. Harte, The University of London, 1836-1986: An Illustrated History, 1896, পৃঃ ২৫। F.M.L. Thompson, ed. The University of London and the World of Learning, 1836-1986, 2003, পৃঃ ১৩৬) যদিও এর আগে কেমব্রিজে মহিলাদের শিক্ষার জন্য Girton College খোলা হয়েছিল ১৮৬৯ সালে। কিন্তু মেডিক্যাল শিক্ষার জন্য নয়। এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনার জন্য দ্রষ্টব্য – Ray Strachey, The Cause; a Short History of the Women’s Movement in Great Britain, 1969।
অর্থাৎ, ১৮৮০ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েটরা পাস করে বেরোলেন। ১৯২০-র আগে অক্সফোর্ড এবং ১৯২৩-এর আগে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় মহিলাদের গ্র্যাজুয়েট হবার অনুমতি দেয়নি।
এখানে একাধিক নজর করার মতো বিষয় রয়েছে – (১) ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের পরে প্যারিসের হাসপাতালগুলোতে অন্তত ২০০০ বছরের মেডিসিনের ইতিহাসকে অতিক্রম করে মেডিসিনের নতুন অধ্যায় “হসপিটাল মেডিসিন”-এর সূচনা হয়েছিল ৩টি স্তম্ভের ওপরে দাঁড়িয়ে (বেড সাইড পরীক্ষা, পোস্টমর্টেম, এবং চিকিৎসার পরিসংখ্যান তৈরি করা) উনবিংশ শতকের প্রথম ২৫ বছরের মধ্যে। ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে ১৮৩৫ সালে ঐতিহাসিক কোন রূপান্তর ব্যতিরেকেই মেডিসিনের এই অধ্যায়ের সূচনা এবং সফল কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ভারতে আধুনিক মেডিসিনের দ্বারোদ্ঘাটনই হল “হসপিটাল মেডিসিন”-এর মধ্য দিয়ে। (২) যে শবব্যবছেদকে (এবং পরবর্তীতে ল্যাবরেটরি-নির্ভর মেডিসিনের চর্চা) মেডিসিনের আধুনিক হবার ভিত্তি ধরা হয়, ১৮৩৬ সালের প্রাথমিক জাড্য কাটিয়ে উঠে মেডিক্যাল কলেজে ইউরোপের যে কোন মেডিক্যাল স্কুলের চেয়ে বেশি ডিসেকশন হত এবং, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে, ছাত্রদের অ্যানাটমির জ্ঞান ইউরোপের স্কুলগুলোর ছাত্রদের তুল্য বা অধিক বলে মনে করা হত। (৩) শতাধিক বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ডে মহিলাদের মেডিক্যাল শিক্ষার অধিকার এবং সুযোগ প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৭৮ সালে। ইউরোপ-আমেরিকা তুল্য কোন সামাজিক অভিঘাত ছাড়া ভারতের ক্ষেত্রে সে ঘটনা প্রথম ঘটে মাদ্রাজে ১৮৭৫ সালে এবং ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে ১৮৮৩ সালে। যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের শিক্ষার অধিকার স্বীকৃত হয়েছিল ১৮৭৮ সালেই।
কোন দীর্ঘস্থায়ী সমাজ বিপ্লব/আন্দোলন কিংবা সমাজের নীচের তলা অব্দি আলোড়িত/মন্থিত (churned) না হয়ে এক নতুন ধরণের “engrafted” আধুনিকতার সবল সূচনা হল বাংলা তথা ভারতবর্ষে।
১৮৭৯ সালের ১৫ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের মিটিংয়ে ভাইস চ্যান্সেলর Alexander Arbuthnot বলেন – “I refer to the fact of the Senate having passed rules for the examination of female candidates, under the operation of which one Hindu young lady, educated at the Bethune School, passed the Entrance Examination with great credit. The young lady to whom I refer, Kadambini Bosu, obtained very high marks in Bengali, very tolerable marks in history; and even in the exact sciences – a subject which is not usually considered to be congenial to the female intellect – she acquitted herself very creditably.” মাত্র ১ নম্বরের জন্য তাঁর প্রথম বিভাগে পাশ করা হাতছাড়া হয়। (University of Calcutta – Minutes for the Year 1878-79, পৃঃ ১১০) আমি আগের অধ্যায়ে ছাত্রীদের সাবজেক্ট পছন্দ করার ক্ষেত্রে বৌদ্ধিক জগতে পুরুষের সবলতাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেবার প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করেছিলাম, ভাইস চ্যান্সেলরের বক্তব্য সে কথাকেই আরেকবার বৈধতা দিল।
যাহোক, আমরা এ লেখার শুরুতে উল্লেখিত মিল সাহেবের লেখায় ফিরে যাই। ১৮১৭ সালে জেমস মিল যখন ভারতবর্ষে নারীদের অবজ্ঞাজনক অবস্থান নিয়ে কথা বলছেন প্রায় সমকালে ১৮২২ সালে গৌরমোহন বিদ্যালংকার নারী শিক্ষা বিস্তারের অভিপ্রায়ে লিখলেন স্ত্রী শিক্ষাবিধায়ক পুস্তিকা (এই পুস্তকের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রাধাকান্ত দেব।) যদিও ভাবার মতো এরকম কোন তথ্য আমাদের হাতে নেই যে গৌরমোহন মিলের লেখা ইতিহাস বই পড়েছিলেন। ১৮২২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়ে ১৮২৪ সালে পুস্তিকাটির ৩য় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। আমি এই সংস্করণটি ব্যবহার করেছি। এর থেকে বোঝা যায় পুস্তিকাটি শিক্ষিতমহলে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। পুস্তিকাটি দুজন নারীর মধ্যে কথোপকথন ছলে লেখা।
পুস্তিকাতে বলা হল – “কিন্তু প্রথম ইং ১৮২০ শালের জুন মাসে শ্রীযুত সাহেব লোকেরা এই কলিকাতায় নন্দন বাগানে যুবনাইল (juvenile) পাঠশাল নামে এক পাঠশালা করিলেন, তাহাতে আগে কোন কন্যা পড়িতে স্বীকার করিয়াছিল না, এই ক্ষণে এই কলিকাতায় প্রায় পঞ্চাশটা স্ত্রী পাঠশালা হইয়াছে। তাহাতে প্রত্যেক পাঠশালায় ন্যূন সংখ্যাতে ১৬ জন কন্যা গণনা করিলে ও ৮০০ কন্যার শিক্ষা হইতেছে, ইহাতে কাহার ও কিছু ক্ষতি কিম্বা অখ্যাতি হয় নাই।” (স্ত্রী শিক্ষাবিধায়ক, ১৮২৪, পৃঃ ৯-১০) আরও বলা হল – “স্ত্রীলোক যদি বিদ্যা অভ্যাস করে, তবে পুরুষাপেক্ষা অতিশীঘ্র বিদ্যাবতী হয়। অতএব তাহারদিগকে যেমন ঘরের কার্য্যাদি শিক্ষা করাণ তেমন বালককালে যাবৎ বয়স্থা না হয় তাবৎ বিদ্যাশিক্ষা করাণ উচিত হয়।” (পৃঃ ৩৯) এবং মেয়েরা যে দ্রুত শিক্ষা আয়ত্ব করছে এ কথাও জোর দিয়ে বলা হয়। (পৃঃ ৩৮)
আগের অধ্যায়ে বেথুন কলেজ এবং কাদম্বিনীকে নিয়ে প্রাথমিক কিছু আলোচনা করেছিলাম। সে বিষয়টি আরেকটু বিস্তারে বলার প্রয়োজন আছে। কারণ প্রাথমিকভাবে যাঁরা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন তাঁরা প্রায় সবাই ছিলেন সেসময়ের একমাত্র মহিলাদের কলেজ বেথুন কলেজের ছাত্রী।
২০ নভেম্বর, ১৮৬৬ সালে মেরি কার্পেন্টার ভারতে এলে নারীশিক্ষার ব্যাপারে গতির সঞ্চার হয়। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন, মনমোহন ঘোষ এবং দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনার পরে পরামর্শ দেন “of opening up a non-denominational normal school in the metropolis.” (রচনা চক্রবর্তী, “Women’s Education and Empowerment in Colonial Bengal”, in Responding to the West: Essays on Colonial Domination, and Asian Agency, ed., Hans Hagerdal, পৃঃ ৯২)
এ লেখার প্রথমদিকে কেমব্রিজের Girton College-এর কথা বলেছিলাম। এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রীদের একজন অ্যানেট অ্যাকরয়েড (Annette Akroyd) কলকাতায় আসেন ১৮৭০ সালে এবং কলকাতায় নারীশিক্ষা নিয়ে সদর্থক পদক্ষেপ নেন। তাঁর সুযোগ্য এবং পরিশ্রমী সহযোগী ছিলেন অবলাবান্ধব পত্রিকার সম্পাদক ও নারীশিক্ষা আন্দোলনের একনিষ্ঠ প্রচারক এবং সংগঠক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি। (Kamal K. Mishra, History of Brahmo Samaj: Adi Brahmo Samaj, 1957, পৃঃ ১৬৪-১৬৫)
অ্যাকরয়েড কলকাতায় এসে ১৮৭৩ সালে হিন্দু মহিলা বিদ্যালয় নামে একটি বোর্ডিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। (গোলাম মুরশিদ, সংকোচের বিহ্বলতা – আধুনিকতার অভিঘাতে বঙ্গরমণীর প্রতিক্রিয়া, ১৮৪৯-১৯০৫, ১৯৮৫, পৃঃ ১৩৫) পরবর্তীতে এই বিদ্যালয়ের নাম হয় বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় এবং বেথুন স্কুলের সাথে জুড়ে গিয়ে বেথুন কলেজে রূপান্তরিত হয়। মেরেডিথ বর্থউইক মন্তব্য করেছেন – “In Abalabandhab, a women’s journal run by the progressive Brahmos who had managed the Banga Mahila Bidyalaya, Girton College was again held up as the model for the education to be given at Bethune School.” (Meredith Borthwick, The Changing Role of Women in Bengal, 1849-1905, 1984, পৃঃ ৯৫)
মুরশিদ আরও জানাচ্ছেন যে অ্যাকরয়েডের এই স্কুল প্রতিষ্ঠা কলকাতার রক্ষণশীল সমাজে যথেষ্ট আলোড়ন তৈরি করেছিল দুটি কারণে – (১) ছাত্রীরা খুব সম্ভবত পাশ্চাত্য পোষাক পরবে, এবং (২) ছুরি-কাঁটা দিয়ে খাবে। মুরশিদের মন্তব্য – “যদিওছুরি-কাঁটা দিয়ে খাওয়ায় ছাত্রীদের নারীসুলভ গুণাবলী বিন্দুমাত্র হ্রাস পায় নি।” (মুরশিদ, পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৩৫)
(স্কুলের ছাত্রীদের পোষাক লক্ষ্যণীয়। ছবিটি সংগৃহীত হয়েছে Lord Bevridge-এর India Called Them (1947), পৃঃ ১১৮, থেকে)
এখানে লক্ষ্যণীয়, সে সময়কালে নারীশিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে নারীদের আদবকায়দা, রুচি, সামাজিকভাবে আত্মপ্রকাশের ধরণ, সাজপোষাকের মতো বিভিন্ন অনুষঙ্গ বদলে যেতে শুরু করল। “বাঙালি বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই বাঙালি মহিলাদের পোশাক কিভাবে উন্নত করা যায়, সে নিয়ে ১৮৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে বিতর্ক চলতে থাকে।” (মুরশিদ, পূর্বোক্ত, পৃঃ ২০৯)
শিক্ষাগ্রহণ শুধুমাত্র শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের পথ হলনা, নারীর নতুন অস্তিত্ব তৈরির সহায়ক শক্তি হয়ে উঠল এবং সমাজকেও প্রভাবিত করতে শুরু করল। এতদিন পুরুষের চোখ দিয়ে নারী তথা সমাজকে দেখাই একমাত্র সত্যি বলে ধরে নেওয়া হচ্ছিল। এখন নারীর চোখ দিয়ে পুরুষ তথা সমাজকে দেখার নতুন স্পেস তথা পরিসর তৈরি হল। এখানেই গোল বাঁধলো রক্ষণশীল সমাজের সাথে। নারীর চোখ দিয়ে কেন পুরুষকে দেখা হবে? সম্ভবত নারীর দৃষ্টিতে পুরুষ/সমাজকে দেখার মাঝে পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত সমাজের অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছিল এক অজানা আশংকা ও অজ্ঞেয়তা এবং বহু শঠতা, বহুগামিতা ও মিথাচারের আবরণ উন্মোচিত হবার ভয়।
এরই প্রসারিত রূপ আমরা দেখব কাদম্বিনীর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নিয়ে যে প্রবল বিরোধ এবং সংঘাত তার মাঝে। বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজে এর কাহিনী ধরা আছে। কিন্তু এর মাঝে অন্তর্লীন যে স্রোত প্রবাহিত ছিল সেটা দলিলে ধরা পড়েনা। আমাদের বুঝে নিতে হয়। এজন্য মেডিক্যাল কলেজের ইতিহাস শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস নয়। এর সাথে পরতে পরতে জুড়ে আছে সে সময়ের জাতীয়-আন্তর্জাতিক, সামাজিক-অর্থনৈতিক ঘটনা, শহর কলকাতার চলমান জীবনালেখ্য। প্রতিষ্ঠান-অতিরিক্ত অনেক ইতিহাস।
মালবিকা কার্লেকার তাঁর “Kadambini and the Bhadralok: Early Debates over Women’s Education in Bengal” (Economic and Political Weekly, April 26, 1986, pp. WS25-WS31) এ সমস্যাকে চিনেছেন এভাবে – “If women were excessively liberated there was no guarantee that they would either accept the moral straitjacket imposed on them or the sexual double standards allowed for men. These sub-conscious insecurities took a hysterical form occasionally as in the response to the educational and later professional successes of Kadambini, the first Indian woman doctor.”
সেসময়ে নারীদের মধ্যে শিক্ষার স্পৃহা, নতুন দুনিয়ায় প্রবেশের দুর্বার আকাঙ্খা এবং জেদের ইতিহাস ধরা পড়ে নারীদের জন্য স্কুলের ও ছাত্রীর সংখ্যাবৃদ্ধির মাঝে। ১৮৬৩ সালে বালিকা বিদ্যালয় ছিল ৯৫, ছাত্রী সংখ্যা ২,৪৮৬। ১৮৭১ সালে যথাক্রমে ৩৪৪ এবং ৬,৭১৭। ১৮৭১-তে ১,০৪২ এবং ৪৪,০৯৬। ১৮৯০ সালে সে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হল যথাক্রমে ২,২৩৮ ও ৭৮,৮৬৫। (মুরশিদ, পূর্বোক্ত, পৃঃ ৩৩)
মেডিক্যাল শিক্ষার অন্দরমহলে
১৮৮১-৮২ সালের রিপোর্টে আমরা দেখেছিলাম – “সরকারি বেথুন স্কুলে এখন ১০৬ জন ছাত্রী আছে … Miss D’Abreu, who passed the F.A. Examination, and Miss Abala Das, who passed the Entrance Examination, in December 1881, both with first grade scholarships, have joined the Madras Medical College, where provision exists for the superior instruction of women in medicine. An application had previously been made to the Council of the Medical College in Calcutta for the
admission of the young ladies to that institution, to study the ordinary course presented for the degree; but it met with such determined opposition from the Professor of the College, though warmly supported by the Officiating Principal and subsequently by the Principal, that the proposal was for the time dropped.” (GRPI 1881-82, পৃঃ ৯২) ১৮৮১-৮২ সালে অবলা দাস এবং ডি’আব্রুর প্রথম শ্রেণীর স্কলারশিপ থাকা সত্ত্বেও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপকদের তথা কাউন্সিল অফ এডুকেশনের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে হয়ছিল, যদিও কার্যনির্বাহী প্রিন্সিপালের সম্মতি ছিল ভর্তির ব্যাপারে।
ভারতের মহিলাদের মেডিক্যাল প্রয়োজন মেটানোর জন্য ১৮৭২ সালেই মাদ্রাজের সার্জন জেনারেল ডঃ বালফোর মেয়েদের মেডিক্যাল শিক্ষার পক্ষে জোরালো মতামত দেন। কিন্তু, ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের কলেজ কাউন্সিলের মতো, মাদ্রাজের ডিরেক্টর অফ পাবলিক এডুকেশন এ প্রস্তাব বাতিল করে দেন “entirely premature” বলে। “The proposal was vetoed for the time being.” ১৮৭৪ সালে ডঃ বালফোর পুনরায় এ প্রস্তাব রাখেন, এবং এ সময় মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডঃ ফারনেল-এর কাছ থেকে সম্পূর্ণ সমর্থন পান। ১৮৭৫ সালে ৪ জন ছাত্রী ভর্তি হয়। এদের সবাই ইউরোপীয় অথবা অ্যাংলো-ইউরোপীয় ছিল। এই ৪ জন “certificate class”-এ (৩ বছরের কোর্স, পরে বাড়িয়ে ৪ বছরের করা হয়েছিল।) ভর্তি হ্য। “These four students were the first real women medical students in India”। (Margaret Balfour and Ruth Young, The Work of Medical Women in India, 1929, পৃঃ ১০৩)
এই ৪ জনের একজন ছিলেন ব্রিটিশ নারী Mary Scharlieb। তিনি মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এলএমএস পাস করেন। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড এবং ভিয়েনায় লেখাপড়া করে এমবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের বন্ধু ছিলেন। ভারতে নারীদের দুরবস্থার, বিশেষ করে মেডিক্যাল সংক্রান্ত ব্যাপারে, রাণী ভিক্টোরিয়ার সাথেও সাক্ষাৎ করে তাঁকে অবহিত করেন। ১৮৮২ সালে প্রকাশিত হয় Elizabeth Francis Hoggan (এমডি)-এর লেখা Medical Women for India। এই বইয়ে লেখিকা বলেন যে মাদ্রাজে মেডিক্যাল শিক্ষার দরজা মহিলাদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে এবং মহিলারা উৎসাহ নিয়ে শিখছে। তখনও ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ মানচিত্রে স্থান পায়নি।
অবশেষে ১৮৮৩-৮৪ সালের রিপোর্টে বলা হল – “The admission of females to the classes of the Medical College during the year under report marks a new stage in the history of medical education in
Bengal.” (GRPI 1883-84, পৃঃ ১১৩) কিন্তু এর পশ্চাদপটে যে ইতিহাস রয়েছে তা দীর্ঘ সংগ্রামের, অসুখকর। এই রিপোর্টেই বলা হয় – ১৮৭৬ সালে প্রথম নারীদের মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষালাভের প্রসঙ্গ ওঠে। তদানীন্তন বাংলার লেফটন্যান্ট গভর্নর Sir Richard Temple এর পক্ষে ছিলেন। কিন্তু কার্যকরী হয়না। ১৮৭৯ সালে আবার এ বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু সে আলোচনাও বিফলে যায়। ১৮৮১ সালে মেডিক্যাল কলেজের কলেজ কাউন্সিলের কাছে প্রস্তাবটি রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে ছাত্রীদের অভিভাবকেরাও (বিশেষ করে কাদম্বিনীর শিক্ষক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি) ছাত্রীদের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করার ব্যাপারে আন্দোলন শুরু করেন। “The Council, however, refused sanction to the proposal on various grounds, the most solid being the undesirability of reducing the standard of qualification for admission to the college; one of the points in the proposal having been that women should be admitted after passing the Entrance examination only.” এরপরে সরকারের তরফে হস্তক্ষেপ করা হয়। এবং ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদেরও একই মানের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। শুধু তাই নয়, ৫ বছরের জন্য মাসে ২০ টাকা করে “special female scholarship”-এর ব্যবস্থা করা হয়। “In some subjects the young ladies attend separate, in others common lectures. All classes worked most successfully, and not a single hitch or difficulty has occurred.” (GRPI 1883-84, পৃঃ ১১৩)
এর বেশ ক’বছর আগে, ১৮৭৫ সালে, ব্রাহ্ম নীলকমল মিত্র মেডিক্যাল কলেজে Hospital Assistant কোর্সে ভর্তি হবার জন্য তাঁর নাতনি বিরাজের হয়ে আবেদন করেন। আবেদন নাকচ হয়। (West Bengal State Archives, Finance (Education), File no. 42, Proceedings 2-5, April 1875, pp. 103-105)
এরপরে ১৮৮২ সালের গোড়ায় অবলা দাস এবং Ellen Barbara D’Abreu-কে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করার সুপারিশ করে ডিরেক্টর অফ পাবলিক এডুকেশন A. W. Croft কলেজের প্রিন্সিপাল Dr. J. M. Coates-কে একটি চিঠি লেখেন। চিঠির মর্মার্থ ছিল, মানুষের দুর্দশা মোচনের জন্য এদের মেডিক্যাল শিক্ষার অনুমতি দেওয়া হোক। (West Bengal State Archives, Letter from DPI to the Principal, Medical College, Calcutta, proposing admission of women, 5th May, 1882) কিন্তু যথারীতি, যেমন আমরা আগেই জেনেছি, কলেজ কাউন্সিল এর বিরোধিতা করে। (WBSA, General Education, 10th June, 1882) কাউন্সিলের অভিমত ছিল – (১) জনসমাজে মহিলা ডাক্তারের জন্য আলাদা করে কোন চাহিদা নেই, এবং (২) কলেজে ছেলে-মেয়ে একসাথে ক্লাস করলে নৈতিক অধঃপতন হবার সম্ভাবনা প্রবল।
কলেজের প্রিন্সিপাল ডঃ কোটস ফ্রান্স, সুইৎজারল্যান্ড এবং আমেরিকার অভিজ্ঞতার নিরিখে জানান যে এসমস্ত ধারণা অমূলক। (Bethune School & College, Centenary Volume 1849-1949, ed. Kalidas Nag, পৃঃ ৪৩) মেডিক্যাল কলেজের মিডওয়াফারি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ হার্ভেও মহিলাদের শিক্ষার স্বপক্ষে জোরালোভাবে প্রিন্সিপালকে সমর্থন করেন। মেটেরিয়া মেডিকা এবং ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের একজন ভারতীয় অধ্যাপক রুদ্রচন্দ্র চন্দ্র নারীশিক্ষার প্রবল বিরোধী ছিলেন। তাঁর বিরোধিতা অত্যন্ত তীব্র ছিল।
এবারে বাংলার তৎকালীন লেফটন্যান্ট গভর্নর Sir Augustus Rivers Thompson হস্তক্ষেপ করেন। এবং দৃঢ়ভাবে জানান যে ছেলেদের মতো একইভাবে, একই পদ্ধতিতে ছাত্রীরাও কলেজে ভর্তি হতে পারবে। মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার দরজা উন্মুক্ত হল নারীদের জন্য। অবশেষে ১৮৮৩ সালে কাদম্বিনী কলেজে ভর্তি হলেন। মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ছাত্রী।
এখানে সঙ্গত প্রশ্ন উঠবে যে কেন কলকাতার প্রথম মেডিক্যাল কলেজে মহিলাদের মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রে এত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হল? আমি ওপরে এ বিষয়ে বেশ খানিকটা আলোচনা করেছি। তবে এক্ষেত্রে আমার জ্ঞানত মেডিক্যাল কলেজে মহিলাদের শিক্ষা নিয়ে সবচেয়ে সংহত এবং চিন্তাসমৃদ্ধ আলোচনা হয়েছে সমিতা সেন এবং অনির্বান দাসের প্রবন্ধ “A History of the Calcutta Medical College and Hospital, 1835–1936” (in Science and Modern India: An Institutional History, c. 1784-1947, ed. Uma Dasgupta, 2011, পৃঃ ৪৭৭-৫২২)। এই প্রবন্ধে বলা হয়েছে – “The notion of an irreducible physiological divide between the male and the female underpinned gender difference; and the assertion of masculine superiority presupposed the impossibility of a feminine gaze.” এর পরিণতিতে – “the discursive space of the medical classroom required exclusively male participation. The admission of women into that space, subjecting the male body to the female gaze, even if it was a ‘scientific’ scrutiny, was an especially threatening prospect.” (পৃঃ ৪২২) এঁদের মূল্যবান পর্যবেক্ষণ – “The question of equal ‘rights’ or equal access to education and employment opportunities found little space in this discourse.” (পৃঃ ৪৯৯) কথাগুলো বিবেচনার দাবী রাখে।
১৮৮৬-৮৭ সালের শিক্ষাবর্ষের রিপোর্টে জানানো হল ২১ জন পরীক্ষার্থী ফার্স্ট এলএমএস পরীক্ষায় বসেছিল। এদের মধ্যে ৫২% (১১ জন) পাস করেছে। সেকেন্ড এলএমএস পরীক্ষায় ২৬ জনের মধ্যে ৬৯% (১৮ জন) পাস করেছে। ফার্স্ট এমবি পরীক্ষায় পাসের হার ২১% – ৩৮ জনের মধ্যে ৮ জন পাস করেছে। সেকেন্ড এমবি পরীক্ষায় পাসের হার ৭১% – ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন পাস করেছে। ৪ জন দেশীয় দাই মিডওয়াইফারি পাস করেছিল। এবং ৮ জন “pupil nurses” মিডওয়াইফ হিসেবে পাস করেছিল। (GRPI 1886-87, পৃঃ ৬৬)
রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে – মহারাণী স্বর্ণময়ী হোস্টেলের অর্ধেক কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। যে মহিলারা মেডিসিন পড়ছে তারা এই হোস্টেলে বাস করছে এবং হোস্টেলটি Managing Committee of the Countess of Dufferin Fund-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। হোস্টেল রক্ষণাবেক্ষণের অর্ধেক খরচ সরকার দিচ্ছে, অর্ধেক দিচ্ছে Branch Committee। নতুন কোন ছাত্রী ভর্তির খবর এই শিক্ষাবর্ষে নেই। একটি নতুন ডিসেকটিং রুম স্যাংকশনড হয়েছে, কিন্তু তৈরি হয়নি। কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্টে নতুন যন্ত্রপাতি বসেছে, এবং “new evaporating closets have been put up.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৬)
“Female Education” বিভাগে জানানো হল – সর্বমোট ২৪ জন তরুণী ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষালাভ করছে। এরা কলেজের পরিবর্তিত নিয়মের ফলে (ওপরে বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে) পড়াশুনো করতে পারছে। এদের মধ্যে ৬ জন ইউরোপীয় এবং ১৫ জন ইউরেশিয়ান। F.A পরীক্ষা পাস করে ৩ জন ভারতীয় নারী কলেজের ইউনিভার্সিটি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে মেডিক্যাল কলেজে মোট ছাত্রী সংখ্যা হয়েছে ২৪ জন। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৫)
১৮৮৭-৮৮ সালের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে – সামরিক রেজিমেন্টের ডিউটির জন্য ৭ জন হসপিটাল অ্যাপ্রেন্টিস কলেজ ছেড়ে রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছে। ৫ জন বর্মার ছাত্র পাস করে বর্মায় ফিরে গেছে। (GRPI 1887-88, পৃঃ ৭৮)
এই রিপোর্টের সবচেয়ে আনন্দের এবং উল্লেখযোগ্য খবর হচ্ছে ফার্স্ট এমবি পরীক্ষায় ২ জন ১ম বিভাগে এবং ৭ জন ২য় বিভাগে পাস করেছিল। সবার শীর্ষে ছিলেন ছাত্রী ভার্জিনিয়া মেরি মিত্র। (GRPI 1887-88, পৃঃ ৭৮)
রিপোর্টে আরও জানানো হল – ৪৯ বছর কলেজের প্রথম পরীক্ষা থেকে এই শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ২৬৪ জন হসপিটাল অ্যাপ্রেন্টিস প্রশিক্ষণ পেয়েছে। ৮০৫ জন ছাত্র ডিগ্রি কিংবা লাইসেন্স পেয়েছে মেডিক্যাল প্র্যাকটিসের জন্য। এরা সার্জারিও প্র্যাকটিস করতে পারতো। এই ৮০৫ জন ছাত্রের মধ্যে ২৬ জন সিংহলী, ৬ জন বর্মার এবং ৭৭৩ জন বাঙালি ছাত্র ছিল। ৭ জন দেশীয় দাই ইডেন হাসপাতাল থেকে মিডওয়াফারি পাস করেছে, যেখানে বিগত ২ বছরে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪ এবং ৩। ১৬ জন “pupil nurses” মিডওয়াইফারি পাস করেছে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৮)
মহারাণী স্বর্ণময়ী হোস্টেলে ১৪ জন আবাসিক ছিল। ১৪ জনের মধ্যে ৬ জন ইউরোপীয়, ৩ জন ইউরেশিয়ান এবং ৫ জন দেশীয়। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৪)
১৮৮৮-৮৯ সালের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে – “Mrs. Ganguli, B.A., (কাদম্বিনী) has passed the special certificate examination.” (GRPI 1888-89, পৃঃ ৫৬)
এখানেও এক বেদনাবিধুর প্রত্যাখ্যানের কাহিনী আছে। আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারছি – “কাদম্বিনী মেডিক্যাল কলেজে পাঠ রীতিমত শেষ করিয়া শেষ পরীক্ষায় উপস্থিত হইলেন। তিনি মেডিক্যাল কলেজের পাঠ্য বিষয়ের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়া পাশ নম্বর পাইলেন, কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে সে সময়ে এক বাঙ্গালী অধ্যাপক (ডঃ রুদ্রচন্দ্র চন্দ্র) ছিলেন। তিনিনারীশিক্ষার ঘোর বিরোধী ছিলেন। অধীত বিষয়ের কার্যকরী জ্ঞানের পরীক্ষার (practical examination) তিনি একটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় নম্বর দিলেন না।” (প্রভাতচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়, বাংলার নারী-জাগরণ, ১৯৪৫, পৃঃ ৮৯) ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তিনি এমবি ডিগ্রি পেলেন না, বঞ্চিত হলেন।
এদিকে কলেজের অধ্যক্ষ বিলক্ষণ জানতেন যে কাদম্বিনীর ঐ বিষয়ে যথেষ্ট দক্ষতা আছে। কিন্তু পরীক্ষকের অভিমতের বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা তাঁর ছিলনা। “কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হইবার পুর্বে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদিগকে গ্র্যাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ (জি, বি, এম, সি) উপাধি অধ্যক্ষই দিতেন, সে অধিকার বন্ধ করিয়া কোনও আইননামা হয় নাই। সে জন্য যদিও বহু দিন ওই উপাধি কাহাকেও দেওয়া হয় নাই, তবুও এ ক্ষেত্রে তিনি কাদম্বিনীকে উহা প্রদান করিয়া তাঁহাকে চিকিৎসা করিবার অধিকার দিলেন ও মহিলাদের জন্য নির্দ্দিষ্ট ইডেন হাসপাতালের চিকিৎসক নিযুক্ত করিলেন।” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮৯)
কিন্তু দ্বারকানাথ এ ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। আমরা পরের অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করব।
১৮৮৯-৯০ সালের রিপোর্টে জানানো হল – মেডিক্যাল স্কুলের সংখ্যা ৮ থেকে কমে ৭ হয়েছে, কারণ ক্যালকাটা স্কুল অফ হোমিওপ্যাথির বাৎসরিক রিটার্ন জমা পড়েনি। এর অর্থ হল, সে সময়কালে হোমিওপ্যাথিও সরকারি অর্থানুকূল্য পাচ্ছে। মেডিক্যাল স্কুলের সংখ্যা কমলেও মেডিক্যাল ছাত্রদের মোট সংখ্যা ৯৯৯ জন থেকে বেড়ে ১,০১৬ জন হয়েছে। (GRPI 1889-90, পৃঃ ৬৮)
ফিমেল সার্টিফিকেট কোর্স ১৯ জন ছাত্রী নিয়ে এই শিক্ষাবর্ষে শুরু হয়েছিল। এরপরে প্রাথমিক পরীক্ষা পাশ করে আরও ৪ জন যোগ দেয়। এদের মধ্যে ১১ জন ৩ বছরের কোর্স শেষ করে পরীক্ষায় পাশ করে। ১ জন পড়া মাঝপথে বন্ধ করে দেয়। ফলে বছর শেষে ১১ জন ছাত্রী ছিল। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৯)
ইডেন হাসপাতাল থেকে ৯ জন দেশীয় দাই মিডওয়াইফারি পরীক্ষায় certificate qualification পেয়েছিল। আগের ২ বছরে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬ এবং ৭। ১১ জন “pupil-nurses” মিডওয়াইফ হিসেবে পাশ করেছিল।
স্বর্ণময়ী হোস্টেলে ১৭ জন আবাসিক ছিল – ৫ জন ইউরোপীয়, ৬ জন ইউরেশিয়, এবং ১ জন হিন্দু। এদের মধ্যে ৪ জন বিশ্ববিদ্যালয় মানের পড়ায় ছিল, ১০ জন সার্টিফিকেট কোর্সে ছিল (আরেকবার স্মরণ করানোর জন্য, বিশ্ববিদ্যালয় মানের অর্থ পুরো ৫ বছরের পড়াশুনো, সার্টিফিকেট কোর্স ছিল ৩ বছরের সংক্ষিপ্ত কোর্স), এবং ৩ জন ক্যাম্পবেল স্কুলে পড়ছিল। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৯)
“ফিমেল এডুকেশন” বিভাগে রিপোর্ট করা হল – “The most noticeable event in the history of female education in Bengal was the admission of two young native ladies to the degree of Bachelor of Medicine during the year under report. Both these ladies entered the Medical College as regular students alter passing the First Arts examination, and Miss Bidlhu Mukhi Bose and Miss Virginia Mary Mitter are to be congratulated on their success. Another young lady passed the Preliminary Scientific L.M.S. examination. Eleven young ladies of the certificate class of the Medical College also obtained the college license to practise medicine and surgery. The number that remained in the certificate class at the close of the session was 11.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৮)
১৮৯০-৯১ সালের রিপোর্টে জানছি যে আইন নিয়ে পড়াশুনো এক “crowded condition”-এ আছে। কিন্তু মেডিসিন এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা “matter of congratulations”। (GRPI 1890-91, পৃঃ ১০)
ফিমেল সার্টিফিকেট কোর্সের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে – (১) “Students will now be required to have passed the Entrance examination of the Calcutta or some other University” এবং (২) “the course of study is to be extended from three years to four”। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৮)
এ শিক্ষাবর্ষে নারীশিক্ষার একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রিন্সিপাল ডঃ জে এম কোটস অবসর গ্রহণ করেন। ১৭ জন ছাত্রী ফিমেল সার্টিফিকেট কোর্সে পড়ছিল। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৮)
স্বর্ণময়ী হোস্টেলে গত সেশনের ১৭ জন আবাসিক থেকে কমে এবারে ১৩ জন আবাসিক ছিল – ৫ জন ইউরোপীয়, ৫ জন ইউরেশিয় এবং ৩ জন বাঙ্গালি। বিশস্ববিদ্যালয় মানের পড়শুনো করছিল ৩ জন, সার্টিফিকেট কোর্সে ৭ জন এবং ৩ জন ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে পড়ছিল। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৯)
আরেকটি তথ্যসূত্র থেকে জানা যাচ্ছে – “মেডিক্যাল কলেজে ২৪ জন ছাত্রী ছিল। এদের মধ্যে ৫ জন ইউনিভার্সিটি ডিগ্রির জন্য পড়ছিল, ১৯ জন স্পেশাল সার্টিফিকেট কোর্সের ছাত্রী ছিল।” (Accounts and Papers: Forty-Four Volumes, Session 11 February 1890 – 18 August 1890, Volume LIV, পৃঃ ৩৪)
১৮৯১-৯২ সালে নারীশিক্ষা বিরোধী শিক্ষক ব্রিগেড-সার্জেন আর সি চন্দ্র অবসর গ্রহণ করেন। সেশনের শেষে মিলিটারি ক্লাসে ৮২ জন ছাত্র এবং ফিমেল সার্টিফিকেট ক্লাসে ১৭ জন ছাত্রী ছিল। (GRPI 1891-92, পৃঃ ৭৭) এখানে প্রশ্ন আসে, মিলিটারি ক্লাস তো অনেক বছর আগে পাটনার বাঁকিপুরে টেম্পল স্কুলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাহলে কি সামরিক প্রয়োজনে নতুন করে মেডিক্যাল কলেজে মিলিটারি ক্লাস চালু হয়? রিপোর্টে এর কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
(GRPI 1891-92, পৃঃ ৭৮)
ওপরের চিত্র থেকে বোঝা যায় প্রাথমিক এমবি পরীক্ষায় এবং ফাইনাল এমবি পরীক্ষায় উভয়ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা ছিল।
৭ জন দেশীয় দাই ইডেন হাসপাতাল থেকে মিডওয়াইফারি পাশ করেছে। ১৩ জন “pupil-nurses” মিডওয়াইফ হয়েছে। স্বর্ণময়ী হোস্টেলে ১৫ জন আবাসিক ছিল – ৮ জন ইউরোপীয়, ৫ জন ইউরেশিয়, ১ জন ব্রাহ্ম এবং ১ জন ব্রাহ্মণ। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৮)
১৮৯৭-৯৮ সালের রিপোর্টে জানানো হল – “ln the female certificate class 10 female students remained over from the previous year, 5 were newly admitted, and 1 was received from the mat1iculated class. Two passed the examination and gained certificates, and 4 ceased to attend. The number of students in the class at the end of the year was therefore 10.” (GRPI 1897-98, পৃঃ ৮৮) অর্থাৎ একটি বছরে ৫ জন নতুন ছাত্রী ভর্তি হয়েছে।
১৮৩৮-৩৯ সালে মেডিক্যাল কলেজে প্রথম পরীক্ষা হবার পর থেকে ১৮৯৬-৯৭ সাল পর্যন্ত ১,৪৭৯ জন ছাত্র-ছাত্রী কলেজ থেকে পাশ করেছে – ডিগ্রি কিংবা লাইসেন্স পেয়েছে মেডিসিন এবং সার্জারি (এরসঙ্গে ধাত্রীবিদ্যাও যুক্ত হবে) প্র্যাকটিস করার জন্য। ১,৪৭৯ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৩০ জন সিংহলী, ৪০৬ জন বিভিন্ন প্রদেশের মিলিটারি ক্লাসের ছাত্র, ১০ জন ব্ররম দেশের এবং ১,০৩৩ জন বাঙ্গালি ছাত্র ছিল। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮৮)
এছাড়া আরও জানানো হল – “Fourteen pupil-nurses passed out as midwives. Fifteen native dais passed in Midwifery from the Eden Hospital during the year, and received certificates of qualification. There were 17 boarders in the Maharani Surnomoyee Hostel. Of these 5 were Europeans, 9 Eurasians, and 3 Native Christians.” (প্রাগুক্ত) রিপোর্ট অনুযায়ী, এই শিক্ষাবর্ষে হোস্টেলে কোন বাঙ্গালি ছাত্রী নেই। নীচে কলেজের ছাত্রীদের লিস্ট দেওয়া হল।
(GRPI 1897-98, পৃঃ ৮৯)
সে সময়ে পাশ করা ছাত্রীরা কে, কোথায় কি ধরণের চাকরি করছেন নীচে তার লিস্ট দেওয়া হল।
(GRPI 1897-98, পৃঃ ৮৯)
এই লিস্ট থেকে বোঝা যায় যেসব মহিলা চিকিৎসকেরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন তাঁরা কত বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের পেশাগত কাজ দায়িত্ব নিয়ে সামলাচ্ছেন। মেডিক্যাল কলেজের এক নতুন অধ্যায়ের উনবিংশ শতকীয় বৃত্তান্ত সমাপ্ত হল। পরের অধ্যায়ে আমরা ভারতের প্রথম মহিলা তথা বাঙ্গালি চিকিৎসক সুবিখ্যাত কাদম্বিনী গাঙ্গুলিকে মিয়ে পৃথকভাবে আলোচনা করব। বোম্বের আনন্দিবাই জোশিও কাদম্বিনীর সাথে একই বছরে পাশ করেছিলেন এবং এমডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তবে তাঁর লেখাপড়া আমেরিকার Women’s Medical College of Pennsylvania (ফিলাডেলোফিয়া) থেকে, ভারতে নয়।
ধন্যবাদ। তথ্য সমৃদ্ধ লেখা👌
গৌরবময় ইতিহাস
Dear Jayanta
As usual, your article is full of information backed by your hardwork digging out our own history. The importance of female freedom and education somehow remained neglected for a long time in our country. Hope the present generation is going to take us forward.
Thanks once again.
Thank you, Nahar!
জয়ন্ত – খুব ই পরিশ্রমী, তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। ১৫০ বছর আগের Calcutta University r Vice Chancellor Alexander Arbithnot er assessment regarding female students তেমন অবাক করা, আরও অবাক করা পজিটিভ মন্তব্য তার ও ২১ বছর আগের James Mill er. আর একটা তথ্য দেখে খুব অবাক হলাম যে – রাধাকান্ত দেব ছিলেন গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কারের স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক পুস্তিকা র পৃষ্ঠপোষক। রাধাকান্ত দেবকে বিদ্যাসাগর বিরোধী বলেই জানি। একটু অবাক লাগছে।
আরেকটি বিষয় জানতে চাই। কাদম্বিনী বা দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় কি ব্রাহ্ম মনোভাবাপন্ন ছিলেন প্রকাশ্যে ?
বিপাশা, কাদম্বিনীর জন্ম ব্রাহ্ম পরিবারে। দ্বারকানাথ ব্রাহ্মসমাজের সবচেয়ে উৎসাহী সংগঠকদের একজন। সাথী ছিলেন শিবনাথ শাস্ত্রী।
ফলে দুজনেই ব্রাহ্ম ছিলেন।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। এই সিরিজের লেখাগুলি তে সত্যিই ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকটিকে বিশদে তুলে ধরা হয়েছে।
Immensely researched write up
The whole extrapolation from it is, how important is women’s education in society, in whatever area of education.
It makes an educated mother to bring up children in a dynamic environment and propagates education further in next generations
Ext
অত্যন্ত তথ্যসমৃদ্ধ লেখা, দীর্ঘ পরিশ্রম দ্বারা প্রস্তুত সিরিজ গুলি আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধ্যবাদ, অনেক অজানা তথ্য জানতে পারি।
Dear Jayanta — your serial is going well with inputs of facts not well known to most of us.One question should we not consider Anglo Indian candidates also as one of us. Just because they are of mixed genetic constitution — to consider them non Indian — even in our much hyped progressiveness — is a persistent anachronism in Indian Marxist ideology.. What happened to Miss D’Abrue of Calcutta — who went along with Miss Abala Das to MMC to study Western Medicine. We write volumes on D’rosio (? D’Rosario) or on Kabiwal Anthony Firingi ; but there were many such eurasians even Armenians in Calcutta — who contributed in their meagre way — which made Calcutta Society , a much splendored mass of humanity– we boast about today. Miss Abala das — later known as Lady Abala Basu as wife of Sir Jagdish Ch. Bose — came back in 3rd. year of her study — because she couldn’t adjust with alien atmosphere of South Indian milieu and its food — so different from Bengali gastronomy. You have touched many occasions — involvement of Brahmo Samaj in the topics covered. I have a feeling — most of the readers have vague Concepcion of Brahmo Samaj.as a monolithic body. It was only an apparent view. It was as splintered in their philosophical way of life as todays Socialists or Marxists. — on the whole it ia GOOD READ & like all GOOD READS throws up many questions — all of which may not be answered in short sentences. — till then WE READ — YOU PEN– n.da.
Anobaddo. Vison vabe tathho samridhho lekha. 👌👌🙏🙏