এই এই এই এই, ধর ধর ধর ধর, , বেরিয়ে গেলো, বেরিয়ে গেলো। আয়া মাসির চিৎকার শুনে ইন্টার্ন ধড়মড়িয়ে উঠে দৌড়চ্ছে। চোর ধরতে নয়, লেবার রুমে এক মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হলো। আর নাইট ডিউটি দিতে দিতে কখন যে তার দু চোখ লেগে গেছিল….
তার মানে এই নয় যে আয়া মাসি সারা রাত কাজ করে আর ইন্টার্ন ঘুমোয়। একবার শীতকালের রাত্রে একটু ফাঁকা পেয়ে, রুগীদের লাল কম্বলে সারা শরীর ঢেকে এক মাসি ঘুমোচ্ছে। তিনি একটু স্বাস্থ্যবতী। লেবার রুমে নতুন ইন্টার্ন। খুব উৎসাহ কাজ শেখার। মাসিকে আসন্ন প্রসবা জননী ভেবে কম্বলের নীচের দিকটা তুলে পরীক্ষা করতে গেছে বাচ্চা বেরোতে আর কতো দেরি। তারপরটা ইতিহাস…
আসলে ডাক্তারির সাথে ঘুমের আদায় কাঁচকলা সম্পর্ক। যে বয়সে তার বউয়ের সাথে ঘুমোনো, খুনসুঁটি করা উচিত, তখন সে বই নিয়ে, বুক মানে মলাট দেওয়া বস্তু, যাকে জড়িয়ে ঘুমোলে সে পরীক্ষা পাশ করবে। গার্লফ্রেন্ড এসে বলল চল বেরোই ,আজ ভ্যালেন্টাইন ডে। সে পাশ ফিরে, পাশবালিশ জড়িয়ে বললো,আজ শুতে ডে।
তার পর সব যখন সব পরীক্ষা পাশ করলো তখন চাকরি, প্রাকটিস, পশার এই সব ভাবতে গিয়ে ঘুম উধাও। প্রাকটিস একটু জমলে, মোবাইলের উপদ্রবে ঘুমের বারোটা। রাত বারোটায় ফোন, ডাক্তারবাবু বাচ্চা নড়ছে না। রাত বারোটায় আপনি জেগে কী করছেন, নিজে ঘুমন ওকে ঘুমাতে দিন, অন্যকেও অনেক ঘুমোতে দিন।ডাক্তার আবার দেখেন তার বাচ্চা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বড় হয়ে গেলো। বাবা যখন সকালে বেরোয়, বাচ্চা ঘুমোয়, আর যখন ফেরে বাচ্চা অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।
অনেক সময় নিজে না ঘুমোলে অন্যের ঘুমের সাক্ষী হওয়া যায়। অসুস্থ বাচ্চা পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডএ ভর্তি। ছোটো খাট। তার মধ্যেই গ্রাম থেকে আসা মা ছেলের সংসার। মুড়ির টিন, জামা কাপড়ের থলে, প্লাস্টিকের খেলনা। সারাদিন জেগে থাকা মা ঘুমিয়ে, এক হাতে ধরা হাতপাখা। বাচ্চাটার গরম লাগছিলো বলে হাওয়া করছিল। বেডের তলায় বেড়াল তার বাচ্চা নিয়ে ঘুমিয়ে।
মেডিসিন ওয়ার্ড। একটা দেহ, পুরোটাই সাদা চাদরে ঢাকা। ধবধবে সাদা নয় একটু হলদেটে। কিছু জায়গায় বিটাডিনের দাগ, দুয়েকটা ফুটো। ড্রিপ সেটটা পাশে ঝুলছে। পায়ের কাছে টুলের ওপর বসা তার বউ। কাঁদতে কাঁদতে কখন দু চোখ লেগে গেছে।রাত ভোর হলে মেয়েটাকে এমনই এক সাদা কাপড় তাকে সারা জীবন পরতে হবে। তারই অপেক্ষায়।
কর্পোরেট হাসপাতাল। সিঙ্গেল কেবিন। দরজায় লেখা, শ্যামল ঘোষ, আন্ডার ডাঃ এ কে রায়।ঠাণ্ডা ঘর, নরম সাদা বিছানা। যন্ত্র র বিপ বিপ আওয়াজ থেমে গেছে। ডাক্তার এসে চোখের পাতা তুলে টর্চের আলো ফেললো, পিউপিল ডায়ালাটেড। শ্যামল ঘোষ এখন বডি। চার ঘণ্টা পর বাড়ির লোকের হাতে বডিটা তুলে দেওয়া হবে। ঘুমের মধ্যেই শরীর বডি হয়ে যায়, এইটুকু কথা আমরা বুঝেও বুঝি না।