রাস্তার অর্ধেকটায় কাজ চলছে। বাকি অর্ধেক দিয়ে ধীর গতিতে গাড়ি চলছে। তার মধ্যে একটা বাঁশ ভর্তি ভ্যান ঢুকেছে। ভ্যানের দ্বিগুণ জায়গা নিয়ে বাঁশগুলো ছড়িয়ে আছে। এক বয়স্ক মানুষ ভ্যানটা টানছেন। তিনি আর প্যাডেল করে টানতে পারছেন না। সিট থেকে নেমে ভ্যানের হাতল ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ভ্যানটাকে কেউ পেছনের থেকে অতিক্রম করতে পারছে না। পেছনে বিশাল লাইন পড়েছে। যাদের তাড়া আছে তাঁরা ঘন ঘন হর্ন দিচ্ছে। এর মধ্যে আবার টুকটুক বৃষ্টি আরম্ভ হলো। ব্যাস, সবকিছু আরও ঘেঁটে গেল। স্কুটার, বাইক, সাইকেল চালকেরা প্রায় জায়গায় দাঁড়িয়ে ভিজছেন। না পারছেন সামনে এগোতে, না পারছেন পেছনে যেতে।
একা একটি ভ্যান এবং একজন বয়স্ক মানুষ গোটা রাস্তাটাকেই আটকে দিয়েছেন। উল্টো দিকের গাড়িগুলোও সাবধানে যাচ্ছে। যেভাবে বাঁশ বেরিয়ে আছে, উল্টো দিকের চারচাকা গাড়ি গুলো রাস্তার নিচে কাদাজলের মধ্যে চাকা নামিয়ে দিচ্ছে। বাঁশের খোঁচা খাওয়ার চাইতে গাড়িতে কাদা লাগা অনেক ভালো।
বাঁশ ভর্তি ভ্যানের ঠিক পেছনেই একটা দামী নতুন গাড়ি। তার চালক অত্যন্ত সাবধানে অন্তত দশ হাত ব্যবধান রেখে গাড়ি চালাচ্ছেন।
আমিও স্কুটার নিয়ে ভিজছি। চেম্বারের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু যা জমাট জ্যাম, তাতে স্কুটার তো দূর, মাছি যাওয়ারও রাস্তা নেই। তাঁর উপর উল্টো দিক থেকে অত্যুৎসাহী অটো, টোটো ডবল লাইন করে পুরো জিনিসটাকে আরও জটিল করেছে। বাঁশ ভর্তি ভ্যানটা মাঝে মাঝেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
দুজন চকরা বকরা জামা আর কানে দুল পরা ছেলে পেছন থেকে ভ্যানটাকে ঠেলতে শুরু করলেন। তাঁরাও সুবিধা করতে পারছেন না। ভ্যানের সামনের রাস্তা গাড়ির ডবল লাইনের ফলে ক্রমশ সরু হচ্ছে। আশে পাশের গাড়িরা অনেকেই স্টার্ট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেছে। আমার পাশেই এক অটো ওয়ালা খালি অটো থামিয়ে বিড়ি ধরালেন। ধরানোর আগে আয়েশ করে বিড়ির উল্টোদিকে একটা ফুঁ দিলেন। একজন সিভিক পুলিশ ছাতা মাথায় উদাস মুখে দূরে তাকিয়ে আছেন। পরিস্থিতি তাঁর হাতের বাইরে।
যাদের তাড়া আছে তাঁদের মেজাজ গরম হচ্ছে। ছোটো খাটো ঝামেলাও লেগে গেছে। কে জানে আর কতক্ষণ লাগবে?
এমন সময় পুলিশের গাড়ির হুটারের শব্দ শোনা গেল। খুব ঘন ঘন এবং বিরক্তি সহকারে হুটার বাজছে। কোনো মন্ত্রীর গাড়ি জ্যামে ফেঁসে গেছে। এতক্ষণের কোলাহল- ঝগড়া ঝাঁটি মুহূর্তে থেমে গেল। রাস্তার যা অবস্থা তাতে মন্ত্রী কেন, প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি এলেও সুবিধা করতে পারবে না।
মন্ত্রীদের উপর সাধারণ মানুষের যে কতো রাগ এসব সময়ে বোঝা যায়। আশেপাশের সকলেই বলছেন বেশ হয়েছে, ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে থাকুক। যে বয়স্ক ভ্যানওয়ালাকে সবাই এতক্ষণ গালাগালি দিচ্ছিল, অনেকের কাছ থেকে সে সহানুভূতি পেতে শুরু করেছে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে, দুদিকের গাড়িই দাঁড়িয়ে গেছে। পুলিশের গাড়ির হুটার আর বাজছে না। তাঁরা বুঝে গেছে হুটার বাজিয়ে লাভ নেই। ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছে। ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজছি।