বাংলায় কোনো ডাক্তার নেই। হাসপাতাল আছে, ভালো ভালো হাসপাতাল। পরিকাঠামো খুব ভালো- মানে হাসপাতালের বাড়ি ঝাঁ চকচকে, যন্ত্রপাতি হাই টেক। রাস্তাঘাট, অ্যাম্বুল্যান্স সব আছে। কিন্তু ডাক্তার নেই। তবে নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের বিষয়টা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা আছেন কি নেই বোঝা যাচ্ছে না। অন্ততঃ বিশিষ্ট জনপ্রতিনিধি এই বিষয়টা খোলসা করেন নি। যদিও তিনি বলে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তার নেই। সুতরাং নেই। পুরো শূন্য। আর কে জানে ভারতবর্ষে জনপ্রতিনিধিদের কথাই স্বতঃসিদ্ধ। অনেকটা পিথাগোরাসের উপপাদ্যের মত। সে জনপ্রতিনিধি নিজের নাম স্বাক্ষর করতে পারলেও তাই, না পারলেও তাই। তিনি যদি বলেন সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে, তো সেটাই হবে। গোবর খেলে করোনা হয় না, তো হয় না। ডেঙ্গুর মশা প্রতিবেশী দেশ থেকে আসে, তো তাই আসে। প্রশ্ন করবে কে? যারা প্রশ্ন করবে তাদের ভোটেই তো তিনি ক্ষমতাসীন।
শুধু একটা কথা। এই যে বললেন, পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তার নেই, সেটা কবে থেকে? তাঁর এই ঐতিহাসিক বক্তব্য রাখার আগের দিনই কি সব ডাক্তার পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভ্যানিশ হয়ে গেছে? না কি বেশ কিছুদিন আগে থেকেই? দ্বিতীয়টির সম্ভাবনাই বেশী। কারণ, রেলের ভেলোর স্পেশাল ট্রেন তো বেশ কয়েকবছর আগেই চালু হয়েছে। কোভিড অতিমারীর অনেক আগে থেকেই।
তাহলে কোভিডের সময় হাসপাতালে, চেম্বারে, বাড়িতে রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে যারা অসুস্থ হয়ে পড়ল, অনেকে মারা গেল, তারা কারা?
জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বা পূর্বতন মেডিক্যাল কাউন্সিল-এর খাতায় পশ্চিমবঙ্গের ডাক্তার হিসেবে যাদের নাম আছে, তারা কারা? সব ভুয়ো?
কোভিডের লড়াইয়ের জন্য যাদের নাটকীয় সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন, যাদের উদ্দেশ্যে থালা-বাটি বাজিয়েছিলেন তারা কোথাকার ডাক্তার ছিল? মঙ্গলগ্রহের?
নিজেদের বা মামাতো-পিসতুতো শালার বা শ্বশুরের সামান্য পেটখারাপ বা হাঁচি হলেই লালবাতি বা নীলবাতি লাগানো গাড়ি চেপে অন্য সত্যি কারের মুমূর্ষু রোগীদের ডজ করে বড় বড় কর্পোরেট হাসপাতালের ক্লিনিকে ঢুকে পড়ে কাদের দেখান? রোবটদের?
শুনুন মশাই, সিবিআইয়ের ভয়ে মন্ত্রী গায়েব হয়ে যেতে পারে, ডাক্তাররা গায়েব হয়ে যায় না। তারা খামোকা মার খায়, অপমানিত হয়, সর্বস্বান্ত হয়। কিন্তু রোগী ছেড়ে, প্র্যাকটিশ ছেড়ে পালিয়ে যায় না।
সৎ রাজনৈতিক নেতা খুঁজতে গেলে তো আজকাল দূরবীন লাগে। সৎ ডাক্তার খুঁজতে কিন্তু দূরবীন লাগে না। আপনার আশপাশেই আছে। হ্যাঁ, এটা সত্যযুগ নয়। সমাজের কোনো পেশাতেই অসততা বিরল নয়। স্বাভাবিক ভাবেই চিকিৎসা পেশাও তার বাইরে নয়।
তাই বলছি কি, জনপ্রতিনিধি মশাই, আয়নাটা নিজের সামনে ধরুন। দেখুন, আপনি আছেন তো! কারণ আপনারা যতই জনসাধারণকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করুন না কেন, চিকিৎসা পেশাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করুন না কেন, এই পেশা থাকবে। ডাঃ ‘ক’ না থাকলে, ডাঃ ‘খ’ থাকবে। ডাঃ ‘গ’ চলে গেলে ডাঃ ‘ঘ’ দ্বায়িত্ব নেবে। কারণ চিকিৎসা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন পেশা। এটা কলকাতার রাস্তার ভিস্তিওয়ালা বা পিসিও বুথ নয় যে স্রেফ উবে যাবে। বয়স হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের ডাক্তারদের কাছে যেতে হতে পারে। ভেলোরে যাওয়ার প্রয়োজনীয় সময় না-ও দিতে পারে প্রকৃতি ও শরীর। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে লোক খেপানোর আগে ভেবে দেখবেন আশা করি।