পড়ে গিয়ে, খেলতে গিয়ে অথবা দুর্ঘটনা ঘটে হাত-পা তো অনেকের-ই ভেঙে যায়। হাত-পা ছাড়াও মেরুদন্ড – অর্থ্যাৎ ঘাড়,পিঠ,কোমর- এছাড়া কাঁকাল ও মাথার খুলির হাড়ও কখনো কখনো ভাঙে। আবার বেশীরভাগ ভাঙা হাড় কিছুদিন বাদে জুড়েও যায়।
এখন প্রশ্ন হল, এই ভাঙা হাড় জোড়া তো লাগে,কিন্তু লাগে কিভাবে?
অনেকের ভ্রান্ত ধারণা আছে- হাড় ভাঙলে প্লাষ্টার বা অপারেশন ঠিকভাবে করা না হলে হাড় জোড়ে না।
তাহলে মানুষ বাদে অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণীদের, বিশেষতঃ বন্য প্রাণীদের হাড় ভাঙলে তা জোড়ার কথা নয়। কিন্তু তা তো হয় না! পায়ের মূল হাড় ফিমার ভেঙে গেলে জন্তুটি হাঁটতে বা দৌড়তে পারে না। ফলতঃ শিকার ধরতে না পেরে খাদ্যাভাবে অথবা অন্য প্রাণীর শিকারে পরিণত হয়ে মারা যায়।
কিন্তু অন্য ছোটখাট হাড় ভাঙলে সে মরে না। এক সময় হাড় জুড়েও যায় অনেক ক্ষেত্রে। টেরা ব্যাঁকা হয়ে জোড়ে। প্রাণীটা খুঁড়িয়ে হাঁটতে বাধ্য হয়।
তাহলে হাড় ভাঙলে চিকিৎসা করি কেন? উত্তর হল- প্রথমতঃ,ভাঙা টুকরোগুলো সঠিক অবস্থানে রাখার জন্য। যাতে ভাঙা হাড় টেরাব্যাঁকা না হয়ে সঠিক অবস্থানে জোড়ে। দ্বিতীয়তঃ, ভাঙা হাড়ের টুকরোগুলো বিশেষ নড়াচড়া না করতে পারে। কারণ, টুকরোগুলো নড়াচড়া করলে নতুন গজানো হাড়ের মন্ড (callus) বার বার ভেঙে যায় এবং শেষ পর্যন্ত হাড় জোড়ে না।
প্লাষ্টার করে, ট্রাকশান দিয়ে, স্লিং-স্প্লিন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে এবং শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে প্লেট-স্ক্রু বা রড ব্যবহার করে হাড়ের ভাঙা টুকরো গুলোর নড়াচড়া বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সেগুলো সঠিক অবস্থানে কাছাকাছি রাখার ব্যবস্থা হয়। এতে হাড় জুড়তে সহায়ক হয়।
কিন্তু হাড় জোড়ার পদ্ধতি একটি আদ্যপান্ত শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটি শুরু হয় হাড় ভাঙার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। ভাঙা জায়গায় রক্তের অন্তঃক্ষরণ হয়ে রক্ত জমাট বাঁধে। সেখানে ছুটে আসা অণুচক্রিকা এবং আরো অন্যান্য সংক্রমন প্রতিরোধী কোষ থেকে বেরিয়ে আসা অনুঘটকগুলো নতুন নতুন অনেক রক্তবাহী নালী তৈরি করে।
রক্তবাহী নালী রক্তের সাথে বয়ে নিয়ে আসে বিভিন্ন ধরণের কোষ, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ- বিশেষতঃ ক্যালসিয়াম। সেসব মিলিয়ে জৈবিক প্রক্রিয়ায় আস্তে আস্তে তৈরি হয় হাড়ের মন্ড (Callus)। নরম, কাঁচা হাড় ভাঙা হাড়ের টুকরো গুলোর মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করে। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে তা শক্ত হয় এবং নিজেকে চেঁচেপুঁছে সঠিক আকার ধারণ করে – অনেকটা মাটির মূর্তি তৈরির মত প্রক্রিয়ায়।
ভাঙা হাড় ও তার আশেপাশের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা, সংক্রমণ, রক্তে অবস্থিত নানান ধরণের অনুঘটক, খনিজ পদার্থ ও প্রোটিন এই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে। তাই এইসব বিষয়ে কোনোরকম বাধাপ্রাপ্তি ঘটলে বা সমস্যা হলে হাড় জোড়ার প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়, এমনকি হাড় আদৌ জোড়েই না।