করোনা ভাইরাস সামনে দুটো ম্যাপ খুলে পেন্সিল দিয়ে দাগ কাটছিল। ইতিমধ্যে চিত্রগুপ্ত তার বড় খাতা নিয়ে সেখানে উপস্থিত।
করোনাঃ কি চিত্রদাদা, খুশী তো?
চিত্রগুপ্তঃ তোকে ধরে আনতে বললে তুই বেঁধে আনিস! অ্যানুয়াল রিপোর্টে এন্ট্রি কম পড়ে যাচ্ছিল বলে তোকে বলেছিলাম কিছু আমদানী বাড়াতে। তুই কিনা এমন বাড়াবাড়ি শুরু করেছিস যে বছরের মাঝখানে আমার খাতা শেষ হয়ে গেছে। লকডাউনের বাজারে কাগজের দোকান বন্ধ। খাতার উল্টো পাতায় লিখতে শুরু করেছি এখন, বুঝলি!
করোনাঃ লোকে যদি গাধার মত কাজ করে তাহলে আমি কি করব?
চিত্রগুপ্তঃ মানে?
করোনাঃ এই ম্যাপ দুটো দ্যাখো।
চিত্রগুপ্তঃ এ আবার কিসের ম্যাপ?
করোনাঃ বাঁদিকের-টা আমেরিকা। যার প্রেসিডেন্ট-টা হল আধপাগল। ওর উস্কানিতে ওখানে দলে দলে লোক মাস্ক ছুঁড়ে ফেলে ডাক্তার নার্সদের গালাগাল করে সী-বীচে গিয়ে জড়াজড়ি করছে। বলে কিনা, করোনা- টরোনা কিস্যু নেই। সব চক্রান্ত।
চিত্রগুপ্তঃ ছেড়ে দে! পাগলে কি না করে!
করোনাঃ আমি তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার চ্যালা-চামুন্ডাগুলোর মাথা গরম। রেগে গিয়ে এমন ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল যে অনেক লোকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছতেই পারে নি। অর্ধেক নিউইয়র্ক শহর উজাড় হয়ে গেছে।
চিত্রগুপ্ত: হ্যাঁ, সে তো আমি এখানে বসেই টের পাচ্ছি।
করোনাঃ সে আর কি টের পেলে ! ও তো ছিল শুধু ট্রেলার। আসল খেলা তো এবার শুরু হয়েছে।
চিত্রগুপ্তঃ সে আবার কি? কোথায়?
করোনাঃ ডানদিকের ম্যাপটা দেখো। ইন্ডিয়া, মানে ভারতবর্ষ। ওরা বলে, সকল দেশের সেরা।
চিত্রগুপ্তঃ সকল দেশের সেরা?
করোনাঃ হ্যাঁ। মুর্খামিতে। আর এরপর রোগীর সংখ্যায় হবে।
চিত্রগুপ্তঃ করে কি ওরা?
করোনাঃ কি করে না, সেটা বলো। গোবর খায়, পাঁপড় খায়, গোমূত্র পান করে। থালা পেটায়, আলো নেভায়। মন্ত্র পড়ে ভাইরাস তাড়ায়।
চিত্রগুপ্তঃ অ্যাঁ?
করোনাঃ প্রথম তিনমাস যখন ওদিকে তাকাতে পারিনি, তখন এসব ভুলভাল করছিল। টেষ্ট না করে মজা দেখছিল। হিসেব চেপে রাখছিল। বলে কিনা, গরমে না কি সব ভাইরাস মরে যাবে! ছোঃ
চিত্রগুপ্তঃ এখন?
করোনাঃ এখন ঝান্ডা নিয়ে মারামারি করছে- কে আগে চাল-ডাল-টাকা-পয়সা-পঞ্চায়েত-মিউনিসিপ্যালিটি-রাজ্য দখল করবে। থিকথিকে ভীড়ের বাজারে দলে দলে ইলিশ মাছ কিনছে। একদিন দেখি, হাজার হাজার লোক সাদা টুপি পরে একে-ওকে জড়িয়ে ধরছে। আরেক দিন আরেক-দল একটা বড় প্যান্ডেলে বিড়বিড় করে কি সব মন্ত্র পড়ে লাড্ডু বিলোচ্ছে। অর্ধেকের মাস্ক নেই। আমার চেলা-চামুন্ডাদের তো ফাঁকা মাঠ। তারা এ নাক থেকে সে-নাক ঘুরে বেড়াচ্ছে।
চিত্রগুপ্তঃ তো বাচ্চা-বাচ্চা ছেলেমেয়ে বদ্যিগুলোকে ধরে আনছিস কেন! আমি তো হিসেব মেলাতে পারছি না। অনেকের তো ট্রেনিং অবধি শেষ হয় নি! ঈশশ্।
করোনাঃ স্যরি, ওগুলো ভুল হয়ে গেছে। কোল্যাটারাল ড্যামেজ আর কি! এক কাজ করো। ওদের সগ্যে পাঠিয়ে দাও। সগ্যে অশ্বিনীকুমার ভাই দুটো সারাক্ষণ ফষ্টিনষ্টি করে বেড়ায়। কাজের সময় ওদের পাওয়া যায় না। এই ছেলেমেয়েগুলোকে কাজে লাগিয়ে দিক। বেশী মাইনে দিতে হবে না। ওখানে তো প্রায় বেগার খাটতো!
চিত্রগুপ্তঃ অবস্থা ভালো বুঝছি না।
করোনাঃ হ্যাঁ যাও। আরেকটা খাতা কেনার চেষ্টা কর।