হঠাৎ খেয়াল হলো, আজ, ১২-ই ফেব্রুয়ারি, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন।
কমিউনিস্ট কবি জীবনের শেষ দিকটায় ঝুঁকেছিলেন বামপন্থীদের বিপরীত শিবিরের দিকে।
কিন্তু দিনের শেষে সুভাষ মুখোপাধ্যায় কবি। মহোত্তম পর্যায়ের কবি। ছন্দের উপর এমন অনায়াস দখল, দেশজ শব্দের এমন স্বাভাবিক অথচ অভাবনীয় প্রয়োগ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো করে খুব কম কবির কবিতায়ই দেখেছি। আর কবিতা-ভাবনা বা আপাত-সহজ লেখাতেও কবিতার গভীরতা – সেসব নিয়ে আমার মতো মানুষের মন্তব্য করা সাজে না। প্রসঙ্গত, এখানে তাঁর অসাধারণ গদ্যশৈলীর কথাও বলা যেতে পারত – গদ্যকার সুভাষ মুখোপাধ্যায় কবি সুভাষে ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন – কিন্তু এখন তো চারপাশে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় নিয়েই এত কম আলাপ-আলোচনা শুনি, যে, জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর নামটা একটু মনে করিয়ে দিলাম।
একটা মজার (নাকি দুঃখের?) কবিতা দিয়েই কবির জন্মদিন উদযাপন করা যাক। (ডিসক্লেইমার : এটি কোনও ভাবেই কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবি-প্রতিভার রিপ্রেজেনটেটিভ কবিতা নয়। যদিও এই কবিতার মধ্যেও তাঁর অসামান্য উইট, ছন্দের উপর তাঁর অবিশ্বাস্য দখল, শব্দপ্রয়োগে তাঁর উৎকর্ষ ইত্যাদির পরিচয় আছে।) শিবির বদল নিয়ে কবির প্রতি বামপন্থীদের অভিমান ক্ষোভ কম ছিল না। ছিল তজ্জনিত শ্লেষও। উত্তরে সুভাষ লিখেছিলেন –
.
.ল্যাং
ডান কানটা বিগড়ে গেলেও
বাঁ কানটা আছে
তাইতে ধরছি কে এবং কী
ছাড়ছে ধারে-কাছে –
‘আপনি মশাই, গেছেন বদলে
বদলে গেছেন, ছি ছি!
আগে গলায় বাজ ডাকাতেন
এখন করেন চিঁচিঁ।
‘ইনাম পেয়ে জাহান্নামে
গেছেন, বলব কি আর –
প্রগতির লোক ছিলেন আগে
এখন প্রতিক্রিয়ার।
‘ফুলকি ছেড়ে ফুল ধরেছেন
মিছিল ছেড়ে মেলা
দিন থাকতে মানে মানে
কাটুন এই বেলা।’
হেই গো দাদা, ছাড়ুন ঠ্যাং –
চলে যাচ্ছি ড্যাডাং ড্যাং।।
মনে করিয়ে দিই, সুভাষ মুখোপাধ্যায় মারা যান ২০০৩ সালে। তাঁর প্রিয়পাত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতায় আসতে তখনও ঢের বাকি। আগে গলায় বিস্তর বাজ ডাকিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতা মাননীয়ার হয়ে যেসব ‘বুদ্ধিজীবী’ এখন সত্যিসত্যিই চিঁচিঁ করছেন, তাঁদের সঙ্গে সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে মিলিয়ে দেখার কারণ নেই। আর কবি/সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর সঙ্গে আলটপকা কিছু নামকে গুলিয়ে ফেলাটা তো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে!
১২।০২।২০২৪