Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

ঊর্মিমুখর: চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

IMG_20250613_000107
Dr. Sukanya Bandopadhyay

Dr. Sukanya Bandopadhyay

Medical Officer, Immuno-Hematology and Blood Bank, MCH
My Other Posts
  • June 13, 2025
  • 7:53 am
  • No Comments
এক প্রখর নিদাঘ-প্রদোষে সেনাপতি, মহামন্ত্রী এবং মুখ্য অমাত্যবর্গের সহিত রাজা হর্ষবর্ধনের সান্ধ্য মন্ত্রণাসভা তর্কবিতর্কের আবহে কিছু উত্তপ্ত হইয়া উঠিয়াছিল। তর্কের অবশ্য গুরুতর কারণ ছিল।
ভণ্ডী উত্তেজিত স্বরে কহিতেছিলেন — “মূর্খ গৌড়বাসী বাহুবল তথা অস্ত্রবলের সম্মুখ সমরকে আক্ষরিক অর্থেই ধর্মযুদ্ধে পরিণত করিতেছে — ইহা সহ্য করা অনুচিত, মহারাজ! আপনার সাম্রাজ্যের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী প্রজারা মর্মাহত হইয়াছে এবং অত্যন্ত শঙ্কিত বোধ করিতেছে। তাহাদের ক্ষোভ অযৌক্তিক নহে! অবশ্যই ইহার বিহিত করা প্রয়োজন।”
বলা বাহুল্য, গৌড়েশ্বর শশাঙ্কের নির্দেশে বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষের ধ্বংসসাধন এবং পাটলিপুত্রের বুদ্ধশিলার বিসর্জনের সংবাদই পুষ্যভূতি রাজপুরুষগণের উষ্মা এবং চাঞ্চল্যের প্রধান হেতু; একটি শান্তিপ্রিয় ধর্মের উপরে প্রতিবেশী রাজ্যের নৃপতির এ হেন বর্বর নিষ্ঠুরতা তাঁহাদের উত্তেজিত করিয়া তুলিয়াছিল।
হর্ষ ধীরস্বরে বলিলেন –“আপনার চিত্তবিক্ষোভ সংহরণ করুন সেনাপতি! আমার জীবিতাবস্থায় পুষ্যভূতি সাম্রাজ্যের সকল বৌদ্ধ প্রজার ধর্ম সুরক্ষিত থাকিবে, এই আশ্বাস দিতেছি। কিন্তু পররাজ্য আক্রমণ আমার দ্বারা সম্ভব নহে। আমি আত্মরক্ষার্থে ক্ষাত্রধর্ম অবশ্য পালন করিব, কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া গৌড় অধিকার করার উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ করিতে পারিব না। তাহা হইলে বুদ্ধের অসম্মান হইবে।”
সভা নীরব হইল। উপস্থিত কেহই পরমভট্টারক রাজাধিরাজের এমত উদারতাকে পরিপাক করিতে পারেন নাই। রাজার কর্ম যুদ্ধবিগ্রহ। আপন রাজত্বের পরিসর বৃদ্ধির বিষয়ে সফল রাজাকে সর্বদা সচেষ্ট থাকিতে হয়। ধর্মাচরণ যদি রাজধর্ম পালনে অন্তরায় হইয়া উঠে, তবে তো সমস্যা!
ভূষণবর্মা ইতস্তত করিয়া কহিলেন — “বেশ! পররাজ্য আক্রমণে আপনার অনীহা থাকা সম্ভব, রাজন। কিন্তু যে ধর্মের অনুগামী হইয়া আপনি শত্রুর প্রতি সংযম প্রদর্শন করিতেছেন, দুর্মতি গৌড়াধিপ শশাঙ্ক সেই শমগুণাকর ধর্মের মূলে কুঠারাঘাত করিয়াছে, এ কথাও বিস্মৃত হইবেন না।”
হর্ষ পুনরায় শান্তস্বরে বলিলেন –“মাননীয় দণ্ডাধিনায়ক, সেই ধর্মের নীতিশিক্ষাই আমাকে সংযত থাকিতে বাধ্য করিতেছে। পুনরায় কহিতেছি, আক্রান্ত হইলে পুষ্যভূতি সম্রাট অবশ্যই প্রত্যাঘাত করিবে, নচেৎ নিশ্চেষ্ট থাকাই সমীচীন। ক্ষমার তুল্য যুদ্ধাস্ত্র বিরল — তীব্র বিরোধও ইহার সম্মুখীন হইয়া এক সময় প্রশমিত হয়।”
মহামন্ত্রী মাধবগুপ্ত এতক্ষণ বাক্যস্ফূর্তি করেন নাই — সমগ্র কথোপকথন অতীব মনোযোগ সহকারে শুনিতেছিলেন। উপস্থিত রাজপুরুষদিগের মধ্যে তিনি সর্বাপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ঠ। এক্ষণে তিনি আপন নীরবতা ভঙ্গ করিয়া কহিলেন — “পররাজ্য আক্রমণ না করিবার সিদ্ধান্ত রাজোচিত, হর্ষ — কিন্তু আত্মরক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু ভাবিয়াছ কি?”
সকলে তাঁহার দিকে ফিরিলেন।
মাধবগুপ্ত বলিলেন — “আপন রাজ্য সুরক্ষিত রাখিবার জন্য প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে মৈত্রীবন্ধন প্রয়োজন। আমাদিগের শত্রু পূর্বদিকে বিরাজ করিতেছে, সুতরাং পশ্চিম রাজ্যগুলির সহিত সুসম্পর্ক দৃঢ় করা আবশ্যক। একমাত্র বিবাহের মাধ্যমে এই সুসম্পর্ক চিরস্থায়ী হইতে পারে।”
হর্ষবর্ধন চমকিত হইলেন।”বিবাহ? বিবাহ সম্পর্কে আমি এতাবৎ কোনওরূপ চিন্তাভাবনা করি নাই আর্য!”
কথা কয়টি উচ্চারণ করিতে করিতে তাঁহার মানসপটে দীপান্বিতার মুখচ্ছবি ভাসিয়া উঠিল, গণ্ডদেশ হইতে কর্ণমূল পর্যন্ত রক্তিমবর্ণ ধারণ করিল।
মাধবগুপ্ত তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে রাজাকে লক্ষ্য করিতেছিলেন — তাঁহার মুখ ছায়াচ্ছন্ন হইল। দাসীগণের জল্পনা, কঞ্চুকীপ্রদত্ত গূঢ় সংবাদ তবে ভিত্তিহীন নহে!
তিলেক নীরব থাকিয়া মাধবগুপ্ত অপেক্ষাকৃত দৃঢ়স্বরে কহিলেন, “পূর্বে চিন্তা করো নাই সত্য — এক্ষণে করিতে তো বাধা নাই। তুমি অনূঢ়, বীরশ্রেষ্ঠ, উত্তমরূপে আপন রাজ্য পরিচালনা করিতেছ — যে কোনও নরপতি তোমার সহিত আপন কন্যার বিবাহ সম্পন্ন করিতে আগ্রহী হইবেন।”
“বৈবাহিক সম্বন্ধকে আশ্রয় করিয়া আপন রাজ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করিব?” — হর্ষবর্ধন অহঙ্কারী অশ্বের ন্যায় গ্রীবা উত্তোলিত করিয়া কহিলেন — “আমার দ্বারা এমন হীন কার্য কখনও সম্ভব হইবে না”।
মাধবগুপ্ত আশ্চর্য হইয়া কহিলেন –“হীন কার্য্য? তবে কি তুমি প্রতিপন্ন করিতে চাও যে তোমার পিতা স্বর্গগত মহারাজ প্রভাকরবর্ধনও এমত হীন কর্মে লিপ্ত হইয়াছিলেন?”
হর্ষ শিহরিয়া উঠিলেন।
মাধবগুপ্ত নির্মমভাবে বলিয়া চলিলেন — “স্মরণ করো, তোমার পিতামহ মহারাজ আদিত্যবর্ধন আমার ভগিনী মহাসেনগুপ্তার পাণিগ্রহণ করিয়া গুপ্তবংশের সহিত মৈত্রী স্থাপন করিয়াছিলেন। সম্রাট প্রভাকরবর্ধনও মৌখরীরাজ্যের সহিত পুষ্যভূতিগণের চিরন্তন বৈরিতা সমাপনের লক্ষ্যে রাজা গ্রহবর্মার হস্তে স্বীয় কন্যাকে সম্প্রদান করিয়াছিলেন। তোমার মতে এ সকলই হীন কার্য্য?”
রাজা হর্ষবর্ধনের অন্তর সুগভীর আত্মগ্লানিতে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। তিনি অবরুদ্ধ কণ্ঠে কহিলেন –“আর্য, আপনার তিরস্কার শিরোধার্য। মৈত্রীবিবাহ সম্বন্ধে মতামত ব্যক্ত করিবার পূর্বে, আমার শব্দচয়নে বিচক্ষণতা অবলম্বন করা উচিত ছিল।”
তাঁহার যুক্তিপূর্ণ বাক্যবাণ লক্ষ্যভেদ করিতে সমর্থ হইয়াছে দেখিয়া মাধবগুপ্ত সন্তুষ্টি গোপন করিলেন এবং অপেক্ষাকৃত কোমলস্বরে কহিলেন – “তুমি নিশ্চয় অবগত আছো, যে পুষ্যভূতি রাজত্বের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত মৈত্রক রাজ্য আমাদিগের প্রতি মিত্রভাবাপন্ন । দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমান মৈত্রকরাজ ধারাসেনের কোনও কন্যাসন্তান নাই। তৎসত্বেও তিনি তাঁহার দূরসম্পর্কীয় ভ্রাতুষ্পুত্রী দুর্গাবতীর সহিত তোমার বিবাহ সম্পন্ন করিতে আগ্রহী হইয়া দূতমুখে প্রস্তাব প্রেরণ করিয়াছেন। তোমার একমাত্র জীবিত অভিভাবক হিসাবে এই পরিণয়বন্ধনে আমার সম্মতি জ্ঞাপন করিয়াছি। অগ্রে তোমার যাহা অভিরুচি, তাহাই করিও।”
সেইদিন মন্ত্রণাসভা ভঙ্গ হইবার পরে হর্ষবর্ধনের রাজ্যশ্রীর সহিত সাক্ষাৎ করিবার স্পৃহা রহিল না। বস্তুত, তিনি দেহে মনে অতীব শ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত বোধ করিতেছিলেন। আদরণীয়া সহোদরার সহিত সাক্ষাতে বীতস্পৃহ হইবার অন্য কোনও হেতুর উদ্ভব হয় নাই, কেবল অদ্য মন্ত্রণাসভা ভঙ্গের পরে দীপান্বিতার সম্মুখীন হইবার মনোবল তাঁহার ছিল না।
চন্দ্র যখন মধ্যগগনে, নগরীর দীপগুলি ম্রিয়মাণ হইয়া আসিয়াছে, প্রহরী ভিন্ন সুবিশাল রাজপুরীতে আর কেহই জাগ্রত নাই বলিয়া প্রতীতি হইতেছে — বিনিদ্র হর্ষ কক্ষের দ্বারে মৃদু গুঞ্জন শ্রবণ করিয়া শয্যা হইতে গাত্রোত্থান করিলেন। দ্বারের নিকটে আসিয়া দীপান্বিতাকে প্রত্যক্ষ করিয়া তিনি স্থাণুবৎ নিশ্চল হইয়া গেলেন। প্রতিহার তাঁহাকে জাগ্রত দেখিয়া নতমস্তকে অভিবাদন করিয়া কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইল।
হর্ষবর্ধন দেখিলেন অবগুণ্ঠনহীন দীপান্বিতা তাঁহার মুখের উপর উদ্বিগ্ন দৃষ্টি পাতিয়া আকুল হইয়া চাহিয়া রহিয়াছে। তাঁহার হৃদয়মধ্যে অন্ধ আবেগ দুর্নিবার তরঙ্গ তুলিয়া দশদিক ভাসাইয়া দিবার উপক্রম করিল। তিনি অতিকষ্টে আপনাকে সংবরণ করিয়া গম্ভীরস্বরে প্রশ্ন করিলেন — “রত্নাবলী? গভীর নিশীথে আমার নিভৃতকক্ষে তোমার আগমনের কারণ কি?”
তাঁহার নিজ কর্ণেই আপন কণ্ঠস্বর অনৈসর্গিক ও বিকৃত শুনাইল।
দীপান্বিতা রাজার কণ্ঠস্বরের অস্বাভাবিকতা অগ্রাহ্য করিয়া তাঁহার অতি নিকটে আসিয়া দাঁড়াইল। তাহার পর ব্যাকুল কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল – “আপনি আজ দেবী রাজ্যশ্রীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসেন নাই — কোনও বিপদ ঘটিয়াছে কি? আপনি সুস্থ আছেন তো?”
উত্তরে হর্ষ সামান্য হাসিলেন। তাঁহার বেদনার্ত মুখের ক্লিষ্ট হাস্য অবলোকন করিয়া দীপান্বিতার অশান্ত অন্তর আশঙ্কায় পূর্ণ হইয়া উঠিল — সে স্থিরভাবে অনুধাবন করিল, নিশ্চিতরূপে কোথাও কোনও অনর্থ ঘটিয়াছে।
রাজা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন –“আসন গ্রহণ করো। তোমাকে সকল কথা জানানো আবশ্যক। না বলিলে আমি শান্তি পাইব না।”
তিনি তাহাকে একটি নাতিউচ্চ পীঠিকায় উপবেশন করিবার ইঙ্গিত করিলেন। দীপান্বিতা অস্বীকৃত হইল — সে রাজসমীপে উপবিষ্ট হইতে পারিবে না।
রাজা পূর্বাপেক্ষা শ্রান্তস্বরে বলিলেন –“বারম্বার অনুরোধ করিতে পারিতেছি না। তুমি উপবিষ্ট হও। আমার বক্তব্য কিছু দীর্ঘ — সকল কথা বিশদে বলিতে হইলে অবশিষ্ট রাত্রি কাটিয়া প্রভাত হইয়া যাইবে।”
নতমুখী দীপান্বিতার সমীপে সম্রাট হর্ষবর্ধন যখন সমগ্র ঘটনার আনুপূর্বিক বিবরণ সমাপ্ত করিলেন, তখন সত্যই পূর্বাকাশের মেঘপুঞ্জ প্রভাতরবির প্রথম কিরণস্পর্শে সিন্দূরবর্ণ ধারণ করিয়াছে। পক্ষীকুলের চপল কলকাকলিতে চতুর্দিক মুখর হইয়া উঠিয়াছে, মুক্ত বাতায়নপথে স্নিগ্ধ সমীরণ আসিয়া হর্ষের রাত্রিজাগরণের ক্লান্তি অনেকাংশে হরণ করিয়া লইয়া যাইতেছে।
যদিচ রাজা আপন অর্গলবদ্ধ হৃদয়ের দ্বার দীপান্বিতার সম্মুখে উন্মোচন করিতে সমর্থ হইয়া কিঞ্চিৎ নিশ্চিন্ত বোধ করিতেছিলেন, তথাপি তাঁহার সাম্প্রতিক সমস্যার গুরুভার যে বিন্দুমাত্র লাঘব হয় নাই, ইহাও সম্যক অনুধাবন করিয়াছিলেন।
অল্পক্ষণ পরে দীপান্বিতা যখন মুখ তুলিল, সেই মুখশ্রীর ভাবব্যঞ্জনা দেখিয়া রাজা অতীব বিস্মিত হইলেন। দীপান্বিতার মুখে বিষাদ, হতাশা অথবা প্রিয়বিচ্ছেদের আশঙ্কার চিহ্নমাত্র নাই।
সে সপ্রতিভ কণ্ঠে কহিল –“মার্জনা করুন রাজন, আপনি যে দীর্ঘ বিবরণ ব্যক্ত করিলেন, তাহাতে আপনার ধর্মসঙ্কটের কারণ অনুসন্ধানে আমি অক্ষম হইলাম।”
হর্ষ স্বভাববিরুদ্ধ পরুষকণ্ঠে কহিলেন — “রত্নাবলী, তুমি কি আমার সহিত পরিহাস করিতেছ?”
“পরমভট্টারক পুষ্যভূতিরাজ শ্রীহর্ষের সহিত পরিহাসের দুর্মতি আমার যেন কদাপি না হয়” — দীপান্বিতা নিতান্ত স্বাভাবিক স্বরে বলিয়া চলিল — “মহামন্ত্রী মহোদয়ের যুক্তি শিরোধার্য করিতে আপনার দ্বিধার কারণ অনুমান করিতে পারিতেছি না।”
হর্ষ গভীরকণ্ঠে কহিলেন –“কারণ তুমি জানো না? নাকি ছলনা করিতেছ? বিগত কয়মাসের ঘটনাবলী তবে মিথ্যা? আমার প্রতি তোমার কিছুমাত্র হৃদয়দৌর্বল্য নাই? সকলই আমার অলীক কল্পনা?”
দীপান্বিতা পুনরায় নতমস্তক হইল।
সমগ্র উত্তরাপথ-নায়ক প্রকাশ্য ভাষায় তাহার প্রণয় কামনা করিতেছেন, এই পরম সত্যের অভিঘাতে প্রথমে বিপুল আনন্দ, তাহার পরে অপরিসীম লজ্জা আসিয়া তাহাকে গ্রাস করিয়া ফেলিল। এই লজ্জা দয়িতের প্রেমসম্ভাষণের উত্তরে নারীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নহে। সুবৃহৎ সাম্রাজ্যের ভাগ্যনিয়ন্তা এক অগ্নিসম্ভব পুরুষ তাহার তুল্য একজন সাধারণ রমণীর প্রণয়াসক্ত হইয়া নির্লজ্জের ন্যায় তাহা নিজমুখে ব্যক্ত করিতেছেন — হর্ষের আচরণের এই স্খলন যেন তাহার আপন পরাজয় বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। দিঙনাগসদৃশ যে পুরুষ তাহার সম্মুখে দণ্ডায়মান, ইঁহাকে সে পুষ্যভূতিরাজ্যের অসীম সম্ভাবনাময় নূতন নায়করূপে কল্পনা করিয়াছিল — সেই পরাক্রমী বীরকে নিজ ইন্দ্রিয়ের নিকট পরাভূত দেখিয়া দীপান্বিতার অন্তর বিপুল অবসাদে ভাঙিয়া পড়িতে চাহিতেছিল।
হে জগদীশ্বর, স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় বারম্বার দীর্ণ হওয়াই কি তাহার ন্যায় অনাথা নারীর ভবিতব্য?
কিয়ৎকাল পরে হর্ষবর্ধন শুনিলেন, দীপান্বিতা কহিতেছে –“হাঁ, ইহা সত্য যে আমার হৃদয় আমি আপনাকে নিঃশেষে দান করিয়াছি — কিন্তু সে হৃদয় আমি সেই মহাবলী রাজাধিরাজকে দান করিয়াছি, যিনি ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্দ্ধে উঠিয়া আপন রাজ্যের সকল প্রজার কল্যাণার্থ আত্মসুখ বিসর্জন দিতে তিলেক দ্বিধা করেন নাই, যুদ্ধবিগ্রহে সদ্ধর্মের পক্ষাবলম্বন করিতে যাঁহার কদাপি ভ্রান্তি হয় নাই, সুষ্ঠু রাজ্যশাসনে সহায়ক যে কোনও কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে যিনি অপ্রস্তুত বোধ করেন নাই — এমন জিতেন্দ্রিয়, প্রজাবৎসল, দৃঢ়চিত্ত বীরকেশরীকে আমি আমার হৃদয় অর্পণ করিয়াছিলাম।”
হর্ষ হতবুদ্ধি হইয়া প্রশ্ন করিলেন –“সে আমি নহে?”
“না মহারাজ” — দীপান্বিতা করজোড়ে কোমলকণ্ঠে কহিল –“তিনি আপনি নহেন। আমার আরাধ্য জীবনদেবতা পঞ্চশরে আহত হইয়া রাজ্যের মঙ্গল বিস্মৃত হইবেন, ইহা আমার দুঃস্বপ্নেরও অতীত।”
হর্ষ দুই করতলে আপন মুখ ঢাকিয়া ধীরে ধীরে রত্নখচিত কুট্টিমের উপরে বসিয়া পড়িলেন।
দীপান্বিতা তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহার স্কন্ধ স্পর্শ করিল। তাহার পরে সহজ স্বরে বলিল –“রাজ্যরক্ষায় মৈত্রী বিবাহ যদি একান্ত প্রয়োজন হয়, আপনি অবশ্যই দেবী দুর্গাবতীর পাণিগ্রহণ করুন মহারাজ – মহামন্ত্রী মাধবগুপ্ত পুষ্যভূতি সাম্রাজ্যের একান্ত হিতৈষী বরিষ্ঠ রাজপুরুষ — তাঁহার যুক্তি ভ্রান্ত হইতে পারে না, মোহের নাগপাশে আবদ্ধ থাকিয়া তাঁহার মন্ত্রণা অগ্রাহ্য করিবেন না।”
হর্ষ মস্তক উত্তোলন করিয়া দীন নয়নে দীপান্বিতার মুখপানে চাহিলেন।
স্খলিত কণ্ঠে কহিলেন — “আর আমাদের ভালবাসা? তাহার কি হইবে রত্নাবলী?”
দীপান্বিতা স্মিতমুখে কহিল -“ভালবাসা কেবল কামনা নহে প্রিয়, ভালবাসার অর্থ শ্রদ্ধা, স্নেহ, নিঃশর্ত সমর্পণ। আমি তোমাকে আমার সমস্ত অন্তর দিয়া গ্রহণ করিয়াছি, আপন মনোমন্দিরে বিগ্রহরূপে প্রতিষ্ঠা করিয়াছি — কিন্তু প্রেমের কারাগারে তোমাকে বন্দি করিয়া রাখিবার কোনও অভিপ্রায় আমার নাই, সে অধিকারও নাই। তুমি দেবী যশোমতীর সুযোগ্য পুত্র, পুষ্যভূতিকুলতিলক উত্তরাপথনায়ক, শতসহস্র নশ্বর শোকের সাগর তুমি হেলায় অতিক্রম করিয়া আসিয়াছ, তোমাকে কি স্মরণ করাইতে হইবে যে প্রকৃত ভালবাসার অর্থ বন্ধন নহে, মুক্তি?”
আপন অঞ্চল দিয়া হর্ষের অশ্রুলাঞ্ছিত মুখমণ্ডল সযত্নে মার্জনা করিতে করিতে দীপান্বিতা পুনরায় কহিল –“আমি কান্যকুব্জে তোমার অন্তঃপুরেই রহিলাম। তোমার রত্নাবলী দেবী রাজ্যশ্রীর সেবিকা হইয়া, তাঁহার সর্বক্ষণের অনুচরী হইয়া রহিল। তুমি তোমার প্রারব্ধ কর্ম স্ব-মর্যাদায় সুসম্পন্ন করো, শাক্যশ্রেষ্ঠ গোতম তোমার সহায় হউন।”
উপরোক্ত ঘটনার অনতিকাল পরে এক বর্ষণমুখর ধূসর সায়াহ্নে কান্যকুব্জ নৃপতি হর্ষবর্ধনের সহিত মৈত্রক রাজবংশীয়া ষোড়শী দুর্গাবতীর পরিণয় মহা আড়ম্বরে সুসম্পন্ন হইয়া গেল।
হর্ষের বিবাহের পরে অনধিক চারি বৎসরকাল মন্দাক্রান্তা ছন্দে অতিবাহিত হইয়াছে। পরিমিত এবং নিয়মিত তৈলসিঞ্চনে যন্ত্র যেমন নির্বিঘ্নে চালিত হয়, সম্রাটের একনিষ্ঠ নিরপেক্ষ পরিচালনায়, মহামন্ত্রী মাধবগুপ্ত ও অন্যান্য অমাত্যগণের সতর্ক তত্ত্বাবধানে পুষ্যভূতি রাজ্যের শাসনকার্যও সুষমরূপে নির্বাহ হইতেছিল।
সুসমঞ্জস ভূমি বন্টন, নমনীয় কর ব্যবস্থা, মনুষ্য তথা জীবজন্তুদিগের চিকিৎসালয় এবং সেবাস্থল নির্মাণ, কূপ ও দীর্ঘিকা খনন, নির্বিঘ্ন বাণিজ্যের প্রসার — সকলই মসৃণরূপে চলিতেছে। সীমান্তে নূতন কোনো উপদ্রবের আবির্ভাব ঘটে নাই। ইউয়ান চোয়াঙ অযোধ্যা এবং কৌশাম্বী দর্শন সম্পন্ন করিয়া শ্রাবস্তীর পথে নিষ্ক্রান্ত হইয়াছেন। হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট রাজার জীবনচরিতামৃত রচনা করিতেছেন।
রাজ্যশ্রী পূর্বেই বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হইয়াছিলেন, কিন্তু প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন নাই। তিনি রাজ অবরোধে স্বীয় মহলে অনুচরী দীপান্বিতা এবং দাসী পরিবেষ্টিতা হইয়া ধর্মগ্রন্থ পাঠ এবং নানাবিধ
দানধ্যানের মধ্য দিয়া শান্তিতে কালযাপন করিতেছেন।
কান্যকুব্জের প্রজারা সুখে আছে।
অপর্যাপ্ত সুখের কাননে কেবল একটি অপ্রাপ্তির কন্টক রাণী দুর্গাবতীর হৃদয়কে নিত্য ক্ষতবিক্ষত করিয়া ফিরিত — বিবাহের এত বৎসর পরেও তিনি সন্তানলাভ করিতে পারেন নাই।
বিবাহের সময় দুর্গাবতী কৃশকায় ক্ষীণতনু কিশোরী ছিলেন, এক্ষণেও সেইরূপই রহিয়া গিয়াছেন। বহিরঙ্গে কালের করচিহ্ন না পড়িলেও, তিনি যথেষ্ট পরিণতমনস্কা হইয়াছেন, তাঁহার রক্তাক্ত অন্তরের চিত্র আপনার ফুল্ল মুখাবয়বে তিনি অদ্যাবধি ফুটিতে দেন নাই।
তাঁহার পিতৃগৃহ বল্লভী হইতে আগত এক বয়স্কা দাসী ব্যতীত কেহই জানিতে পারে নাই, যে অদ্যাপি সম্রাট হর্ষবর্ধন তাঁহার পরিণীতা পত্নীর সহিত সমশয্যায় শয়ন করেন নাই – রাণী এখনও কুমারী।
এক প্রসন্ন হৈমন্তী দ্বিপ্রহরে সভাকার্য্যের অবকাশে রাজা হর্ষবর্ধন আপন নিভৃতকক্ষে বিশ্রাম করিতেছিলেন। হেনকালে দাসী সমভিব্যাহারে রাণী দুর্গাবতী সেই স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। প্রহরীদিগকে উপেক্ষা করিয়া দুর্গাবতী সপ্রতিভ চরণে বিশ্রামগৃহে প্রবেশ করিয়া একেবারে রাজার সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইলেন। হর্ষ নিদ্রা যান নাই, কোনও কিছুর চিন্তায় আত্মমগ্ন ছিলেন। অকস্মাৎ সম্মুখে পত্নীকে অবলোকন করিয়া ঈষৎ চমকিত হইয়া কহিলেন –“তুমি? এখানে?”
দুর্গাবতী চপলকণ্ঠে উত্তর দিলেন –“আসিবার নিষেধ রহিয়াছে বুঝি?”
হর্ষবর্ধন মুখ ফিরাইয়া ব্যজনকারী ভৃত্যদের অবকাশে যাইবার আদেশ করিলেন। দুর্গাবতীর ইঙ্গিতপূর্ণ কটাক্ষ অনুসরণ করিয়া দাসীও নীরবে কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া গেল। রাণী তাঁহার স্বামীর পার্শ্বে উপবেশন করিয়া বিনা বাক্যব্যয়ে অলঙ্কারশোভিত মৃণালভুজ রাজার কণ্ঠে স্থাপন করিলেন। তাহার পর কোমল অঙ্গুলি দ্বারা হতচকিত হর্ষের মুখ আপনার দিকে বলপূর্বক ফিরাইয়া অভিমানী কণ্ঠে কহিলেন –“আমি কি আপনার চক্ষুশূল? তাহলে আদেশ করুন, আমি এই দণ্ডে বল্লভীরাজ্যে ফিরিয়া যাইতেছি।”
হর্ষের স্মরণ হইল, আনুমানিক চারি বৎসর পূর্বে আরও একটি নারীর নিকট তিনি বাগযুদ্ধে পরাজিত হইয়াছিলেন। সে সামান্যা রমণী ছিল, কিন্তু দুর্গাবতী রাজকুলোদ্ভবা — দীপান্বিতার তুলনায় তাঁহার তেজ এবং স্বাভিমান দুই-ই অধিক। রাজা প্রমাদ গণিলেন। পত্নীর বাহুবন্ধন হইতে কৌশলে আপনাকে মুক্ত করিয়া তিনি কক্ষটির প্রায়ান্ধকার কোণে রক্ষিত তালপত্রের পুঁথিগুলির দিকে অগ্রসর হইলেন। তাহার পর মুখ ফিরাইয়া দুর্গাবতীকে উদ্দেশ্য করিয়া স্মিতমুখে কহিলেন -“রাণী, এই যে তালপত্রের রাশি দেখিতেছ, এইগুলির কারণেই আমি তোমার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দিতে অক্ষম হইয়াছি। অন্যায় করিয়াছি, তোমার ক্ষমা পাইব কি?”
দুর্গাবতীর কৌতূহল হইল। তিনি অগ্রসর হইয়া প্রশ্ন করিলেন -“এগুলি কি, রাজন?”
হর্ষ সানন্দে দুই করতল ঘর্ষণ করিতে করিতে বলিয়া উঠিলেন –“আমি একটি নাটিকা রচনা করিতেছি রাণী — ঘটনাবলীর জটিলতায় কাহিনীটি উপস্থিত কিঞ্চিৎ দীর্ঘ হইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু নাটিকা সন্তোষজনকরূপে সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি রাজকার্য্য ব্যতিরেকে অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরাইতে অপারগ হইয়াছি” —
দুর্গাবতীর কৌতূহল বৃদ্ধি পাইল। তিনি প্রশ্ন করিলেন –“নাটিকা? কেমন কাহিনী? শুনিতে আগ্রহবোধ হইতেছে।”
পত্নীর সাহিত্যানুরাগ অনুমান করিয়া হর্ষ প্রীত হইলেন, সোৎসাহে জানাইলেন, “রাজা উদয়ন এবং রাণী বাসবদত্তার কাহিনী — কিন্তু সাধারণ রাজা-রাণীর উপাখ্যান হইতে ইহা স্বতন্ত্র।”
রাণী জিজ্ঞাসা করিলেন -“আপনার রচিত নাটিকার নাম কি, রাজন?”
কাহিনীর নামোচ্চারণ করিতে গিয়া রাজার কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসিল, ওষ্ঠাধর কম্পিত হইল, কর্ণমূল আরক্ত হইয়া গেল। তিনি কষ্টে আত্মসংবরণ করিয়া উত্তর করিলেন —
“রত্নাবলী”।
রাণী দুর্গাবতী বিদুষী না হইলেও নির্বোধ নহেন। রাজার মুখাবয়বে আবেগের উদ্ভাস তাঁহার দৃষ্টি এড়াইল না। তাহার পরেই বিদ্যুচ্চমকের মতো তাঁহার স্মরণ হইল, দেবী রাজ্যশ্রীর অনুচরী দেয়াসিনী দীপান্বিতাকে তাঁহার ননদিনী রত্নাবলী বলিয়া সম্বোধন করেন। একবার দুর্গাবতী রাজ্যশ্রীকে কথাচ্ছলে প্রশ্ন করিয়াছিলেন, যাহার নাম দীপান্বিতা তাহাকে অন্য নামে সম্বোধিত করিবার হেতু কি? উত্তরে রাজ্যশ্রী স্নিগ্ধস্বরে বলিয়াছিলেন, উক্ত নামটি রাজা হর্ষের দান — প্রাণাধিক প্রিয় ভগিনীকে অসুস্থতা হইতে আরোগ্যে সাহায্য করিবার বিশেষ পুরস্কার।
বিগত চারি বৎসরের অস্বচ্ছতা দুর্গাবতীর নিকট ক্রমশ স্পষ্ট হইয়া উঠিল।
তাঁহার পিতৃগৃহ বল্লভীরাজ্য হইতে আগত পুরাতন অন্তরঙ্গ দাসী সোমদত্তা হর্ষের অবরোধের অন্যান্য দাসীদের যে সকল জল্পনা শুনিয়া ফিরিত, অবসরে নিজ প্রভুকন্যার সমীপে আসিয়া তাহার নির্ভুল বর্ণনা করিত। সোমদত্তার মুখে তিনি বহুবার দীপান্বিতা নাম্নী নারীর সহিত রাজার অস্পষ্ট সম্পর্কের কথা শ্রবণ করিয়াছিলেন। তবে রাণী স্বচক্ষে কিছু অবলোকন করেন নাই বলিয়া গুঞ্জনের সত্যাসত্য নিরূপণ করিতে অপারগ হইয়াছিলেন। রাজ্যশ্রী তাঁহার সমবয়স্কা হইলেও স্বভাবে ব্যবহারে সম্পূর্ণ বিপরীত। দুর্গাবতীর মনোজগত হইতে রাজ্যশ্রী বহুদূরের অধিবাসিনী ছিলেন, রাণী তাঁহার এই তপস্বিনী ননদিনীকে যথেষ্ট সমীহ করিয়া চলিতেন।
কোনও অবস্থাতেই রাজ্যশ্রীকে এই বিষয়ে কোনও প্রশ্ন করিবার স্পর্ধা তাঁহার হয় নাই।
দীপান্বিতাকে দুর্গাবতী অবশ্য দেখিয়াছিলেন, কিন্তু ওই রুক্ষকেশী, অসুন্দরী, নগণ্যা রমণীকে দেখিয়া তাঁহার মনে কদাপি কোনওরূপ ঈর্ষা বা পরাজয়বোধের উদ্রেক হয় নাই।
আজ স্বামীর মুখনিঃসৃত তাঁহার স্বরচিত কাহিনীর নাম শুনিয়া এবং হর্ষের মুখভাব দেখিয়া দুর্গাবতীর চক্ষে আঁধার ঘনাইয়া আসিল, প্রফুল্ল মুখশ্রী মেঘাচ্ছন্ন হইল, প্রবল ক্রন্দনোচ্ছ্বাসে অন্তর প্লাবিত হইবার উপক্রম করিল।
তিনি রাজাকে সংক্ষিপ্ত অভিবাদন জানাইয়া দ্রুতগতিতে স্থানত্যাগ করিলেন।
রাজা হর্ষবর্ধন দুর্গাবতীর এই আকস্মিক আবির্ভাব এবং নিষ্ক্রমণের কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ খুঁজিয়া পাইলেন না। কিন্তু তাঁহার ললাট কুঞ্চিত হইল। আপন ষষ্ঠেন্দ্রিয় তাঁহাকে সতর্ক করিয়া বলিয়া গেল – তোমার সংসারাকাশে মহাদুর্যোগ ঘনাইয়া আসিতেছে, তাহার সম্মুখীন হইবার জন্য প্রস্তুত হও।
(ক্রমশ)
PrevPreviousশিষ্য তথা ছাত্রদের শিক্ষারম্ভ ও শিক্ষাদান – চরক- ও সুশ্রুত-সংহিতা (২য় ভাগ)
Nextসিয়াঙ্, তোমাকে বাঁচাতে মোরা যুদ্ধ করিNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

Memoirs of a Travel Fellow Chapter 3: Hills, Resistance and Hope: Odisha

July 8, 2025 No Comments

For me Odisha is a land of contradictions, and the story starts from a rainy day when I came to Bhawanipatna, Kalahandi, Odisha from Chattisgarh.My

গণতান্ত্রিক পথেই আমরা এতদিন স্বর তুলেছি, আগামী দিনেও তুলব, যতদিন না ন্যায়বিচার পাই

July 8, 2025 No Comments

৭ জুলাই, ২০২৫ ২০২৪ এর ৯ আগষ্ট, কলঙ্কজনক ইতিহাস রচিত হয় এই কলকাতায়,এই বাংলায়। মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পি জি

Memoirs of a Travel Fellow Chapter 2: Chhattisgarh: Where Red Dust Meets Red-Green Flags

July 7, 2025 No Comments

When I first scanned the list of centres offered through the travel fellowship, one name leapt out at me: Shaheed Hospital—a Martyrs’ Hospital. There was

অভয়া আন্দোলন: রাজপথ থেকে এবার ছড়িয়ে পড়ুক আল পথে

July 7, 2025 No Comments

৫ই জুলাই

July 7, 2025 No Comments

তেরো বছর আগে এইরকমই এক বর্ষাদিনে শত শত বাঙালির হাত একটি শবদেহ স্পর্শ করে শপথ নিয়েছিল — পশ্চিমবঙ্গকে নৈরাজ্যের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া থেকে প্রতিহত করতে

সাম্প্রতিক পোস্ট

Memoirs of a Travel Fellow Chapter 3: Hills, Resistance and Hope: Odisha

Dr. Avani Unni July 8, 2025

গণতান্ত্রিক পথেই আমরা এতদিন স্বর তুলেছি, আগামী দিনেও তুলব, যতদিন না ন্যায়বিচার পাই

Abhaya Mancha July 8, 2025

Memoirs of a Travel Fellow Chapter 2: Chhattisgarh: Where Red Dust Meets Red-Green Flags

Dr. Avani Unni July 7, 2025

অভয়া আন্দোলন: রাজপথ থেকে এবার ছড়িয়ে পড়ুক আল পথে

Abhaya Mancha July 7, 2025

৫ই জুলাই

Dr. Sukanya Bandopadhyay July 7, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

565975
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]