অন্যের উপর খবরদারি এবং দাদাগিরি করাটা বোধহয় ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ বা বর্তমান মনুষ্যপ্রজাতির জিনগত বদভ্যাস। আমাদের শহরে বা গ্রামে থাকতে ভালো লাগে এবং সুবিধে হয় বলে জঙ্গল ধ্বংস করে শহরের পর শহর, গ্রামের পর গ্রাম তৈরি করে করেছি। অন্য জীবজন্তু, গাছপালার খাদ্য ও বাসস্থান দখল ও ধ্বংস করে তাদের দিয়েছি চৌপাট করে।
এক গোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠীর পোষ্য, শস্য, নারী, শিশু, বাসস্থান, ক্ষেতখামার দখল করে নিয়ে ধ্বংস করে দেয় প্রতিপক্ষকে।
এক রাজ্য অন্য রাজ্যকে, এক দেশ অন্য দেশ কে দখল করে সাম্রাজ্য তৈরি করে। অনেক বছর ধরে সেই সাম্রাজ্য ও উপনিবেশ-কে ভোগ করে, শাসন করে। অবশ্য তারপর কালের নিয়মে একদিন কালের গর্ভেই সেসব বিলীন হয়ে যায়।
তবুও এসব অন্যায়কে মান্যতা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই লেখা হয়, ‘বীরভোগ্যা বসুন্ধরা’।
বিজয়ী গোষ্ঠীর সামাজিক রীতিনীতি, জীবনশৈলী, সংস্কার, খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় বিজিত গোষ্ঠীর উপরে।
এবং ভাষা। দুহাজার মাইল দূর থেকে ৫০০ বছরের পুরোনো একটা ভাষা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল প্রায় ১৩০০ বছরের পুরনো ভাষার উপরে- যে ভাষায় পৃথিবীর ২৫ কোটি লোক কথা বলে। ৫ লক্ষ বাঙলাভাষী নিরীহ মানুষ, অসংখ্য বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনার প্রাণ এবং সর্বোপরি ৩০ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বজায় ছিল একটা ভাষার স্বাধীনতা। সেই ভাষাযুদ্ধের স্মরণেই ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের বর্তমান উত্তরসূরীরা উর্দুভাষী পাকিস্তানীদের অত্যাচারের কথা আজকাল ভুলে গেছে- সে অন্য কথা।
এখন আবার এদেশে শুরু হয়েছে ভাষাগত পেশীশক্তির দাপট। আঞ্চলিক ভাষাভাষীদের করের টাকায় চলা সমস্ত কেন্দ্রীয় সংস্থায় বাধ্যতামূলক ভাবে হিন্দীর দাপাদাপি। সমস্ত আঞ্চলিক ভাষা ব্রাত্য। শক্তিশালী দক্ষিণীরা এই ভাষাগত আগ্রাসন রুখে দিয়েছে সাময়িক।
এখন প্রশ্ন, বাংলা ভাষাভাষীরা কি আগ্রাসীদের সাথে ভাষা ও সংস্কৃতিগত আপোষ করে নিয়ে নিজেদের ভাষাকে অহোম, কোচ, ডিমাসা ইত্যাদি আরো আড়াইশো মৃতবৎ ভারতীয় ভাষার সারণীতে নিয়ে ফেলবেন, নাকি ঘুরে দাঁড়াবেন।