ইদানীং কালে নতুন আলোচ্য বিষয় হিসেবে লিকুইড বায়োপসি ব্যাপার টি উঠে এসেছে ক্যান্সারের মৌলিক গবেষণায়। ক্যান্সারের ইনভেস্টিগেশনের প্রচলিত পদ্ধতিতে ইমেজিংর পাশাপাশি চিরাচরিত ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন এবং হিস্টোপ্যাথলজি বা বায়োপসি বহুল প্রচলিত এবং ভারতের মতো দেশে ক্যান্সারের বিস্তারিত ধরন, কেমোথেরাপি র সেনসেটিভিটি র ব্যাপারে জানার জন্য নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। কিন্তু চিরাচরিত বায়োপসি মানেই সেটি একটি ইনভেসিভ পদ্ধতি। যেখানে টিউমার সার্জারি অবশ্য প্রয়োজনীয়। শুধু তাই নয় একদম প্রথম স্টেজ টিউমার সবসময় ক্লিনিক্যালি ধরা পড়ে না। তাই সেইসব ক্ষেত্রে বায়োপসি র ভূমিকা ও থাকে না। চিরাচরিত বায়োপসি তাই স্ক্রিনিং পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।
লিকুইড বায়োপসি নিয়ে বলার আগে পুরোনো ইতিহাস ঘুরে আসা যাক। উনিশ শতকের মধ্যভাগে প্রথম রক্তে কোন অঙ্গে তৈরী হচ্ছে এমন টিউমারের কোষ শনাক্তকরণ করা সম্ভব হয়। এর নাম দেওয়া হয় সার্কুলেটিং টিউমার সেল। বস্তুত এই সার্কুলেটিং টিউমার সেল গুলো রক্তে এসে মেশে কোন বিশেষ টিউমার থেকে। এর সংখ্যা খুব কম হয়। প্রতি এক লাখ থেকে দশ লাখ লিউকোসাইটের মধ্যে একটি সার্কুলেটিং টিউমার সেল পাওয়া যায়। এই সার্কুলেটিং টিউমার সেল হলো ডিসট্যান্ট মেটাস্ট্যাসিস র কারণ। এরপর দীর্ঘদিন সার্কুলেটিং টিউমার সেল সংক্রান্ত গবেষণা মন্থর গতিতে এগোলেও এর গুরুত্ব নতুন করে একবিংশ শতাব্দীতে এসে বোঝা সম্ভব হয়েছে। শুধু সার্কুলেটিং টিউমার সেল ই নয় তার সাথে মৃত কোষ থেকে নির্গত ডিএনএ বা সার্কুলেটিং টিউমার ডিএনএ, এবং এক্সোজোম এই তিন ধরণের জিনিস কে রক্তে খুঁজে বের করা, সেল মেমব্রেনে বিভিন্ন অ্যান্টিজেন র এক্সপ্রেশন দেখা এবং সার্বিকভাবে রক্তে এদের মাত্রা নির্ধারন করার যে পদ্ধতি তাই লিকুইড বায়োপসি নামে পরিচিত। লিকুইড বায়োপসি র সুবিধে গুলি হলো:
১. এটি কোন ইনভেসিভ পদ্ধতি নয়।
২. ক্যান্সার ক্লিনিক্যালি শনাক্তকরণের বহু আগেই সার্কুলেটিং টিউমার সেল দ্বারা ক্যান্সার শনাক্তকরণ সম্ভব।
৩.শনাক্তকরণ করার পর সেই সার্কুলেটিং টিউমার সেল র অ্যান্টিজেন এক্সপ্রেশন এবং কেমোথেরাপির রেসপন্স র সম্পর্কে ধারনা করা।
৪. চিকিৎসা র পর একটা টিউমার কতটা রেসপন্স করলো সেটাও বোঝা সম্ভব লিকুইড বায়োপসি মাধ্যমে।
সার্কুলেটিং টিউমার সেল:
সার্কুলেটিং টিউমার সেল শনাক্তকরণ এখন সার্বিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি তে রক্ত থেকে টিউমার সেল কে প্রথমে আলাদা করা হয়। এই আলাদা করার পদ্ধতি গুলো হলো-
১. মেমব্রেন ফিলট্রেশন: সোজা কথায় আনুপাতিক হারে ছোট এবং বড় ছিদ্রের মাধ্যমে ছোট রক্ত কণিকা থেকে অপেক্ষাকৃত বড় টিউমার সেল কে ছেঁকে ফেলে আলাদা করে ফেলা।
২. লিউকোসাইট ডিপ্লিশন: রক্তে থাকা শ্বেত কণিকা গুলো কে নষ্ট করে ফেলার পর অবশিষ্ট টিউমার কোষ গুলিকে আলাদা করে ফেলা।
এ ছাড়াও নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে বিশেষ টিউমার কোষ কে শনাক্তকরণ এবং ন্যানো টেকনোলজি র প্রয়োগ ও করা যায়। সার্বিকভাবে একটু শক্ত হলে পাঠক চাইলেই বুঝতে পারবেন পুরো পদ্ধতি র ব্যাপারে।
এত কথা আলোচনা করার এটাই কারণ যে টিউমারের ধরন, অ্যান্টিজেন এক্সপ্রেশন সমস্ত কিছুর জন্য এতদিন টিস্যু কেটে হিস্টোপ্যাথলজি এবং ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি র সাহায্য নিয়ে করার প্রয়োজন হতো সেটা শুধু মাত্র আর পাঁচ টা সাধারণ পরীক্ষার মতো রোগীর শরীর থেকে রক্ত টেনেই করা সম্ভব।
শুধু তাই নয়। সার্জারির পর কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। তার সাফল্য কতটা এলো তা আর বোঝার উপায় থাকে না। কারণ মূল টিউমার টি ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে পরবর্তী কালে টিউমারের ফিরে আসার সম্ভাবনা বোঝার একমাত্র উপায় বর্তমানে সার্কুলেটিং টিউমার সেল শনাক্তকরণ।
সার্বিকভাবে এই পদ্ধতির সমস্যা হল লো স্পেসিফিসিটি। অর্থাৎ রক্তে সার্কুলেটিং টিউমার সেল না পেলেই বলা যায় না টিউমার নেই বা পরবর্তী ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সার্কুলেটিং ডিএনএ: আগের যে জায়গাতে সমস্যা র শুরু তার সমাধান পরবর্তী কালে মিললো সার্কুলেটিং ডিএনএ শনাক্তকরণের মাধ্যমে। যেকোন মৃত কোষ থেকে বেরিয়ে আসা ডিএনএ এসে রক্তে মেশে। সাধারণ কোষ থেকেও সার্কুলেটিং ডিএনএ রক্তে মেশে যার পরিমাণ ১০ ন্যানোগ্রাম থেকে ১০০ ন্যানোগ্রাম প্রতি মিলি লিটার। সেই ডিএনএ শনাক্তকরণ র সেনসেটিভিটি অনেক বেশী। অর্থাৎ অতি সামান্য পরিমাণ সার্কুলেটিং ডিএনএ ও সফল ভাবে শনাক্তকরণ করা সম্ভব। সার্কুলেটিং ডিএনএ খুব ছোট ছোট ডিএনএ র টুকরা যার দৈর্ঘ্য ১৮০ থেকে ২০০ বেস পেয়ার।
সার্কুলেটিং ডিএনএ র মাত্রা রক্তে বাড়ে কোষের মৃত্যু বাড়লে। অর্থাৎ যেকোন অবস্থা যাতে কোষের মৃত্যু বাড়ে তাতেই সার্কুলেটিং ডিএনএ বাড়ে। টিউমার ছাড়াও ইনফেকশন, ট্রমা, অত্যধিক পরিশ্রমে এর মাত্রা বাড়বে। সুতরাং সার্কুলেটিং ডিএনএ র মাত্রা নির্ধারণের সাথে সাথে ডিএনএ সিকোয়েন্স করাও জরুরী। এই ডিএনএ সিকোয়েন্স এ এখন যুগান্তকারী নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্স একটা বিশাল বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। যার ফলে যেকোন টিউমারের মিউটেশন কেমোথেরাপি র রেসপন্স সমস্ত কিছু এই একটা টেস্ট দিয়েই বোঝা সম্ভব।
এছাড়া এপিজেনেটিক সিকোয়েন্স আরো অন্যান্য অধিক জটিল বিষয় আর আলোচনাতে গেলাম না।
গোটা বিষয়টি যতটা সহজভাবে বলা যায় বললাম।
এই পদ্ধতি আগামী দিনে কার্যকরী হলে তথাকথিত হিস্টোপ্যাথলজি এবং মাইক্রোস্কোপে দেখে ক্যান্সার নির্ণয় ইতিহাস হয়ে যাবে এবং সেই দিন আর বেশী দিন নেই যখন একটা সিরিঞ্জে করে রক্ত টেনেই সমস্ত ক্যান্সার ইনভেস্টিগেশন সম্পূর্ণ হবে।
Very informative write up. Short and succinct.