করোনা রোগীর সংখ্যা নিম্নমুখী, এটা আশার কথা। এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে এক শ্রেণীর বেসরকারি বৃহৎ পুঁজির হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার উচ্চ বিল! যে “বিল” সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটা অবশ্য বিল নয়, আনুমানিক খরচের একটা নমুনা পত্র। কিন্তু কিছু আসল খরচের হিসাব দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি, এর রাশ টানতে স্বাস্থ্য কমিশন একটি কমিটি গঠন করেছেন যাঁরা এই উচ্চ ব্যয় সম্পর্কে কমিশনকে পরামর্শ দেবে। কমিশন কোয়াসী-জুডিশিয়াল বডি, ইচ্ছা করলে পরামর্শদাতা কমিটি গঠন করতেই পারেন। প্রশ্ন হল কমিটির চেয়ারম্যান-সহ চারজন সদস্য বেসরকারি হাসপাতালের সাথে যুক্ত, চেয়ারম্যান নিজে একটি বৃহৎ পুঁজি হাসপাতালের ডিরেক্টর। সাধারণ জ্ঞান থেকে বলা যেতে পারে যে এই রকম স্বার্থ সঙ্ঘাত-দুষ্ট কমিটি কমিশনের প্রতি মানুষের মনে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে। মাননীয় বিচারপতি কমিটি গঠন পুনর্বিবেচনা করলে সংশ্লিষ্ট সকলে আশ্বস্ত হতে পারবেন।
কর্পোরেট হাসপাতালের ব্যালান্স সিট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গেছে যে, মোট আয়ের মাত্র ত্রিশ শতাংশ সরাসরি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রান্ত খরচ। আনুষঙ্গিক খরচ এত হাস্যকর রকম বেশি যে সংস্থাগুলো তার বিশদ বিবরণ পাব্লিক ডোমেনে রাখার সাহস করেন নি। বলা বাহুল্য “শয়তান ডাক্তাররা” এর সামান্য ভগ্নাংশও পান না!
সম্প্রতি একজন যুবক চিকিৎসক মারা গেছেন এই রকম একটি হাসপাতালে। শোনা যাচ্ছে তার নাকি 23 লাখ টাকা বিল হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট সংস্থা সেই বিল মকুব করেছে। বড় বিস্ময়ের ব্যাপার! হাসপাতালের সাথে যুক্ত একজন কর্মচারী সেই হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন না? তাঁরা শুধু “সেজে দেবেন, নিজে খাবেন না”!! নার্সিং-এর মেয়েরা এসব হাসপাতালে অসুস্থ হলে তাদের ESI-তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, এই সব কর্মচারীদের স্পর্শও যেন ওদের নামী দামী হাসপাতালে না লাগে!! বছর খানেক আগে এইরকম একটি হাসপাতালে একজন সেবিকা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। অথচ, বাইপাসের হাসপাতালগুলির কিছু শয্যা তো বিনামূল্যে দেওয়ার কথা, তাঁরা সরকারের কাছে কিনা এই শর্তে জমি পেয়েছিলেন!
আমরা চাই সরকার নিজস্ব পরিকাঠামো বৃদ্ধি করুক। বেসরকারি হাসপাতালগুলি মোট শয্যার অন্ততঃ ৪০ শতাংশে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিকিৎসা দিক- সেই খরচও সরকার বহন করুক। কমিশন সম্পর্কে আমাদের কোন মোহ নেই। কমিশনের বেশির ভাগ চিকিৎসক সদস্যের স্বার্থের সংঘাত আছে।
স্বাস্থ্য মানুষের অধিকার। সে সব নিয়ে ফেসবুকের বাইরে কোন আলোচনা নেই, নেই কোন প্রতিবাদ। ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত বাঙালী কি ধর্মপুস্তকে মুখ গুঁজে সব কিছু জলাঞ্জলি দেবে নাকি আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে? মহামারি ধর্ম দেখে না, বর্ণ দেখে না, রাজার প্রাসাদ থেকে গরিবের কুঁড়েঘরে তার অবাধ যাতায়াত, মসজিদ-মন্দির-গির্জা সব জায়গায় সে ইচ্ছামত বিচরণ করছে। একুশ শতকের ধর্ম হল বিজ্ঞান। বৈজ্ঞানিক সমাজ প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে মুক্তি নেই। ধর্ম পুস্তকগুলো বিসর্জন দিয়ে মানবতা প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে!
আমি তো আগেই বলেছি যে, ওগুলো হাসপাতাল নয়। কসাইখানা। ওখানে যারা স্বাস্থ্য ব্যবসা করে তারা মনুষ্য পদবাচ্য নয়। কসাই বিশেষ। মানুষের গলা কেটে টাকা আদায় করে। এ সম্পর্কে আমি বিগত কয়েক বছরে অনেকগুলো কপি পেস্ট করেছি। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা এখন এরাজ্যে সর্বোচ্চ লাভজনক ব্যবসা। ওদেরকে ডেকে এনে জমি দিয়ে ব্যবদায়ে নিয়োগ করেছিলেন পূর্বতন বাম সরকার। ওরা হেলথ ইন্ডাস্ট্রির মালিক। টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা বিক্রি করে থাকে। এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে মুরগি বানিয়ে জবাই করে থাকে। কে বাধা দেবে —? ওই সব প্রাইভেট হাসপাতালে বেশ কিছু স্বঘোষিত ডাক্তার আছেন,তাঁদেরকে ডাক্তার ভাবতে ঘেন্না হয়। অথচ দেখবেন তাঁরা কলকাতার বিগ মিডিয়া হাউসে নিজেদের হেড অফিস খুলেছেন। বিগ মিডিয়া ওঁদেরকে পুজো করে। আর সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তর তাঁদের মুখেই ঝাল খায়। এই ট্র্যাডিশন শুরু হয়েছিল 1990 দশকে। চলবে আগামী 100 বছর।