দু-মহলা রাজবাড়ীতে সাজ সাজ রব। আর মাত্র দু দিন। তারপরে রাজনন্দিনী যাত্রা করবে স্বয়ম্বর সভায়। রাজকুমারীকে ঘিরে সখীর দল শেষমুহূর্তের রূপটানে ব্যস্ত। এ রাজবাড়ীর দু-মহলেই নিয়মিত ব্যবধানে এই অনুষ্ঠান ঘটে চলেছে। রাজমহিষীর নির্দিষ্ট করা এক একজন রাজকন্যার স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করা হয়। সম্পূর্ণ যৌবনবতী সেই রাজনন্দিনী এগিয়ে চলে নির্দিষ্ট দিনে স্বয়ম্বর সভার দিকে। রাজবাড়ীর বাইরে ছোট্ট অলিন্দ পথে আর এক মহল। সখীপরিবৃতা রাজকন্যে কিন্তু একাকীই ঐ অলিন্দ-পথের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছয়। মাত্র চব্বিশ ঘন্টার সে আয়োজনে হাজির শতাধিক রাজপুত্র।সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাজপুরুষটি এগিয়ে আসে সালংকারা রাজকুমারীর পাশে। পাণিপ্রার্থনা মঞ্জুর হয়। সলাজ ব্রীড়াবনত রাজকন্যে তার সাথীকে নিয়ে ঐ ক্ষুদ্র পরিসর ছেড়ে উপনীত হয় সংলগ্ন এক বিশাল মহলে। সেখানে ফুলশয্যার সব আয়োজন সম্পূর্ণ। সেই সফেন রক্তিম শয্যায় শুরু হয় দুই সত্ত্বার এক সুদীর্ঘ মিলনসজ্জার। ন’মাস সাত দিনের এক নতুন জীবনের আবাহন।
কিন্তু এ তো কতিপয় সুলগ্না রাজতনয়ার সৌভাগ্য-লিপির কথা কাহিনী। ঐ রাজবাড়ীর অন্দরে তো নিয়মিত ব্যবধানে রাজকন্যা যৌবনবতী হওয়ামাত্র প্রায় প্রতি মাসেই রাজমহিষীর নির্দেশে একজন করে রাজকন্যা স্বযম্বর যাত্রা করে। বড় অদ্ভুত রাজনিয়ম।
একবার স্বয়ম্বর যাত্রা করলে রাজমহলে ফেরার পথ বন্ধ। প্রায় অষ্টপ্রহর ঐ অলিন্দে সালংকারা রাজনন্দিনীর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপেক্ষাই সার।রাজপুত্রের দল সেই জটিল বন্ধুর পথ পেরিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে, সুনির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হতে অপারগ হয়। ব্যর্থ-মনোরথ রাজনন্দিনী তখন ছিন্নমূল লতার ন্যায় ফুল ও শয্যা সহ আত্মবিসর্জনই রাজমাতা নির্দেশিত রানী কাহিনী। রক্তিম ধারাস্রোতে এ স্বযম্বর সভার বিসর্জন।
ইদানীং রাজমহলেও গুঞ্জন। বিদ্রোহের আঁচ। অগ্রজ রাজনন্দিনীদের রাজপুত্রের অপেক্ষায় বারবার আত্মবিসর্জন বোধহয় মেনে নিতে পারছে না, কিছু কন্যারা। প্রয়োজনে বহু প্রাচীন এ প্রথার বাধ্যবাধকতার বাইরে আসতে চায়। রাজমহলে তাই জোর কানাঘুষো, রাজমহলের বাইরে কোন এক বদ্যি চক্কোত্তি ঘটক সম্প্রদায় রাজদুহিতার কান্নায় দ্রবীভূত হয়ে এক মিলনমেলার আয়োজন করেছে।ইদানীং বয়সের ভারে ন্যুব্জ রাজমাতার নির্দেশ অমান্য করে কিছু পূর্ণ যুবতী রাজকন্যে পথ পরিবর্তন করে এক ভিন্ন পথে রাজপ্রাসাদের বাইরে সেই মিলনমেলায় হাজির। বদ্যি-বামুনের হাত ধরে তার প্রাণস্পদকে আহ্বান জানাচ্ছে। প্রেমিকের কাছে আত্মসমর্পণের পর ফিরে আসছে রাজপ্রাসাদের গর্ভগৃহে। নতুন বাসরসজ্জায় এক নতুন যুগের প্রাণের আবাহনে। এও তো জীবনেরই জয়গান।
-––——————–
সেদিন চেম্বারে এক ভদ্রমহিলা তাঁর ন’বছরের মেয়েকে নিয়ে এসে বললেন, দেখুন ডাক্তারবাবু মাত্র ন’বছর বয়েস এখনই শুরু হয়ে গেছে। আপনার হাতেই তো সিজার।
প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, এটাও কি সিজারের রিমোট কম্প্লিকেশন ভাবছে! যাই হোক ক্রন্দনরত ভীত সন্ত্রস্ত মেয়েটির দিকে তাকালাম। যে গল্প বলে ক্রন্দনরত মেয়েটির মুখে হাসি ফুটিয়েছিলাম,
তারই একটি সালংকারা রূপ প্রকাশের ইচ্ছে হোল।
হ্যাঁ, আত্মাহুতি দেওয়া রাজকুমারীর যথাযথ পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য অবশ্যই স্যানিটারী প্যাডের সুষ্ঠু ব্যবহারের কথাও বুঝিয়ে ছিলাম।