(সূত্রের জন্য পূর্ববর্তী অংশের লিংক – https://thedoctorsdialogue.com/indoctrination-and-teaching-of-medical-students-in-charaka-and-susutra-samhita/)
শিক্ষালাভের পরে চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ
আগের অধ্যায় শেষ করেছিলাম এই বলে – “উপনয়ন এবং শিক্ষালাভ করার পরে ছাত্ররা/শিষ্যরা কীভাবে হাতে-কলমে চিকিৎসাবিদ্যার ব্যবহারিক প্রয়োগ শিখবে, পরের অধ্যায়ে আমরা এ বিষয়ে আলোচনায় যাব।” – এ কথা বলে।
এ প্রসঙ্গের ধারাবাহিকতায় বলা যায় চরক-সংহিতা-য় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশের দিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে – “জ্ঞানবানগণের সম্বন্ধে পরীক্ষা দুই রকমের – প্রত্যক্ষ ও অনুমান। এ দুটিকে এবং উপদেশকেও পরীক্ষা বলা হয়। ফলে উপদেশ-কে ধরে পরীক্ষা তিন রকমের। পূর্বে যে দশ প্রকার বিষয় (কারণ, করণ, কার্যযোনি – বিকৃত হয়ে কার্যত্ব প্রাপ্ত হয়, কার্য, কার্যফল, অনুবন্ধ (continuity of result) – কার্য কৃত হবার পরে ফল উৎপন্ন হয় এবং ফলোৎপত্তির পরে অনুবন্ধ হয়ে থাকে, দেশ, কাল, প্রবৃত্তি ও উপায় – বিঃ ৮.৬৮) … এইভাবে কারণ ইত্যাদি দশটি বিষয় ভিষক্ ইত্যাদিতে আরোপ করে দেখানো হল।” (বিঃ ৮.৮৩)
এর আগে বলা হয়েছে – “চিকিৎসকগণ কেবল আয়ুর্বেদ বিষয়েই বাদ (বিচার) করবেন। অন্য শাস্ত্রীয় বিষয় তাঁদের বাদ (বিচার) কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যেসব বাক্য-প্রতিবাক্য বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করা আছে এবং সেসব বিষয়ে যেসব যুক্তি প্রদর্শন করা আছে, সেসমস্তকিছু সম্যকভাবে বিবেচনা করে সমস্ত কথা বলবেন। অপ্রাকৃতিক, অশাস্ত্রীয়, অপরীক্ষিত, অসাধক ( irrelevant), আকুল (confused) ও অজ্ঞাপক (too sketchy) বাক্য বলবেন না। হেতুপূর্ণ সমুদয় বাক্য নির্দোষ বাদবিগ্রহসমূহই (conflicts of debates) চিকিৎসাবিষয়ে কারণস্বরূপ। এর সাহায্যে বুদ্ধি বর্ধিত হয় এবং নির্মল বুদ্ধির সাহায্যেই সবরকমের কাজের সিদ্ধি হয়ে থাকে।” (বিঃ ৮.৬৭)
যে করে, সেই কারণ, তাকেই হেতু এবং কর্তাও বলা যায়। (বিঃ ৮.৬৯)
কাজ সম্পাদনে যত্নশীল কর্তার উপায় হিসেবে যা কাজ করে তাকে করণ (instrument) বলে। (বিঃ ৮.৭০)
রূপান্তরের পরে যা কার্যে পরিণত হয়, তাকে কার্যযোনি (source of an action) বলে। (বিঃ ৮.৭১)
যে উদ্দেশ্য মাথায় রেখে কর্তা কাজে প্রবৃত্ত হয়, তাকে কার্য বলে। (৮.৭২)
যে উদ্দেশ্যে কাজ করা হয় তার পরিণতিকে কার্যফল বলে। (৮.৭৩)
কাজের ফলে কার্যজনিত শুভ কিংবা অশুভ যে ফলাফল জন্ম নেয় তাকে অনুবন্ধ (an after-effect) বলে। (৮.৭৪)
অবস্থানগত স্থানের নাম দেশ (location)। (৮.৭৫)
কাল হল রূপান্তর। (৮.৭৬)
কার্যনিষ্পাদনের যে চেষ্টা তা হল প্রবৃত্তি (endeavour)। একে ক্রিয়া, কর্ম, যত্ন, কার্যসমারম্ভ-ও বলা হয় (৮.৭৭)
কারণ, করণ ও কার্যযোনি – এই তিনের উৎকর্ষ এবং কার্য, কার্যফল ও অনুবন্ধ ছাড়া অন্য সব সম্যক অভিসন্ধানের (bringing about excellence) নাম উপায় (device)।(৮.৭৮)
এই ১০টি বিষয় আগেই পরীক্ষা করে, কার্যে প্রবৃত্ত হলে ইষ্টসিদ্ধি হয়ে থাকে। (৮.৭৯)
“জ্ঞানবানগণের সম্বন্ধে পরীক্ষা দু’রকমের – প্রত্যক্ষ ও অনুমান। এই দুটিকে এবং উপদেশকেও পরীক্ষা বলা হয়। এভাবে পরীক্ষা দুই প্রকার, অথবা উপদেশ নিয়ে তিনপ্রকার … এরকমভাবেভাবে কারণ ইত্যাদি ১০টি বিষয় ভিষকপ্রভৃতিতে আরোপ করে দেখানো হল; এবং দশ ধরনের পরীক্ষণীয় বিষয়ও আনুপূর্বিক বলা হয়েছে।” (৮.৮০)
“ভূমি ও আতুর (রোগী), এই দুটিকে দেশ বলে বলা হয়েছে। রোগীর প্রকৃতিজ্ঞান এবং ওষুধেরও পরিজ্ঞান (বিশেষভাবে জানা) নিমিত্ত ভূমির পরীক্ষা আবশ্যক … যথা, এই রোগী কোন দেশে জন্মেছে অথবা কোন দেশে বড়ো হয়েছে, কোন দেশে পীড়িত হয়েছে, সেই দেশের মানুষের খাদ্য এরকম, আচারব্যবহার এরকম শক্তি (বল), এরকম সত্ত্ব, এরকম সাত্ম্য, এরকম রুচি, এসব ব্যাধি যে দেশে বেশি হয়, সুস্থতা ও অসুস্থতা – এগুলো সবই বিবেচনা করতে হবে।” (৮.৯২-৯৩)
নজর করলে বুঝবো ২১শ শতকেও ভালো করে রোগীর রোগের ইতিহাস নিতে এর অনেকগুলিই আমরা অনুসরণ করি। এবং এখানেই নিবিড় empirical knowledge-এর গুরুত্ব। আজ থেকে ২০০০ বছর আগেও ছিল, এখনও রয়েছে – যদিও আমরা একে কোন গুরুত্ব দিইনা – যেমনভাবে আদিবাসী বা জনজাতির নিজস্ব প্রাকৃতিক জ্ঞান কিংবা বৃদ্ধ কৃষকের মাটি ও ফসল সম্বন্ধে আজন্মসঞ্চিত জ্ঞান প্রান্তিক হয়ে যায় সদ্য পাশ করা কৃষিবিজ্ঞানীর কাছে।
বলা হয়েছে – “রোগীই চিকিৎসার কাজে দেশ অর্থাৎ আশ্রয় … আতুরের বল পরীক্ষা না করে অল্প বল রোগীকে বলবৎ ওষুধ প্রয়োগ করলে সে ওষুধ সে রোগীকে বিনষ্ট করে … এসমস্ত কারণ বিবেচনা করে চিকিৎসকেরা দুর্বল রোগীকে, বিশেষতঃ স্ত্রীলোকদের অকষ্টকর, মৃদুবীর্য (mild) ও সুখসেব্যবহুল (delicate) ওষুধ প্রয়োগ করে, ক্রমে ক্রমে গুরুবীর্য (heavy), অবিভ্রমকর (not making confusion) ও অবিপত্তিজনক (harmless) ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন … অতএব রোগীকে প্রকৃতিদ্বারা (constitution), বিকৃতিদ্বারা (pathology), দেহসারদ্বারা (predominance of dhātus), সংহনদ্বারা (compactness of the parts of the body), দেহপরিমাণদ্বারা (measurement), সত্ত্বদ্বারা ব্যায়ামশক্তিদ্বারা (power of physical exercise) ও বয়সদ্বারা পরীক্ষা করবে।” (৮.৯৪)[1]
পরে বলা হয়েছে – “প্রমাণ দ্বারাও রোগীর পরীক্ষা করবে। স্ব স্ব অঙ্গুলি প্রমাণুসারে (anthropometry) উচ্চতা, বিস্তার (breadth) ও দৈর্ঘ্যদ্বারা শরীরপ্রমাণ নির্দেশ করছি। যেমন পা চতুর্দশ অঙ্গুলি, জঙ্ঘার (lower legs) দৈর্ঘ্য অষ্টাদশ অঙ্গুলি, পরিণাহ (circumference) ষোড়শ অঙ্গুলি, জানুর (knees) দৈর্ঘ্য চার অঙ্গুলি ও পরিণাহ ষোড়শ অঙ্গুলি, উরুর (thighs) দৈর্ঘ্য অষ্টাদশ অঙ্গুলি এবং পরিণাহ ত্রিশ অঙ্গুলি, অণ্ডকোষের দৈর্ঘ্য ছয় অঙ্গুলি ও পরিণাহ আট অঙ্গুলি, লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ছয় অঙ্গুলি ও পরিণাহ পাঁচ অঙ্গুলি, যোনীর পরিণাহ দ্বাদশ অঙ্গুলি, কটি দেশের বিস্তার ষোড়শ অঙ্গুলি, বস্তির (খুব সম্ভবত urinary bladder অর্থে) শিরোদেশ দশ অঙ্গুলি, উদরের দৈর্ঘ্য দ্বাদশ অঙ্গুলি ও বিস্তার দশ অঙ্গুলি, পার্শ্বদেশের বিস্তার দশ অঙ্গুলি ও দৈর্ঘ্য দ্বাদশ অঙ্গুলি, উভয় স্তনের মধ্যবর্তী স্থান দ্বাদশ অঙ্গুলি, স্তনের প্রান্তভাগ (margins) দুই অঙ্গুলি, বক্ষঃস্থলের (chest) বিস্তার চতুর্বিংশতি অঙ্গুলি ও উচ্চতা দ্বাদশ অঙ্গুলি, হৃদয় তিন অঙ্গুলি (পাঠান্তরে হৃদয় দুই অঙ্গুলি), স্কন্ধ আট অঙ্গুলি, অংস (বাহুর ওপরের অংশ) ছয় অঙ্গুলি, বাহু (arms) ষোড়শ অঙ্গুলি, পাণি (forearms) পঞ্চদশ অঙ্গুলি, হস্ততল (hands) দ্বাদশ অঙ্গুলি, কক্ষ (armpit) আট অঙ্গুলি, ত্রিকদেশের (sacral region) উচ্চতা দ্বাদশ অঙ্গুলি, পৃষ্ঠের উচ্চতা অষ্টাদশ অঙ্গুলি, গ্রীবার উচ্চতা চার অঙ্গুলি ও পরিণাহ বাইশ অঙ্গুলি, মুখমণ্ডলের উচ্চতা দ্বাদশ অঙ্গুলি ও পরিণাহ চব্বিশ অঙ্গুলি, মুখ পাঁচ অঙ্গুলি। চিবুক, ওষ্ঠ, কর্ণ, চক্ষুর মধ্যভাগ (part between the eyes)[2], নাসিকা ও ললাট প্রতিটি চার অঙ্গুলি, মস্তকের উচ্চতা ছয় অঙ্গুলি ও পরিণাহ বত্রিশ অঙ্গুলি … সমস্ত শরীর চুরাশি অঙ্গুলি। সমস্ত শরীরের দৈর্ঘ্য ও বিস্তারের উভয়েরই সমষ্টি চুরাশি অঙ্গুলি। (বিঃ ৮.১১৭)
এখানে লক্ষ্যণীয় – (১) “স্ব স্ব অঙ্গুলি প্রমাণানুসারে (anthropometry) উচ্চতা, বিস্তার (breadth) ও দৈর্ঘ্যদ্বারা শরীরপ্রমাণ নির্দেশ করছি” – এই উক্তির মধ্যে রয়েছে আঙ্গুলের সাহায্যে normalized measurement-এর ধারণা, (২) সে সময়ে পরিমাপের উন্নত পদ্ধতি জানা না থাকায় চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছেন রোগীদের পরিমাপের ক্ষেত্রে নিজ নিজ আঙ্গুল দিয়ে পরিমাপ করে যতদূর সম্ভব নিখুঁত হবার।
একজন মানুষের জীবিতকালের বিভিন্ন সময় নিয়ে মিউলেনবেল্ডকে উদ্ধৃত করে অল্প কথায় বললে – “Three stages of the life cycle are described: bāla (বাল্যকাল), up to sixteen years, dominated by kapha (কফ বা শ্লেষ্মা), and extending to the age of thirty years; madhya (জীবিতকালের মধ্যভাগ), dominated by pitta, up to sixty years; jīrṇa (জীর্ণ বা জীবনের শেষভাগ), dominated by vāta, up to one hundred years, the maximum in the present age of the world.” (৮.১২২)
“আতুর অবস্থাতেও কার্যাকার্য সম্বন্ধে কাল (timely) ও অকাল (untimely) সংজ্ঞা (connotation) হয়ে থাকে। এই অবস্থা এই ওষুধের কাল এবং এই ওষুধের অকাল, অবস্থা বিশেষ অনুসারে এভাবে নিশ্চিত হয় … প্রতিকর্মের অর্থাৎ ব্যাধিপ্রতিকারের সমারম্ভকে (initiation) প্রবৃত্তি (endeavour) বলে। চিকিৎসক, ওষুধ, আতুর অর্থাৎ রোগী ও পরিচারকের ক্রিয়াসংযোগই প্রবৃত্তির লক্ষণ।” (৮.১২৮-১২৯)
“প্রতিপত্তিজ্ঞানই (the ability to make quick and appropriate decisions based on the specific time and situation) পরীক্ষার প্রয়োজন। যে রোগ যেভাবে জানা যায়, সেই রোগের সেই প্রকার অনুষ্ঠানজ্ঞানকে (knowledge of treatment) প্রতিপত্তি বলে।” (৮.১৩২)
এরপরে মিউলেনবেল্ড বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়ে বলছেন – “The types of examination dealt with in the foregoing find their application (prayojana) in a decision on the course of therapeutic action (pratipatti) (8.132). The way to arrive at a decision when symptoms in favour of a particular line of treatment co-exist with symptoms prohibiting this is discussed (8.134). Indications and contraindications for treatment with emetics, etc., will be dealt with in Siddhisthāna (8.133).”[3]
এই অধ্যায়ের শেষে বলা হয়েছে – “বুদ্ধিমান চিকিৎসক যে যে দ্রব্য অযৌগিক (unsuitable) বলে বিবেচনা করবেন, সেসব দ্রব্য ত্যাগ করবেন। এবং যদি কোন অনুক্ত দ্রব্যও (not listed) যৌগিক বলে বিবেচনা করেন, তবে সেই দ্রব্য প্রয়োগ করবেন।” (৮.১৪৯)
তাহলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল বিষয়গুলো হল – (১) নিরন্তর পাঠ, অধ্যয়ন এবং পণ্ডিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সংযোগে থাকতে হবে, (২) অপ্রিয় এবং শত্রুভাবাপন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে সঠিক উপদেশ এলে তা গ্রহণ করা বিধেয়, (৩) রোগীর চিকিৎসার জন্য রোগীর অবস্থানের জায়গা, পরিবেশ, কোন কোন ধরনের ব্যক্তির সংস্পর্শে আসছে, খাদ্যাভ্যাস, দেহের গঠন ও প্রকৃতি (চরিত্র) ইত্যাদি সমস্ত কিছু বিবেচনায় রাখতে হবে, এবং, সংক্ষেপে বললে, (৪) এসমস্ত সামগ্রিক জ্ঞানের ওপরে ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসা করতে হবে।
চরক-সংহিতা-র ৫ম অধ্যায়
চরক-সংহিতা-র ৫ম অধ্যায়ের নাম “স্রোতাসাং বিমানং” অধ্যায়। স্রোতসমূহ দেহের ধাতুসমূহকে physiological পরিবর্তনের সাপেক্ষে (পরিণাম) পরিবহন করে। পরিবাহিত ধাতুরা হলঃ প্রাণ (vital breath), উদক (জল), অন্ন (পাচিত খাদ্য), রস (nutrient fluid), রক্ত, মাংস (muscular tissue), মেদ (fatty tissue), অস্থি (bone tissue), মজ্জা (bone marrow), শুক্র (semen), মূত্র, পুরীষ এবং স্বেদ। (বিঃ ৫..৭)[4]
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শ্লোক হল – “প্রাণবহ স্রোতঃসমূহের মূল হৃদয় ও মহাস্রোতঃ … উদকবহ স্রোতঃসমূহের মূল তালু ও ক্লোম[5] … অন্নবহ স্রোতঃসমূহের মূল আমাশয় (সম্ভবত stomach) ও বামপার্শ্ব।”[6] (বিঃ ৫.৮)
৫ম অধ্যায়ের শুরুতে বলা হয়েছে – “জীবদেহে রস, রক্ত ইত্যাদি যতরকমের মূর্তিমান পদার্থ আছে (যাবন্তঃ পুরুষে মূর্ত্মন্তো ভাববিশেষান্তাবন্ত), সে দেহে তত প্রকার স্রোতও আছে। যেহেতু জীবদেহে স্রোত ব্যতীত সেসমস্ত পদার্থ উৎপন্ন হ্য না অথবা ক্ষয় পায় না।” (৫.৩)
এ জায়গায় এসে আমরা বরেণ্য ফরাসী নৃতাত্ত্বিক ফ্রান্সিস জিমারম্যান-এর পর্যবেক্ষণ দেখে নিতে পারি। জিমারম্যান বলছেন – “The multiplicity of “elements” (bhâva) induces the multiplication of channels. An element is any kind of production occurring with a definite shape; thence comes the notion of an “organized [body]” (mûrtimant), illustrated by the image of a network of channels; mûrti, in that context, may be taken as an equivalent of the Hippocratic concept of physis, nature. In Ayurvedic medicine as well as in the Hippocratic collection, there is no anatomy as such, but a pathology, a conceptual system of fluids, channels and diseases: fluids and channels that symbolize organic functions, and diseases that introduce imbalance and strain.”[7]
জিমারম্যান তাঁর এ ধারণাকে অন্যত্র বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন – “Without the benefit of a knowledge of anatomy and physiology, the doctor … could make no local diagnosis of the disease …. Ecology was an integral part of his practical context. His knowledge of the patient’s environment, including the flora and fauna, enabled the doctor to anticipate the course of the disease and take action on it … a biogeography absorbed into therapeutics … a discourse on the world (natural history) is contained within a discourse on man (medicine).”[8]
এ ধারণার অনুসারী তাঁর আরেকটি পর্যবেক্ষণ হল – “The object of therapeutic intervention is to create a doubly appropriate relationship: to render the environment appropriate to the needs of the patient, and, conversely, to render the regimen of the patient appropriate to the ecological conditions.”[9]
এটুকু পাঠের পরে আমরা নতুন করে উপলব্ধি করতে পারি যে, শরীরে স্রোতবহতা-র যে কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে উদ্ভিদ জগতের মিল আছে। উদ্ভিদে যেমন শেকড় থেকে পাতার প্রতিটি ধমনীতে মাটি থেকে শোষিত প্রাণরস দ্বিমুখী পথে প্রবাহিত হয়, মানুষের শরীরেও সেভাবে প্রাণরস প্রবাহিত হতে পারে। “Biogeography”-র এই ধারণা, জিমারম্যানের ব্যাখ্যানুযায়ী, আত্মীকৃত হয়েছে “therapeutics”-এ। আমাদের মনে হয়, এই অনুমান সঙ্গত। এবং পরিণতি আমরা দেখতে পাই ঋতুসাত্ম্য-র ধারণা এবং সে অনুযায়ী রোগীর চিকিৎসার পদ্ধতিতে “ecological condition”-এর গুরুত্ব।
বিমানস্থান-এর ৫ম অধ্যায়ের অন্য একটি শ্লোকে বলা হল – “শরীরের ধাতুসমূহ যতরকমের লক্ষ্য ও অলক্ষ্য অবকাশ অর্থাৎ গমনপথ আছে তাদের নামগুলো হল এইসব – স্রোতঃ (channels), শিরা, ধমনী, রসায়নী (canal for bodily fluids), রসবাহিনী (?Capilarry), নাড়ী (duct), পথ, মার্গ, শরীরছিদ্র, সংবৃতাসংবৃত (duct closed at one end and openat the other), স্থান (residence), আশয় (container), আলয় (house) ও নিকেত (abode) … বায়ু, পিত্ত ও শ্লেষ্মা, এরাই দোষস্বভাব বশতঃ সমস্ত স্রোতঃ এবং সমস্ত ধাতুকে দূষিত করে থাকে।” (বিঃ ৫.৯)
৬ষ্ঠ অধ্যায়ে (রোগানীকং বিমানাং) বলা হল – “প্রভাবভেদে রোগসমূহ দুই রকমের – সাধ্য (curable) এবং অসাধ্য (incurable)। তীব্রতা (intensity) অনুযায়ী রোগ দুই রকমের – মৃদু (mild) এবং দারুণ (severe)। অধিষ্ঠানভেদে (location) রোগসমূহ দুই রকমের – মনোধিষ্ঠান এবং শারীরাধিষ্ঠান। নিমিত্তভেদে (nature of causative factors) দুই রকমের – ধাতুবৈষম্যজন্য (endogenous) এবং আগন্তুজন্য (exogenous)। আশয়ভেদে (site of origin) দুই প্রকার – আমাশয়জাত (from stomach) এবং পক্বাশয়জাত (origin from intestine)।” (বিঃ ৬.৩)
মিউলেনবেল্ড এ রকমের প্রকারভেদ করাকে “Dual groups of diseases (anīka)” বলছেন।[10]
এবারে আমরা দেখবো, প্রাচীন সময়ে শব্দার্থের বহুরূপ। কারণ সেসময়ে আধুনিক সময়ের মতো শব্দ লক্ষ্যভেদী, context- এবং object-specific হয়ে ওঠেনি। এ বিষয়ে চার্লস সিঙ্গার বিশদে আলোচনা করেছেন।[11]
সিঙ্গার কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন –
(১) Clavicle – “The word means, of course, a little key. It is a Latin translation of the Greek kleidion, diminutive of kleis. No one would now think of comparing the clavicle to a key. In fact, however, that bone bears a striking resemblance, both in shape and size, to the latch-key of a Greek house.”[12]
(২) Nucha – “in Ligamentum nuchae looks like a Greek word but it is, in fact, Arabic. It was taken over by the early medieval translators from Arabic into Latin. The Renaissance purifiers thought that these translators had taken it from the Greek and they therefore let it remain. It was, as it were, protectively coloured. Arabic nukha means the spinal cord and especially the upper end, the medulla oblongata. It thus becomes applied to the neck itself, hence French nuque. Ligamentum nuchae is thus half Latin, half Arabic-a hybrid, the scholar’s horror.”
(৩) “RECTUM is an abbreviation for Intestinum rectum, a Latin term which occurs in Celsus (c. A.D. 30). His work, however, is a translation of a lost Greek original. Celsus, unknown in the Middle Ages, was recovered only in the fifteenth century (first edition, Florence 1478). Nevertheless, the term rectum was used in
the Latin translation of the Arabic work of Ali ibn Abbas (I127, see No. 6) and was adopted in later medieval anatomical writings. It gradually displaced the usual medieval term longaon (from a vulgar Latin word longanum). Rectum was, moreover, used by the Renaissance Latin translators to render Galen’s apeuthysmenon enteron (=’stretched’ or ‘straightened intestine’).”[13]
বিশেষ করে ইউরোপীয় রেনেসাঁ পরবর্তী সময়ে পুরনো শব্দগুলোর প্রাচীন অর্থসমূহ ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়ে ধীরে ধীরে শব্দের বিভিন্নার্থক ব্যঞ্জনা এবং তারল্য হারিয়ে গিয়ে শব্দ লক্ষ্যভেদী, context- এবং object-specific হয়ে উঠেছে। এর আরেকটি উদাহরণ হল GERD (gatro-esophageal reflux disorder) – যা এই নামে গৃহীত হয়েছে ১৯৫৬ থেকে। তার আগে এর প্রকাশ ছিল belching, heartburn, eructation, উদ্গার বা বুকজ্বালা ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে।
এতক্ষণ যা আলোচনা করলাম তার সম্পূর্ণ বিপরীত উদাহরণ আমরা বিমানস্থানে পাবো। বলা হচ্ছে – “সমান শব্দ দিয়ে অভিহিত বিষয়েরও অর্থান্তর আছে। আবার ভিন্ন ভিন্ন শব্দ দিয়ে অভিহিত বিষয়েরও একরকমের অর্থ হয়ে থাকে। যেমন, একটি শব্দ রোগ, দোষ ও ব্যাধি উভয় অর্থেই প্রযুক্ত হয়। দোষসমূহও রোগ, আতঙ্ক, যক্ষ্মশব্দ, দোষপ্রকৃতি শব্দ এবং বিকার শব্দ দিয়ে অভিহিত হয়। আবার ব্যাধিসমূহও রোগশব্দ, আতঙ্কশব্দ, যক্ষ্মশব্দ, দোষপ্রকৃতি শব্দ ও বিকার শব্দ দিয়ে অভিহিত হয়ে থাকে।” (বিঃ ৬.৪)
আশা করি, বিমানস্থান-এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের শেষাংশ মিউলেনবেল্ডের সারানুবাদ দিয়ে শেষ করলে সবার কাছে সহজে বোধগম্য হবে –
“The theory that each human being is endowed with a constitution (prakṛti) dominated by one of the three doṣas, because a perfect equilibrium is never habitually present, is rejected with the argument that health (arogya) is identical with such an equilibrium, also called prakṛiti. Persons described as having vātala, pittala or śleṣmā condition should therefore be regarded as suffering from a disorder. The characteristics of persons considered to be vātala, pittala or śleṣmā are described, together with appropriate treatment. (6.13-18)”[14]
বিমানস্থান-এর ৭ম অধ্যায়ের শিরোনাম “ব্যাধিতরূপীয় বিমান”। প্রাসঙ্গিক কিছু অংশ আমাদের আলোচনায় থাকছে।
বলা হয়েছে – “ব্যাধিত পুরুষ দুই প্রকারের হতে পারে – গুরুব্যাধিত (severe disease) ও লঘুব্যাধিত (mild disease) … যেসব অনভিজ্ঞ বৈদ্য কেবল ভাসাভাসা চোখ দিয়ে রোগের রূপ দেখে গুরু এবং লঘু – উভয়প্রকার ব্যাধির – অবস্থা নিশ্চিত করে (অর্থাৎ উভয়ের মধ্যে ফারাক করতে পারেনা), তাদেরকে ব্যাধির গুরুত্ব ও লঘুত্ব সম্পর্কে হতবুদ্ধি হতে হয়।” (বিঃ ৭.৩)
“যেহেতু আংশিক জ্ঞান দিয়ে সমুদয় জ্ঞেয় বিষয়ে জ্ঞান জন্মাতে পারেনা, রোগজ্ঞানে বিমূঢ় বৈদ্যকে চিকিৎসাবিষয়ক যুক্তিজ্ঞানেও বিমূঢ় হতে হয় … যে চিকিৎসক সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় অবগত হয়ে এবং সবরকমের পরীক্ষণীয় বিষয় যথাসম্ভব পরীক্ষা করে নিশ্চিতরূপে রোগ নির্ধারণ করেন, কোন ক্ষেত্রেই তাঁকে বিপ্রতিপন্ন (confused) হতে হয়না এবং তিনিই অভীষ্ট প্রয়োজন সাধন করতে পারেন।” (বিঃ ৭.৪)
“এই কলিযুগে আয়ুর পরিমাণ একশত বৎসর। কিন্তু একশত বৎসরের অধিক বা কম সময়ও মানুষেরা জীবিত থাকে।” (বিঃ ৮.১২২)
“প্রবৃত্তি (endeavour) হল চিকিৎসার সূচনা। চারটি বিষয়ের সংযোগ এখানে ঘটে – ভিষক বা বৈদ্য, ওষধি, রোগী এবং রোগীর সহযোগী (attendant)।” (বিঃ ৮.১২৯)
“রোগ যে প্রকারে জ্ঞাতব্য, সেই রোগের সেই প্রকার অনুষ্ঠানজ্ঞানকে (knowledge of treatment) প্রতিপত্তি (the ability to make quick and appropriate decisions based on the situation and time) বলে।” (বিঃ ৮.১৩২)
“শাস্ত্র, আচার্য ও শিষ্যের পরীক্ষাকারণ, অধ্যায়নের ও অধ্যাপনের বিধি, সম্ভাষাবিধি, চুয়াল্লিশ ধরনের বাদমার্গের বিষয়, কারণ ইত্যাদি ছাড়াও অন্য দশ রকমের বিষয়, বমন ইত্যাদি কাজে পরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে নয়টি প্রশ্ন – এই সমস্ত বিষয় রোগভিষগজীতিয় অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে।” (বিঃ ৮.১৫২-১৫৪)
চরক-সংহিতা – শারীরস্থান
শারীরস্থান-এর প্রথম অধ্যায়ের নাম “কতিধাপুরুষীয় শরীর”। এখানে পুরুষ-এর সংজ্ঞা দেওয়া আছে – “পাঁচটি মহাভূত – আকাশ (পৃথ্বী), জল, অগ্নি (তেজ), বায়ু, ব্যোম (আকাশ) – ইত্যাদি এবং চেতনা ধাতু, এই ছয় ধাতুর সমবায়কে পুরুষ বলে। একমাত্র চেতনা ধাতু-ও পুরুষ নামে অভিহিত হয়।” (শাঃ ১.১৬)
এই সংজ্ঞা থেকে দুটি বিষয় সামনে আসে – (১) একদিকে যেমন মহাভূত এবং চেতনা ধাতু-র সমবায়কে, (২) তেমনি ভিন্নভাবে চেতনা-কে ধাতুর গোত্রে রাখা হয়েছে।
পরে বলা হয়েছে – “আবার মনঃ, দশটি ইন্দ্রিয়, পাঁচটি ইন্দ্রিয়ার্থ – শব্দতন্মাত্র, স্পর্শতন্মাত্র, রূপতন্মান্ত্র, রসতন্মান্ত্র ও গন্ধতন্মাত্র[15] – এবং আটটি ধাতুময়ী প্রকৃতি (অব্যক্ত, মহৎ, অহংকার এবং পাঁচটি তন্মাত্র – subtle essence or potential of the five senses), এই চব্বিশ রকমের ধাতুর সমবায়কে চতুর্বিংশতিক পুরুষ বলে।” (শাঃ ১.১৭)
“কুম্ভকার ব্যতীত কেবল মাটির দণ্ড ও চক্রদ্বারা ঘট নির্মিত হয়েছে, অথবা গৃহকার ব্যতীত কেবল মৃত্তিকা-তৃণ-কাষ্ঠদ্বারা গৃহ তৈরি হয়েছে, এরকম যে বলতে পারে, যুক্তি-শাস্ত্রজ্ঞানহীন সে ব্যক্তিই কেবল অজ্ঞানতাবশতঃ বলে থাকে – কর্তা ব্যতীত কেবল করণসমূহের সমবায় দিয়ে এই চেতনাবান দেহ তৈরি হয়েছে।” (শাঃ ১.৪৩-৪৪) মিউলেনবেল্ড বলছেন – “The existence of the puruṣa (here identical with ātman), distinct from the body and eternal, and different from the puruṣa as an aggregate, is defended against opponents. (1.37-62)”[16]
উল্লেখযোগ্য “কুম্ভকার ব্যতীত কেবল মাটির দণ্ড ও চক্রদ্বারা ঘট নির্মিত হয়েছে, অথবা গৃহকার ব্যতীত কেবল মৃত্তিকা-তৃণ-কাষ্ঠদ্বারা গৃহ তৈরি হয়েছে” এরকম উপমার মধ্যে প্রকৃতি ও বাস্তু জগতের রূপকল্প আছে। এরকম রূপকল্প আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই দেখতে পাবো। মানুষ ও জীবজগৎ (microcosm) এবং মহাবৈশ্বিক জগৎ (macorocsom) – এই দুয়ের মধ্যেকার ভারসাম্য রক্ষা করা প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি ছিল।
পরে বলা হয়েছে – “যে জলদ্বারা (প্লাবন) পূর্ববর্তী সময়ে শস্য নষ্ট হয়েছিল, সে জল আবার আসতে পারে এই ভেবে যেমন সেতু নির্মাণ করা যায়, সেরকম ভবিষ্যদব্যাধির পূর্বরূপ দেখে যে প্রতিকার করা হয়, সেই প্রতিক্রিয়া অনাগত ব্যাধির নিবারণ করে থাকে। অর্থাৎ এই হল ভবিষ্যদ্ ব্যাধির চিকিৎসা (পূর্ব্বরূপং বিকারাণাং দৃষ্টাং প্রাদুর্ভবিষ্যতাম্) … এইজন্য একজন চিকিৎসক অতীত, বরতমান এবং ভবিষ্য্যৎ – এই তিনকালেরই চিকিৎসা করে থাকেন।” (শাঃ ১.৯০-৯৩)
এই শ্লোকটিও একাধিক কারণে আমাদের ভাবাবে আশা করি – (১) প্লাবন রোধের ক্ষেত্রে সেতু নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, এখনকার মতো নির্বিচারে বাঁধ নয়, (২) এখানেও পূর্বের শ্লোকটির মতো প্রাকৃতিক রূপকল্প ব্যবহার করা হয়েছে মনুষ্যদেহে রোগের স্বরূপ নির্ধারণে, এবং, সর্বোপরি, (৩) “অনাগত ব্যাধির নিবারণ করে থাকে। অর্থাৎ এই হল ভবিষ্যদ্ ব্যাধির চিকিৎসা” – এই শব্দবন্ধ-র মধ্য দিয়ে কী আদি বা proto-preventive medicine-এর ধারণা বহন করা হয়েছে?
শারীরস্থান-এর ২য় অধ্যায়ের নাম “অতুল্যগোত্রীয় শারীর”।
মিউলেনবেল্ড বলছেন – “This title refers to the rule that marriages between the same gotra (clan) should not be contarcted (2.3).”[17]
পরে বলা হল – “শুক্র বায়ু, অগ্নি, ভূমি ও জল, এই চারটি ভূতগুণ (মহাভূত) দিয়ে তৈরি হয় এবং ছয় রসগুণসম্পন্ন (sweet, sour, saline, pungent, bitter and astringent – স্বাদু বা মধুর, অম্ল, লবণ, কটু, তিক্ত এবং কষায়) খাদ্য গ্রহণ করলে শুক্রের উৎপত্তি হয়।” (শাঃ ২.৪)
“A type of pseudo-pregnancy is described caused by vāyu which obstructs (the flow of) menstrual blood. When blood is at last discharged, some people say that because only blood is seen and no trace of a foetus, the latter has been destroyed by an evil spirit (bhūta); this view is rejected for the reason that these evil spirits, who roam during night, are fond of ojas and would have caused fatal damage to the mother’s body too, if they actually had succeded in gaining access to her body (2.8-20)”[18]
শারীরস্থান-এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের নাম “শরীরবিচয় অর্থাৎ শরীরের বিবরণজ্ঞাপক শারীর ব্যাখ্যা”।
এখানে বলা হয়েছে – “শরীরের উপকারের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্রে শরীরবিজ্ঞান প্রয়োজনীয়। শরীরতত্ত্ব জানা থাকলে শরীরের উপকারক বিষয়সমূহে অভিজ্ঞতা জন্মে। এজন্যই পণ্ডিতগণ শরীরবিজ্ঞানের প্রশংসা করেন।” (শাঃ ৬.৩)
বলা হয়েছে – “স্বস্থ ব্যাক্তির (স্বস্থ-র ধারণা নিয়ে আমরা আগে আলোচচনা করেছি) সমধাতুসমূহের সমতা রক্ষার জন্য বিবেচক ব্যক্তিরা তাদেরকে রসগুণবিশিষ্ট আহারবিকার পর্যায়ক্রমী আহার করতে দেন…।” (শাঃ ৬.৭)
চিকিৎসকদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে – “যে চিকিৎসক সবসময় সর্বতোভাবে সর্বশরীরত্ত্ব অবগত থাকেন, তিনিই মানুষের সুখের জন্য আয়ুর্বেদে সম্যকভাবে অবগত হয়েছেন।” (শাঃ ৬.১৯)
এরপরে embryology নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে – “ধন্বন্তরি বলেন, সমস্ত অঙ্গ একসময়েই উৎপন্ন হয়। হৃদয় প্রভৃতি সমস্ত অঙ্গই বস্তুতঃ এক সময়ে উৎপন্ন হয়, এইজন্য ধন্বন্তরির মতই যুক্তিযুক্ত। হৃদয় সমস্ত অঙ্গের মূল এবং কতিপয় ভাবের অধিষ্ঠান। সুতরাং হৃদয়ের আগে কোন অঙ্গই উৎপন্ন হতে পারেনা।” মিউলেনবেল্ড এর সঙ্গে যুক্ত করছেন – “and the seat (adhisṭhāna) of some other constituents (bhāva) (6.21).”[19]
আরও বলা হয়েছে[20] – “The foetus lies in the womb (kukṣi – কুক্ষি) with its face towards mother’s back, its head upwards and limbs folded. In the early stage of its development, the foetus is entirely dependent for its maintenance on upasneha (transudation) and upasveda (conduction of heat) from the mother’s body. Later, upasneha is effected partly through the pores of the hairs (romakūpa) and partly through the vessels in the umbilical cord (nābhināḍyayana). This cord is attached to the navel at one end, to the placenta (aparā) at the other end, and the placenta is connected with the mother’s heart, which fills it with nourishment. (6.23)”
Embryology-র ক্ষেত্রে কেন এরকম ব্যাখ্যা করা হল, সেকথা আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করবো। তবে একটি কারণ অবশ্যই ডিসেকশন-নির্ভর অ্যানাটমি ও ফিজিওলজির জ্ঞানের অভাব। তাসত্ত্বেও অনুসন্ধানী এবং চিন্তাশীল চিকিৎসকেরা বাইরে থেকে যতদূর পর্যবেক্ষণ করে বোঝা সম্ভব তার সম্ভাব্য উপযুক্ত বিবরণ দিয়েছেন আয়ুর্বেদের গ্রন্থিত শাস্ত্রে। যেহেতু দেহের আভ্যন্তরীন অ্যানাটমি একেবারেই অজানা ছিল, একারণে কিছু প্রত্যক্ষ-নির্ভর পর্যবেক্ষণ এবং কিছু যৌক্তিক কল্পনা দিয়ে এরকম একটি বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
মিউলেনবেল্ড খুব সংক্ষিপ্তভাবে মোদ্দা বিষয়টি বলেছেন – “The body is composed of six main parts: the two arms (bāhu), the two legs (sakthi), head and neck, and trunk (antarādhi) (7.5) The bones together with sockets (ulūkhala) of the teeth and the nails, are three hundred and sixty in number (7.6)”[21]
বিভিন্ন ইংরেজি অনুবাদে তথা ভাষান্তরে (যেমন পি ভি শর্মা এবং শর্মা ও দাশ-এর অনুবাদ) terminology-র পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এই সংখ্যাগুলোকে বিভাজন করে দেখিয়েছেন। নমুনাস্বরূপ একটি ইংরেজি অনুবাদ থেকে উদ্ধৃত করছি – “Bones: There are 360 bones including teeth sockets and nails.
They are:
32 teeth
32 teeth sockets
20 nails
60 phalangeal bones of hands and feet
20 metaphalangeal bones of hands and feet
4 metaphallangeal support in hands and feet
2 calcaneum
4 andles (in feet)
2 wrists bones (in hands)
4 forearms
4 legs
2 knee
2 janukapala (knee caps)
2 thighs
2 arms
2 shoulders
2 shoulder blades
2 clavicles
1 xiphisternum
2 palate bones
2 hip bones
1 pubis
45 back
15 neck
14 chest
24 ribs (both sides)
24 rib sockets (both sides)
24 tubercles in rib sockets (both sides)
1 mandible
2 extremities of the mandible
1 nose, zygomatic process and forehead
2 temporals
4 skull bones
360 Total Count”[22]
৭ম অধ্যায়ের শিরোনাম “শরীরসংখ্যা নামক শারীর ব্যাখ্যা (শারীরং ব্যাখ্যাস্যাম)”। একটি শ্লোকে বলা হল – “ইন্দ্রিয়ের অধিষ্ঠান পাঁচটি (five seats of senses) – ত্বক, জিহ্বা, নাসিকা, নেত্রদ্বয় ও কর্ণদ্বয়। বুদ্ধিন্দ্রিয় পাঁচটি (five senses) – স্পর্শন (tactile), রসন (gustatory), ঘ্রাণ (olfactory), দর্শন (visual) ও শ্রবণ (auditory)। কর্মেন্দ্রিয় পাঁচটি (five motor organs) – হস্তদ্বয়, পদদ্বয়, পায়ু (anus), উপস্থ (genitals) ও জিহ্বা। চেতনার অধিষ্ঠান (চেতনাধাতু) হৃদয় একটি।” (৭.৭-৮)
“প্রাণায়তন দশটি (ten seats of life) – মূর্দ্ধা (head), কণ্ঠ (thorat), হৃদয় (heart), নাভি (navel), গুহ্যদেশ (anal region), বস্তি (bladder), ওজঃ (এর কোন সঠিক প্রতিশব্দ নেই, পূর্বে আলোচিত), শুক্র (semen), শোণিত (blood) ও মাংস (muscular tissue)।” (৭.৯)
বাংলা সম্পাদক (ব্রজেন্দ্রচন্দ্র নাগ) এরপরে যোগ করেছেন – “মূর্দ্ধা থেকে বস্তি পর্যন্ত ছয়টি স্থান মর্ম নামে অভিহিত। কোষ্ঠাঙ্গ (viscera) পঞ্চদশটি – নাভি, হৃদয়, ক্লোম, যকৃৎ, প্লীহা, বৃক্কদ্বয় (two kidneys), বস্তি, মলাশয় (পুরীষধার), আমাশয় (receptacle of undigested food), পক্বাশয় (receptacle of digested food), উত্তরগুদ (upper part of the rectum), অধরগুদ (lower part of the rectum), ক্ষুদ্রান্ত্র (small intestine), স্থুলান্ত্র (large intestine) ও বপাবহন স্রোত (omentum)।” (৭.১০)[23]
পরের শ্লোকে বলা হচ্ছে – “প্রত্যঙ্গ (minor parts of the body) সংখ্যা ৫৬টি – ২টি জঙ্ঘাপিণ্ডিকা (calves), ২টি উরুপিণ্ডিকা (muscular portion of the thighs), ২টি স্ফিক (buttocks), ২টি বৃষণ (testicles), ১টি শেফ (penis), ২টি উখ (armpit), ২টি বঙ্ক্ষণ (groins), ২টি কুকুন্দর (hips), ২টি বস্তিশিরঃ (pelvis), ১টি উদর, ২টি স্তন, ২টি শ্লেষ্মভূ (? tonsils), ২টি বাহুপিণ্ডিকা (muscular portion of the arms), ১টি চিবুক (chin), ২টি ওষ্ঠ (lips), ২টি সৃক্কণী (angles of the lips), ২টি দন্তবেষ্ট (gums), ১টি তালু (palate), ১টি গলগণ্ডিকা (uvula), ২টি উপজিহ্বিকা (epiglottis and posterior tongue), ১ট গোজিহ্বিকা (tongue or the organ of speech), ২টি গণ্ড (cheeks), ২টি কর্ণশষ্কুলী (ear holes), ২টি কর্ণপুত্রক (external portion of the ear), ২টি অক্ষিকুট (orbit of the eye), ৪টি অক্ষিব্রত্ম (eyelids), ২টি অক্ষিকনীনিকা (medial angles of the eyes), ২টি ভ্রূ (eyebrows), ১টি অবটু (?thyroid), ৪টি পাণিতল ও পাদতল (palms and soles of hands and feet) সমূদয়ে।” (শাঃ ৭.১১)
“৯টি মহাছিদ্র (major orifices): মস্তকে ৭টি (নেত্রছিদ্র ২, নাসিকাছিদ্র ২, কর্ণছিদ্র ২, মুখ ১) এবং নীচে ২টি।” (৭.১২)
পরের শ্লোকে বলা হল – “এসমস্ত প্রত্যঙ্গ দৃশ্য, সুতরাং এদের নির্দেশ করতে পারা যায়। বাকিরা অদৃশ্য, এজন্য তাদের সংখ্যা যুক্তি দিয়ে (তর্ক্যমেব – by reasoning) বুঝতে হয়।” (৭.১৩)
মিউলেনবেল্ডের ভাষ্য অনুযায়ী – “The parts so far mentioned are visible; the remaining ones are invisible and their number has to be deduced by reasoning (7.13).”[24]
এটুকু আলোচনা থেকে সবার কাছে নিশ্চয়ই পরিষ্কার হবে যে, উপরোক্ত সমস্ত বর্ণনাই দেহের উপরিস্তরের – surface anatomy. দেহের অভ্যন্তরের অঙ্গের আলোচনা প্রায় নেই বললেই চলে। ভ্রূণহত্যা বা গর্ভপাত কিংবা স্বাভাবিক প্রসব সেসময়ে অবশ্যই হয়তোএখনকার মতোই হত। ফলে ভালো করে ভ্রূণের মনোযোগী পর্যবেক্ষণ (দেহের ভেতরে প্রবেশ না করে) যতটুকু করা সম্ভব সে যুগের চিকিৎসকেরা করেছেন। এর ফলে ভ্রূণ-সংক্রান্ত কিছু পর্যবেক্ষণ বর্তমান সময়েও সত্যি। কিন্তু বেশিরভাগটাই “তর্ক্যমেব – by reasoning” দিয়ে বোঝা, যার সঙ্গে ফিজিওলজির কোনরকম যোগযোগ নেই বললেই চলে।
দৃশ্যমান অংশের মধ্যে অন্যান্য যেসব অংশ পড়ে –
স্নায়ু (sinews) – ৯০০
শিরা (Any tubular vessel of the body, a nerve, vein, artery, blood-vessel)[25] – ৭০০
ধমনী (1. A reed, blow-pipe. 2 A tube or canal of the human body, tubular ve6sel, as a vein, a
nerve)[26] – ২০০
পেশী (1 A piece of flesh. 2 A ball or mass of flesh)[27] – ৪০০
মর্ম (from a Vedic conception in preserving the corresponding Vedic name that classical medicine has elaborated one of its most characteristic notions of anatomy, that of the vulnerable points or marman)[28] – ১০৭
সন্ধির (joints) সংখ্যা – ২০০
মূখাগ্র (terminal openings of the minute branches of sirās and dhamanīs, as well as the hairs of scalp, face and body)[29] – ২৯,৯৫৬ (৭.১৪)[30]
একটি শ্লোকে বলা হল – “অঞ্জলি পরিমাণদ্বারা যেসব পদার্থের সংখ্যা নির্দেশ করতে হয় সেসব পদার্থের বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটতে পারে। কিন্তু অঞ্জলি পরিমাণ যুক্তি দিয়ে বুঝতে হয় (বৃদ্ধিহ্রাসযোগি তর্ক্যমেব)। শরীরে স্ব স্ব পরিমাণে ১০ অঞ্জলি জল (উদক) আছে। যে জল বৃদ্ধি পেলে ক্ষরিত হয়ে পুরীষ, মূত্র, রক্ত ও অন্যান্য শরীরধাতুর সঙ্গে মিশ্রিত হয়, যা সমস্ত শরীরে ব্যাপ্ত থেকে বাহ্য ত্বকের পোষণ করে; যা ত্বকের অভ্যন্তরে ব্রণগত হয়ে লসীকা[31] নামে অভিহিত হয় (লসীকা refers to a watery, slightly slimy fluid that is a component of the udaka dhatu (water element) and considered a seat of Pitta (fire element)[32]; যা উষ্মার সঙ্গে যুক্ত হলে লোমকূপ সমুহ দিয়ে ক্ষরিত হয়ে স্বেদ নাম প্রাপ্ত হয় – সে জল ১০ অঞ্জলি পরিমাণ। আহারপরিণামের প্রথম ধাতু যা রস নামে অভিহিত, তার পরিমাণ ৯ অঞ্জলি। রক্তের পরিমাণ ৮ অঞ্জলি, পুরীষের পরিমাণ ৭ অঞ্জলি, শ্লেষ্মার পরিমাণ ৬ অঞ্জলি, পিত্তের পরিমাণ ৫ অঞ্জলি, মূত্রের পরিমাণ ৪ অঞ্জলি, বসার (muscle fat) পরিমাণ ৩ অঞ্জলি, মেদোধাতুর পরিমাণ ২ অঞ্জলি, মজ্জার পরিমাণ ১ অঞ্জলি, মস্তিষ্কের (brain tissue) পরিমাণ ১/২ অঞ্জলি এবং শুক্র ও ওজোনামক শ্লেষ্মার (শ্লৈষ্মিক ওজস) পরিমাণও ১/২ অঞ্জলি। শারীর পদার্থের সংখ্যাতত্ত্ব এইভাবে নির্দিষ্ট আছে।” (শাঃ ৭.১৫)
এই শ্লোক থেকে দোষ-এর অন্তর্ভুক্ত অন্তত ২টি বিষয়ের – শ্লেষ্মা ও পিত্ত – উল্লেখ দেখতে পাচ্ছি। এর আগে চরক-সংহিতা-য় দোষ-এর যে বিস্তৃত বর্ণনা আমরা পেয়েছি, সে বর্ণনা অনুযায়ী এরা পরিমাপযোগ্য (quantifiable) নয়, সর্বত্র বিচরমান। তাহলে এখানে যে পরিমাপের কথা বলা হচ্ছে (যথাক্রমে ৬ ও ৫ অঞ্জলি) তা কী করে প্রযোজ্য হয়? আজকের প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন তোলা যায়। কিন্তু সেদিনের প্রেক্ষিতে কৃতবিদ্য, পণ্ডিত চিকিৎসকেরা কী ভেবেছিলেন, তা অনুমান করা আজ দুঃসাধ্য।
পরের শ্লোকে বলা হচ্ছে – “এসমস্ত শারীর পদার্থের মধ্যে যেসব পদার্থ বিশেষরূপে স্থুল (gross), স্থির (firm), মূর্তিমান (endowed with a particular form), গুরু (heavy), খর (rough), ও কঠিন (hard), যেমন – নখ, অস্থি, দন্ত, মাংস, চর্ম, পুরীষ, কেশ, শ্মশ্রু, লোম ও কণ্ডরাদি (1 A sinew (of which 16 are considered to be in the human body). 2 A principal vessel of the body, a large artery, vein &c.[33]), তৎসমুদয় পদার্থ পার্থিব। শারীর পদার্থের সংখ্যাতত্ত্ব এভাবে নির্দিষ্ট আছে।” (শাঃ ৭.১৫-১৬)
মিউলেনবেল্ড বলছেন – “Agni (fire) predominates in pitta, ūṣman (heat), bhās (lustre), rūpa (vision) and darśana (the visual sense). Vāyu (air) predominates in ucchvāsa (expiration), praśvāsa (expiration), unmeśa (opening of the eys), nimeṣa (closing of the eyes), ākuńcana (contraction), prasārańa (extension), gamana (locomotion), preraṇa (impelling), dhāraṇa (retention), sparśa (touch), and sparśana (the tactile sense) Antaikṣa (akaśa) predominates in vivikta parts (interstices), vāc (speech), large and minute vessels (srotas), śabda (sound), and śrotra (the auditory sense) (7.16).”[34]
মিউলেনবেল্ডের এই অনুবাদেও বায়ুকে দোষ হিসেবেই দেখা হচ্ছে, অনুমান করা যায়। তাহলে একটু আগে যে প্রশ্নটি রেখেছিলাম – এদেরকে quantify করা হচ্ছে কীভাবে?
শেষে বলা হয়েছে – “যে ভিষক শরীরংখ্যার বিষয় সর্বতোভাবে অবগত হন, তাঁকে সে বিষয়ে অজ্ঞানতার মোহপ্রাপ্ত (confused) হতে হয়না এবং সেই মোহশূণ্য (free from ignorance) ভিষক মোহমূলক দোষেও অভিভূত হন না (free from faults)। নির্দোষ, নিস্পৃহ ও সব কাজে শান্ত হতে পারলে, পুনর্জন্মও নিবারিত হয় (prevention of his rebirth)।” (শাঃ ৭.১৯-২০)
সুশ্রুত সংহিতা নিয়ে কিছু প্রাথমিক কথা
সুশ্রুত সংহিতা-র সুত্রস্থান-এর প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম “বেদোৎপত্তি অধ্যায়”।
এখানে শুরুতে বলা হল – “স্বয়ম্ভু (ব্রহ্মা) লোকসৃষ্টির আগেই অথর্ব্ববেদের উপাঙ্গস্বরূপ আয়ুর্বেদ লক্ষশ্লোকময় ও সহজ অধ্যায়ে বিভক্ত করেছিলেন। পরে মানুষসমাজের অল্পায়ু, অল্পমেধা দেখে আরেকবার একে আটভাগে বিভক্ত করেছিলেন – শল্য (শল্যতন্ত্র), শালাক্য (শালাক্যতন্ত্র) কায়চিকিৎসা, ভূতবিদ্যা (demonology), কৌমারভৃত্য (a specialized branch dedicated to the health and well-being of children, from conception to adulthood), অগদতন্ত্র (toxiclogy), বাজীকরণ (a specialized branch that focuses on enhancing virility, improving reproductive health, and promoting overall well-being)।”[35] (সূঃ ১.৩)
এরপরে আয়ুর্বেদের প্রতিটি অঙ্গের সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে।
শল্য (শল্যতন্ত্র)[36] – বিবিধ তৃণ, কাষ্ঠ, পাষাণ, ধূলি, লোষ্ট্র (শক্ত ইট, মাটি বা পাথরের টুকরো), অস্থি, কেশ, নখ প্রভৃতি শরীরে ঢুকে থাকলে তা বের করার জন্য, পূষস্রাব (pus discharge) করবার জন্য এবং গর্ভশল্য (obstructed labour) উদ্ধার করার জন্য, দূষিত ক্ষত পরিষ্কার করার জন্য যেসব উপায় আবশ্যক, সেসমস্ত বিষয় এই শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। এবং এ কাজে যন্ত্র (blunt instruments), শস্ত্র (sharp instruments), ক্ষার (alkali) ও অগ্নির প্রয়োগ (cauterization) এবং ব্রণসমূহের বিবরণ বলা আছে (ধারবিশিষ্ট যন্ত্রের নাম শস্ত্র, অন্য প্রকারকে সাধারণত যন্ত্র বলে। ব্রণ শব্দের অর্থ ঘা। তার মধ্যে আঘাতজনিত ঘা-কে সদ্যোব্রণ বলে)।” (সূঃ ১.৫)
শালাক্যতন্ত্র – “এই তন্ত্রে জত্রুর (কণ্ঠ-বক্ষের সন্ধি বা clavicle) উপরিস্থ অঙ্গসমূহের অর্থাৎ কর্ণ, চক্ষু, মুখ, নাসিকা প্রভৃতির রোগসমূহের চিকিৎসা বলা হয়েছে।”[37] (১.২)
কায়চিকিৎসা – “এই তন্ত্রে সর্বাঙ্গসংশ্রিত ব্যাধি অর্থাৎ জ্বর, অতিসার (diarrhoea), রক্তপিত্ত (severe intrinsic haemorrhage), শোষ (the most troublesome of all diseases, also called rājayakṣman – kingly consumption[38]), উন্মাদ, অপস্মার (epilepsy), কুষ্ঠ (all types of skin diseases), প্রমেহ (diabetes?)।” (১.৩)
কৌমারভৃত্য – এই শাস্ত্রে শিশুপালন, ধাত্রীদুগ্ধের শোধন (সম্ভবত রাজন্যবর্গ বা বিত্তশালীদের জন্য – বর্তমানকালে মহাশ্বেতাদেবীর “স্তনদায়িনী” গল্পটিই স্মরণ করুন), এবং দূষিত স্তন্য ও গ্রহদোষজনিত বাল্যরোগসমূহের চিকিৎসা কথিত হয়েছে।” (১.৫)
বাজীকরণতন্ত্র – “এতে অল্প শুক্রের বর্দ্ধন, দূষিত শুক্রের শোধন, ক্ষীণ শুক্রের উপচয় (alleviation) ও শুষ্ক শুক্রের পুনরুৎপাদন এবং পুংশক্তি বৃদ্ধির উপায়সমূহ বলা আছে।” (১.৮)
[আমি ভূতবিদ্যা, অগদতন্ত্র এবং রসায়নতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করলাম না। আমার বিচারে আলোচিত এই মূল তন্ত্রগুলো আলোচ্য বিষয় বোঝার জন্য বেশি জরুরি।]
এরপরের গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক –
“এই শাস্ত্রে আয়ু বিদ্যমান আছে। এই শাস্ত্র পাঠ করলে আয়ুর জ্ঞান হয়, এই অর্থে আয়ুর্বেদ নাম হয়েছে। শল্যতন্ত্র সে আয়ুর্বেদের প্রধান আদ্য (foremost) অঙ্গ। আমি সেই শাস্ত্র বেদ ও আপ্তবাক্য (scriptural authority), এবং প্রত্যক্ষ (perception), অনুমান (inference) ও উপমানের (analogy) সাহায্যে ব্যাখ্যা করছি। শ্রবণ কর। (১.১৫)
“শল্যতন্ত্র আয়ুর্বেদের প্রথম অঙ্গ, কেননা জ্বর ইত্যাদি শারীররোগ উৎপন্ন হবার আগে আঘাতের কারণে ব্রণসকল উৎপন্ন হত এবং এই তন্ত্রের উপদেশমতেই সেসমস্ত ব্রণের পূরণ করা হত … শুনিতে পাওয়া যায় যে, রুদ্র যজ্ঞের মস্তক ছিন্ন করেছিলেন … অশ্বিনীকুমারেরা যজ্ঞের মস্তক সংযুক্ত করে দিয়েছিলেন।” (১.১৬)
[এখানে “শুনিতে পাওয়া যায় যে” বাক্যাংশের মধ্য দিয়ে সমগ্র ঘটনাটিকেই প্রকৃতপক্ষে লঘু করা হল, এর কোন চিকিৎসাগত বা ইতিহাসগত ভিত্তি আছে, এমনটা বর্তমান সময়ে দাবী করা হলেও প্রাচীন ও মূল সুশ্রুত-সংহিতা-য় দাবী করা হয়নি। এই অর্থে এ অংশটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।]
“অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদের মতে শল্যতন্ত্রই অধিক অভিমত (highly recognized). কেননা ইহার সাহায্যে যন্ত্র, শস্ত্র, ক্ষার ও অগ্নি প্রয়োগ (cauterization) করা যায় বলে আশু ক্রিয়া হয়, অথচ সমস্ত তন্ত্রের সঙ্গে এর সমানতা আছে (১.১৭) … এই তন্ত্র নিত্য পুণ্যকারক, স্বর্গলাভের উপায়, যশস্কর (যশ লাভ হয়), আয়ুষ্কর ও অর্থোপার্জনের উপায়।” (১.১৮-১৯)
“এই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পঞ্চ মহাভূত ও জীবাত্মার (consciousness) সমবায়কে পুরুষ বলে থাকে। পুরুষই চিকিৎসার আধার। পুরুষই রোগ এবং আরোগ্যের অধিষ্ঠান। স্থাবর (cannot move) এবং জঙ্গম (move about) এই দ্বিবিধ জগতের মধ্যে পুরুষই প্রধান বলে পুরুষকেই অধিষ্ঠান বলা হয়েছে। জগৎ আবার আগ্নেয় এবং সৌম্যগুণের (cool) আধিক্যে দ্বিবিধ হয়ে থাকে। “substances with a preponderance of one of the mahābhūtas, and into four classes of beings: saṃsvedaja, jarāyuja, aṇḍaja and udbhijja (1.22)”[39]
“ব্যাধি চার রকমের – আগন্তু (বাইরের কারণে বা আঘাতের ফলে), শারীর, মানস ও স্বাভাবিক … সংশোধন, সংশমন (rules regarding) আহার (diet), (rules regarding) ও আচার (conduct)।” (১.২৭)
“Medicinal substances (oṣadhi) derive from immobiie (sthāvara) and mobile (jāňgama) living beings (1.28)”[40]
“স্থাবর (যার মধ্যে উদ্ভিজ্জও পড়ে) চার রকমের – বনস্পতি (পুষ্পহীন বৃক্ষ), বৃক্ষ (পুষ্প ও ফুল উভয়েই হয়), বীরুধ (লতানো এবং ঝাড়-বিশিষ্ট) ও ওষধি (ফল পাকলে গাছ মরে যায়)।” (১.২৯)
“স্বর্ণ, রৌপ্য, মণি, মুক্তা, মনঃশিলা (realgar), মৃত্তিকা ও খাপরা (earthen piece) – এদেরকে পার্থিব (inorganic)[41] বলে।” (১.৩২)
“বায়ুপ্রবাহ, নিবাত (বায়ুহীন), আতপ (সূর্যালোক), ছায়া, জ্যোৎস্না, অন্ধকার, শীত, উষ্ণ, বর্ষা, অহোরাত্র, পক্ষ (fortnight), মাস, ঋতু ও অয়ন (modes of year) ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ কালসমূহ কালের বৈষম্যবশতঃ উৎপন্ন হয় বলে এদেরকে “কালকৃত” বলে থাকে।
এরা স্বভাববশতই বাত, পিত্ত ও কফের সঞ্চয়, প্রকোপ, প্রশমন ও প্রতিকার করে, এবং এজন্য প্রয়োজনীয় হয়।” (১.৩৩-৩৪)
“উপরে যা গদ্যে বলা হল, তাই আবার কয়েকটি শ্লোকের (mnemonic verses) আকারে বলা হচ্ছে। স্থাবর, জঙ্গম, পার্থিব ও কালভেদে শারীররোগসমুহের প্রকোপ (aggravation) ও প্রশম-এর (pacification) পক্ষে চিকিৎসকদের দ্বারা চার রকমের হেতু উল্লিখিত হয়েছে।” (১.৩৫)
“ব্যাধি শব্দে বাত, পিত্ত, কফ ও রক্ত পৃথক ও মিলিতভাবে বৈষম্য প্রাপ্ত হলে[42] যে কোন ব্যাধি উৎপন্ন হয়, সেসমস্তই বুঝে নিতে হবে। ওষুধ শব্দে দ্রব্য, গুণ, রস, বীর্য্য ও বিপাক বুঝতে হবে। ক্রিয়া বা চিকিৎসা শব্দে ছেদন, ভেদন প্রভৃতি ও স্নেহ, বমন, বিরেচন, বস্তি প্রভৃতিও বুঝতে হবে।[43] কাল শব্দে সবরকমের চিকিৎসাকাল বুঝতে হবে।” (১.৩৬)
“এভাবে চিকিৎসার বীজ সংক্ষেপে বলা হল। এই বীজসূত্রের ব্যাখ্যায় একশত বিংশতি অধ্যায় হবে। সেই একশত বিংশতি অধ্যায় সূত্র, নিদান, শারীর, চিকিৎসিত ও কল্প – এই পাঁচটি স্থানে, যে অধ্যায় যে স্থানে বসান আবশ্যক, তা বিবেচনা করে, বিভাগ করা হবে। যা এইসব অধ্যায়ে বলা বাকী থাকবে তা উত্তরতন্ত্রে ব্যাখা করা হবে।” (১.৩৯-৪০)
২য় অধ্যায় – শিষ্যোপনয়নীয় অধ্যায়
এ অধ্যায়টির বিষয়ে আগে বেশ কিছুটা অংশ আলোচনা করেছি। এজন্য এখন নির্বাচিত কিছু অংশ নিয়েই শুধু আলোচনা করব।
“ব্রাহ্মণ – ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের, ক্ষত্রিয় – ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের, এবং বৈশ্য কেবল বৈশ্যের উপনয়ন করতে পারবেন। কেউ কেউ বলেন যে, কুললক্ষণসম্পন্ন শূদ্রকেও মন্ত্রভাগ পরিত্যাগ করে (without incantation) দীক্ষিত করা যায়।” (শাঃ ২.৫)
“দ্বিজ, গুরু, দরিদ্র, মিত্র, প্রব্রজিত (mendicants), শরণাগত (submissives), সাধু, অনাথ ও আগন্তুকদেরকে আপনার জ্ঞাতি-কুটুম্বের মতো মনে করে নিজের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করবে। এতে মঙ্গল হয়ে থাকে। ব্যাধ, শাকুনিক (fowlers), পতিত ও পাপকারীদের চিকিৎসা করবে না। এভাবে আচরণ করলে বিদ্যা প্রকাশিত হয় এবং যশ, ধর্ম, অর্থ ও কাম লাভ করা যায়।” (শাঃ ১.৬)
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, বিদ্যালাভের মতো চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একটি exclusionary দৃষ্টিভঙ্গী কাজ করছে – সেসময়ের প্রেক্ষিতে যা স্বাভাবিক ছিল।
শেষ কথা
এর পরের অধ্যায়ে আমরা (চরক-সংহিতা-র ক্ষেত্রে যেমন দেখেছিলাম সেরকম) সুশ্রুত-সংহিতা-রও টেক্সট-ক্রিটিকাল সম্পাদনা এবং সংস্করণের ব্যাপারে বিশদে আলোচনা করার চেষ্টা করব। এবং শল্য-চিকিৎসা ও “ডিসেকশন” নিয়ে যে চালু ধারণা আছে, যার মধ্যে ব্যাখ্যার ভ্রান্তি, myth, অসম্পূর্ণ বা স্বল্পজ্ঞান ইত্যাদি সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত, সে বিষয়েও আলোচনায় প্রবৃত্ত হব।
________________________________________________________
[1] সংস্কৃত শব্দসমূহের ইংরেজি প্রতিশব্দের ক্ষেত্রে আমি যতদূর সম্ভব মিউলেনবেল্ড এবং আপ্তের অনুবাদ অনুসরণ করেছি – HIML, IA, p. 35.
[2] Ibid p. 36.
[3] Ibid, p. 36.
[4] ইংরেজি ভাষান্তরের জন্য দ্রষ্টব্যঃ Meulenbeld, HIML, IA, p. 32.
[5] এখানে ক্লোম কী এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ধারণায় পৌঁছনো কষ্টকর। সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত-র ব্যাখ্যা অনুযায়ী – “Susśruta speaks of pupphusa as being on the left side and kloma is used in the plural number.” (HIP, vol. 2, p. 288।পাদটীকা-১) ক্লোম বলতে খুব সম্ভবত ডানদিকের ফুসফুস বোঝায়। দাসগুপ্ত আরও বলছেন – “Cakrapāṇi explains it (kloma) as hṛdaya-stham pipāsā-sthānam, and Gangādhara as the point of conjunction between the throat and the heart (kaṇṭhorasoḥ sandhiḥ) – HIP, vol. 2, p. 348, fn. 1. ফলে কার্যত ক্লোম কী এটা অনির্ধারিতই থাকল। বিপত্তি আরও বাড়ে যখন বামন শিবরাম আপ্তে-র নির্ভরযোগ্য The Practial Sanskrit-English Dictionary (1890) জানায় যে ক্লোম বা ক্লোমন্ শব্দের প্রথম অর্থ lungs, এবং ২য় অর্থ bladder, p. 433. Monnier-Williams-এর A Sanskrit-English Dictionary-তে ক্লোমন্ শব্দের অর্থ right lung বলা হয়েছে – পৃঃ ৩২৪।
[6] মিউলেনবেল্ড সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ ব্যাখ্যায় এই শ্লোকটির রূপ এরকম হবে – “The vessels carrying mütra have their origin in the bladder (basti) and groins (vaṅkṣaṇa), those carrying purīṣa in the pakvśāaya (receptacle of digested food) and sthủlaguda (rectum) …”, HIML, IA, p. 33.
[7] Francis Zimmermann, “The Conception of the Body in Ayurvedic Medicine: Humoral Theoryand Percepton”, p. 4 – revised and published on the web in November 2005
reference: http://www.ehess.fr/centres/pri-al/nature/body.html.
[8] Francis Zimmermann, The Jungle and the Aroma of Meats: An Ecological Theme in Hindu Medicine, 1999, p. 20.
[9] Ibid, p. 22.
[10] Meulenbeld, HIML, IA, p. 33.
[11] Charles Singer, “The Strange Histories of Some Anatomical Terms”, Medical History 1959, 3 (1): 1-7.
[12] Ibid, p. 3.
[13] Ibid, p. 6.
[14] Meulenbeld, HIML, IA, p. 33.
[15] তন্মাত্র বলতে বোঝায় “the subtle, invisible essences of the five elements that give rise to our sensory experiences”।
[16] Meulenbeld, HIML, IA, p. 38.
[17] Ibid, p. 39.
[18] Ibid, p. 39.
[19] Ibid, p. 44.
[20] আমি এক্ষেত্রে মিউলেমবেল্ড-কৃত হুবহু ইংরেজি অনুবাদ তুলে দিয়েছি – HIML, IA, p. 44.
[21] Meulenbeld, HIML, IA, p. 44.
[22] Caraka Samhita, ed., Gabriel Van Loon, 2002, vol. 1, p. 52.
[23] চরক সংহিতা, সম্পাদকঃ ব্রজেন্দ্রচন্দ্র নাগ, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৬৬। রামকরণ শর্মা ও বৈদ্য ভগবান দাশ তাঁদের চরক সংহিতা-র অনুবাদে যোগ করেছেন – “Kloma is the site in which thirst is manifested … Some of the terms used in the text are difficult to be identified according to known facts of anatomy.” – Caraka Saṃhitā, vol. 2, p. 455.
[24] Meulenbeld, HIML, IA, p. 45.
[25] Vaman Shivram Apte, The Practical Sanskrit-English Dictionary, 1890, p. 1045.
[26] Ibid, p. 591.
[27] Ibid, p. 720. এছাড়াও আমরা এ রচনার গোড়ার দিকে “পেশি” শব্দের অর্থভেদ নিয়ে রাহুল পিটার দাস ও অন্যান্য স্কলারদের মতামত উল্লেখ করেছিলাম।
[28] J. Filliozat, The Classical Doctrine of Indian Medicine: Its Origins and Greek Parallels, 1964, p. 163.
[29] Meulenbeld, HIML, IA, p. 45.
[30] চরক সংহিতা, সম্পাদকঃ ব্রজেন্দ্রচন্দ্র নাগ, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৬৭-তে বলছেন – “শিরা ও ধমনীসকল সূক্ষানুসূক্ষরূপে বিচার করলে তাদের মুখাগ্র পরিমাণ সম্মিলিতভাবে ত্রিশ লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার নয়শত হয়ে থাকে।” যদিও পি ভি শর্মা এবং শর্মা ও দাশ উভয়েই বলছেন – “The end portion of the minute branches of blood vessels – 29,956; Head, hair, beard and mustaches, skin hairs – 29,956.” – P V Sharma, Caraka Saṃhitā, vol. 1, 2010, p. 459. ফলে মুখাগ্র-র সংখ্যা নিয়ে একটি বিভ্রাট থেকেই গেল।
[31] Apte, Practical Sanskrit-English Dictionary, p. 926. আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখানে ৪ নম্বর এন্ট্রিতে lymph এসেছে।
[32] যদিও লসীকা-র কোন প্রতিশব্দ মিউলেনবেল্ড করেননি, তিনি ছাড়া ব্যতিক্রমহীনভাবে প্রায় সবাই lymph হিসেবে অনুবাদ করেছেন – মনে রাখতে হবে সেসময়ে কোনভাবেই lymph-এর কোন ধারণাই থাকা সম্ভব নয়, ফলে এ অনুবাদ ভ্রান্ত, সে যতদূর পণ্ডিতব্যক্তিই করুন না কেন)
[33] Apte, Practical Sanskrit-English Dictionary, p. 372. পি ভি শর্মা কণ্ডরা-কে tendon বলে অনুবাদ করেছেন। ফলে পুনরায় শব্দার্থের বিপত্তি তৈরি হল।
[34] Meulenbeld, HIML, IA, p. 46.
[35] আমি বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে যশোদাননন্দন সরকার কৃত সুশ্রুত সংহিতা-র অনুবাদকে অনুসরণ করেছি। প্রয়োজনে মিউলেনবেল্ড বা আমার নিজস্ব টীকা যুক্ত করেছি।
[36] জি ডি সিঙ্ঘাল তাঁর ১০ খণ্ডের পুস্তকে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন – “Ṥalya-tantra: (a) That science in which ‘Ṥala’ (surgical instruments) are used, (Amara Koṣa II.5.7). (b) That science which mainly deals with the surgical removal of ‘Ṥalya’ (substances which penetrate the body easily, are injurious and produce pain) – G. D. Singhla, Ancient Indian Surgery: Based on Suśruta saṃhitā, 1979, vol. 1, p. 17.
[37] “Surgeons specializing in Ṥālakya tantra were called Ṥālākin – an otorhinolaryngologist as well as an ophthalmologis.” – Singhal, ibid, p. 17.
[38] Meulenbeld, HIML, IA, p. 29. আপ্তের পূর্বোক্ত অভিধান অনুসারে – “Pulmonary consumption or consumption in general” – পৃঃ ১০৫৬।
[39] Meulenbeld, HIML, IA, p. 203-204.
[40] Meulenbeld, ibid, p. 204.
[41] মিউলেনবেল্ড পার্থিব-র ইংরেজি inorganic করেছেন। প্রাগুক্ত, পৃঃ ২০৪।
[42] এখানে একই সঙ্গে বাত, পিত্ত, কফ ও রক্ত-এর কথা বলা হয়েছে। ফলে একেবারে গোড়ার দিকে মিউলেনবেল্ড “চতুর্থ দোষ” হিসেবে রক্তের উপস্থিতির কথা আয়ুর্বেদের আদি স্তরে ছিল বলে প্রমাণ করেছেন, সে প্রতিপাদ্যই এই শ্লোকের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে বলে মনে হয়।
[43] এখানে লক্ষ্যণীয়, চিকিৎসা বলতে শল্য-সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই বলা হয়েছে।