– নামটা কেমন শোনাচ্ছে স্যার। পুরনো ট্রাঙ্কের মতো মর্চে ধরা।
– অর্ধনারীশ্বর?
– হ্যাঁ ।
– তুমি কী সাজেস্ট করছ?
– ভাবছি।
– দ্যাখো, অর্ধনারীশ্বরের কনসেপ্টটা অনেক পুরনো। অর্ধেক পুরুষ, অর্ধেক প্রকৃতি। শিবের চেহারাটা দেখোনি?
– বাঘছাল পরা ইয়ে বলছেন তো স্যার?
– উজবুক! ঋতুপর্ণ ঘোষের উপর ডকুমেন্টারি ফিল্ম করবে আর তৃতীয় লিঙ্গ কী জানো না? শিবের যে রূপটা আমরা দেখি ওটাই তো অর্ধনারীশ্বর। শিবের ডান কানে খেয়াল করেছ ?
– বাসুকি সাপের কুন্ডল। ইয়ার রিং।
– ইয়েস। বাঁ কানে মেয়েদের সোনার দুল।
– স্যার, ঋতুপর্ণের ফিল্মমেকিং কেরিয়ারটা কীভাবে স্ক্রিপ্ট করেছি যদি একটু দ্যাখেন তো ভাল হয়। এমনি লকডাউনের বাজারে মাস্ক পড়ে শুটিংয়ে বড্ড ঝামেলা ।
– আরে, ওগুলো তো সবাই রাখবে ডকু ফিচারে। ঘুরে ঘুরে সেই একই কথা। ‘উনিশে এপ্রিল’ বাংলা সিনেমার আবেগঘন ছবি, অমুক তমুক। বাঙালির ড্রয়িংরুমে ঢুকে পড়ল রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস ‘চোখের বালি।’
– হুম।
– চুপচাপ মাথা নাড়লে হবে? তুমি না অ্যাসিস্ট্যান্ট স্ক্রিপ্ট রাইটার?
– একটু সামারি করে দিন স্যার। এক্স্যাক্টলি কী লিখব।
– দ্যাখো, ঋতুপর্ণ ঘোষের ঐ দিকটা হাইলাইট করো। থার্ড জেন্ডার রিকগনিশনের দিকটা। ওঁর আগে আমরা এই তৃতীয় লিঙ্গ নিয়ে আড়ালে আবডালে ফিসফিস করতাম।
-মানে এরকম যাঁরা সেলিব্রিটি, ধরুন ঐ যে নামকরা লেখক থুড়ি লেখিকা, তারপর কলেজের প্রিন্সিপাল এঁদের তো ?
– ইয়েস। সেইসব বিখ্যাত কয়েকজনের ইন্টারভিউ নাও। এঁদেরকে মেন স্ট্রিমে ইনক্লুড করার জন্য ঋতুপর্ণর কম চেষ্টা ছিল না। হি ওয়জ আ জিনিয়াস।
– বলছি স্যার, এঁরা তো নিজেদের যোগ্যতায় সেই চেয়ারগুলো পেয়েছেন। এখন এলজিবিটি বলে দাগিয়ে দিলে কি ঠিক জাস্টিস হবে?
– সাহস কম নয় তো তোমার! মুখে মুখে তর্ক করছ! ঋতুদা আমার কত ক্লোজড ছিল জানো! কতোদিন একসঙ্গে বসে আড্ডা দিয়েছি। তুমি ওঁকে কী বুঝবে হে, দুদিনের ছোকরা?
– ইটস অল রাইট স্যার। অর্ধনারীশ্বরের একটা লোগো ডিজাইন করতে দিয়ে দিই তাহলে?
– বলবে শিবের ডানহাতে ত্রিশূল, আর বাঁহাতে উমার আয়না যেন অবশ্যই থাকে। আসলে একটি পুরুষ বা একটি নারী মানুষরূপে অর্ধেকমাত্র। সেজন্যই দুটোকে মিশিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ এই অর্ধনারীশ্বর।
– বলছি স্যার, শিগগির আপনার জানলার কাচটা তুলে দিন। আপনি তো সেদিন রেগে গেছিলেন।
– আজ আবার? ওফফফ সিগন্যালে দাঁড়ালেই এই এদের অত্যাচার শুরু হয়। ড্রাইভার, এগুলোকে হটাও তো!
– কিন্তু স্যার, এরাই তো ঋতুপর্ণর সেই সব চরিত্র যাদের জন্য সারা জীবন উনি লড়ে গেলেন সব জায়গায়, তাই না? এরা তো অ্যাক্চুয়ালি কোথাও দাম পায় না!
– অ্যাঁ? কী বললে? এই আইডিয়োলজি নিয়ে তুমি ফিল্মমেকার হবে? সেলিব্রিটি আনো, সেলিব্রিটি। পাবলিককে যা খাওয়াবে তাই খাবে। ঘ্যান ঘ্যান করোনা।
– আজ তো ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুদিন। উনি বেঁচে থাকলে কী করতেন স্যার? গাড়ির কাচের জানলাটা অ্যাটলিস্ট খুলতেন
– ইউ আর এ ডিসগাস্টিং ফুল। যাও, ট্যাক্সি থেকে নামো ।
– নেমে যাব ? কী বলছেন স্যার?
– হিজড়েটাকে পাঁচ টাকার কয়েন দিয়ে বিদায় করো আর নিজেও বিদায় হও। আমি অন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়ে নেব। যত্তসব …