খুপরিতে রোগী দেখছিলাম। রোগিণীর বয়স বাইশ তেইশ। সাজগোজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সবে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরপরই অনেক মেয়ের ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন হয়। সেই অসুখই বাধিয়ে এসেছে।
বাড়িতে রোগী দেখার সময় আমার ফোন সঞ্জয়দার কাছে থাকে। বাইরের খুপরিগুলোতে সঞ্জয়দা থাকে না। সেখানে বন্ধ থাকে। একজনকে দেখতে দেখতে চারটে ফোন এলে রোগী দেখা মাথায় ওঠে। সঞ্জয়দা ফোন ট্রায়াজ করে আমায় দেয়।
তবে রোগীরা ফোন বন্ধ- টন্ধ করেন না। ফলে মাঝেমাঝেই রোগীদের ফোন বেজে ওঠে। বেশীরভাগ রোগী ফোন কেটে দেন। যিনি ফোন করেন সাধারণত তার ধৈর্য অসীম হয়। তিনি বারবার ফোন করেন। করেই যান।
মেয়েটিকে দেখার সময়ও ফোন বাজল। মেয়েটি কেটে দিল। আবার ফোন বাজল। আবার কাটল। আবার বাজল….
আমি বললাম, ‘মা রে, বারবার না কেটে একবার ধর। ধরে বলে দে একটু বাদে করতে।’
মেয়েটি ঘাড় নেড়ে ফোন ধরল। বলল, ‘ডাক্তারবাবুর সামনে আছি। একটু বাদে ফোন কর।’
এর মধ্যে আমি মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা লেখাটা দেখে ফেলেছি। ইংরেজিতে লেখা ‘Deer’।
বললাম, ‘মা, তোর এই ডিয়ার ভদ্রলোকটি কে?’
মেয়েটি লাজুক মুখে বলল, ‘আমার হাজব্যান্ড। অফিস থেকে ফোন করছে।’
বললাম, ‘খুব ভালো। আরো ভালো হত তুই যদি ‘Deer’ না লিখে ‘Golden Deer’ লিখতিস। বর’ই তো তোর সত্যিকারের সোনার হরিণ।’
রাতে বড় মেয়ে সানাইকে গল্পটা বলছিলাম। ওর বয়স নয়। শোনার পর থেকেই মিচকি মিচকি হাসছে। হেসেই যাচ্ছে।
বললাম, ‘কি হল?’
সানাই হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল, ‘বাবা, আরেকটা সম্ভাবনার কথা আমার মনে হচ্ছে।’
‘কি সম্ভাবনা?’
‘ডাক্তাররা সই করার সময় নাম আর পদবীর প্রথম অক্ষর দুটি লেখে। যেমন ধরো তোমার নাম ঐন্দ্রিল ভৌমিক। তুমি লেখো AB। দাদু ডা. পীযূষ পানি ভৌমিক। লেখে PPB। আমাদের ক্লাসের এক বান্ধবীর নাম অমৃতা সেন শর্মা। ও যদি ডাক্তার হয়, তাহলে কি করে সই করবে?’
আপাতত আমরা দুজনেই হাসছি। ছোটো মেয়ে রানীও আমাদের হাসতে দেখে কিছু না বুঝেই হাসছে।
সানাই স্কুলের পরীক্ষায় নম্বর টম্বর সুবিধাজনক পায় না বটে, কিন্তু এ মেয়ে বড় হয়ে কিছু একটা হবে। ?