বিষয়টি খুবই সুস্পষ্ট। পরিস্থিতিটিও যাকে বলে–এক্কেবারে জলবৎ তরলং।
অর্থাৎ ধরা যাক আপনার নিকটাত্মীয় মা/রা গেছে বীভৎস নৃশংসতার হতবাক সাক্ষী হয়ে; অকালে। অথবা, অথবা…বাদ দিন, …ধরে নিন স্রেফ এটুকুই যে ঐ যে আপনার ‘প্রাণের আপন-জন’, সে বেচারি এমনিতেই মরে গেছে রোগে ভুগে ভুগে। আর মরে গেছে, সারদা …সরি… শারদ-প্রাতে। চলে গেছে, না–ফেরার দেশে।
সে, হতে পারে আপনার স্বামী, আপনার পুত্র কন্যা, আপনার দাদুদিদা অথবা আপনারই ব্যর্থ প্রেমিক। তো সেই অভিশপ্ত দিন যদি সুজন দৈবাদিষ্টে চলে আসে আপনার জীবনে তখন, ভাবতে পারবেন তো ঢাকিদের কষ্ট? ঢাক বাজায় যারা উৎসবে?স্রেফ ওইটুকুই যাদের ইনকাম? ওই তখনও ছুঁয়ে যাবে তো আপনার হৃৎপিণ্ডে, গরিবের জন্য ছটফটানি? প্যান্ডেল নির্মাতা মিস্ত্রীদের জন্য? দুর্গা পুজোর বাঁশ আর ত্রিপল সাজায় যারা? নাকি আপনি তখন বুক চাপড়ে কেবলই বলবেন আর বলেই যাবেন– বাবু রে… ওওও বাবা আমার … সোনা… একটিবার ফেরত আয় না রে এবার সোনামণি। বুকে! আয়, আয় না রে…এই যে দ্যাখ আঁচল বিছিয়ে অপেক্ষায় অপেক্ষায় আছি আঙিনায়…আয় না রে,এইবার তো আয়।
হ্যাঁ। বিষয়টি এরকমই। হয় আপনি এই সুপরিকল্পিত হ/ত্যা কে ব্যক্তিগত ভাবছেন; অথবা বক্কা মারছেন পড়শীর ছেলের মৃত্যুর মৎসমুখীতে গিয়ে মুখরোচক, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের তাৎপর্য নিয়ে।
এটুকুই।
আপনি পাবদা মাছ আরেক পিস চাইতে চাইতে যখন ভাবছেন, এই যে লোক নিমন্ত্রণ করে দাওয়াত দেয়া হয়, এ বড় নির্লজ্জ এক প্রথা; আর ওই ওই সে লহমাতেই ডুগরে কাঁদছে নিহত সন্ততির জননী দিগ্বিদিগ ভুলে সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক উৎসব ভুলে।
এটাই।
যদি মনে করেন আপনি যে, এই হ/ত্যা পড়শীর দুয়ারে ঘটেছে তবে বিন্দাস, –ঢাকি, প্যান্ডেল, গরিব, আহা উহু করে যান।
আর যদি মনে করেন যে এইবারে চলে গেছে, ম/রে গেছে আপনারই আত্মীয় তাহলে স্রেফ বুক চাপড়ে ক্রুদ্ধ মাতার মতো হয়ে থাকুন একবগ্গা।
এ শারদীয় উৎসব তো অসুরদলনীর।
সাক্ষী থাকুক এ প্রভাত যে, আমি তাকে কখনো আর পূজা করব না, যদি না অসুর নামক বীভৎস যারা তারা–
দলিত,
অবদমিত
মৃত,
বহিষ্কৃত
আর ধিক্কৃত
না হচ্ছে।
হ্যাঁ। এ আমার একান্ত ব্যক্তিগত দুর্গোৎসব। আমি ঢাকিদের কথা তো দূরস্থান এমনকি জননীর কথাও ভাববো না।
আমার শোক চলছে।
আমার জমছে ক্রোধ।
দুনিয়ার যা হয় হোক।
আমি চাই স্রেফ আমার বোন যে জগতে মরেছে যে জগৎ সমূলে উৎপাটিত হোক।
(নিচের ছবিটি এক হতভাগ্য ডাক্তারের। দিন বদলের খোয়াব দেখেছিল যে বছর ষোল পূর্বে।)