যদি স্বাধীন দেশের একজন নাগরিককে দেখে,
আরেকজন স্বাধীন নাগরিক ভয়ে পেছোতে থাকে দূরে তার থেকে,
সেটা ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ, জাত, রাজনীতি, যা কিছু কারণেই হোক,
তাহলে সেই দেশে ‘স্বাধীনতা’ ভুল এক সংজ্ঞাজ্ঞাপক।
আর যদি সেই ভয় নিশ্চিন্তে রাষ্ট্রকে সে না বলতে পারে,
স্বাধীনতা ছেড়ে দাও, আসলে সে দেশ ভেবে থাকে কারাগারে।
যদি গরীব পুরোহিতের মেধাবী ছেলেটিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট লুকিয়ে ফেলতে হয়
যাতে সে স্কুলের ঘন্টাবাদকের চাকরিটা পাবে,
যদি দুলে বাগদির ইস্কুলে ফার্স্ট মেয়েটারও ডাক্তারিতে না ঠাঁই হয়,
দামী টিউশনি আর অনলাইন কোর্সগুলো করার অভাবে,
আর এদের বদলে সুদূর রাজস্থানে কোটা’য় ভর্তি হওয়া ধনীর সন্তান
হাসতে হাসতে পায় নিচু -জাত-কোটা,
তাহলে সেই দেশে স্বাধীনতা শুধু ধনীদের।
গরীবের কাজ শুধু জাতীয় সঙ্গীত হলে বসা থেকে ওঠা।
যদি ধর্মে মুসলমান হলে কোনো স্বাধীন নাগরিকের বাড়িভাড়া পেতে অসুবিধা হয়,
যদি হিন্দি মাতৃভাষা বলে, দাক্ষিণাত্যে কোনো স্বাধীন পরিযায়ী শ্রমিকের মনে জেগে থাকে জীবিকা হারানোর ভয়,
যদি দলিত আর ব্রাহ্মণ স্বাধীন নাগরিকের আলাদা হয় মন্দিরে প্রবেশের অধিকার,
যদি ঐতিহ্য আর কুপ্রথাকে ইচ্ছে করে গুলিয়ে ধর্ম ও জাতের বিভাজন হয় ভোটে জেতার হাতিয়ার,
যদি মেধার থেকে জন্ম অগ্রাধিকার পায় শিক্ষা চাকরি আর বাকি সব কিছু ব্যবস্থাপনায়,
যদি গণতন্ত্রটি ক্রমে শাসকের দিকে ঝুঁকে, নিশিদিন মেতে থাকে তাঁর ভজনায়,
যদি বিরোধিতা করা মানে দেশদ্রোহিতা হয়, শাসকের নিন্দাতে ঘর ভেঙে দিয়ে যায় বুলডোজারে,
যদি বিচার বধির হয় গরীবের আর্জিতে, ধনীরা উকিল দিয়ে অনায়াসে গরিমসি কিনে নিতে পারে…
তাহলে স্বাধীনতা বলে অভিধানে যেই মানে লেখা আছে,
কবেই গিয়েছে হয়ে সেটা বিকৃত।
দাঁড়াও , দাঁড়াও! শেষের শব্দটাতে ভুল কিছু হলো? ‘বিকৃত’, নাকি ওটা হবে ‘বিক্রীত’?
‘নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি পিতঃ’, ভুল স্বপ্নের থেকে করো জাগরিত।