বীভৎসা আর মৃত্যু মানুষকে খুব টানে। মানে বাজারে চলে। কার সন্তান মারা গ্যাছে, চলো বাইট নি’। আইএসও, অ্যাপারচার, শাটার স্পীড….ক্লিক। বহু সংবাদ সংস্থা এ ছবি লুফে নেবে। কোন স্টেশনে দুধের শিশু দুগ্ধবতী মৃত মায়ের ম্যানা খাচ্ছে। ক্লিক। কোন রাস্তায় দুর্ঘটনা বেশী হয়। বসে থাকো। দ্ধুস্সালা আজ একটাও চাপা পড়লো না। দিনটা বেকার গ্যালো। কোথায় আজ পুলিশ গুলি চালাবে? লেন্স খাড়া করে’ বসে’ থাকো। প্রতিবাদের চিত্র। এভাবে তৈরি হয় ‘পাপারাৎজি’। আরও ভালো ছবি হয় অনাহারে ধুঁকে মরা মানুষের। কোন শিশুর জোটেনি ভাত? চ্চ, গিয়ে ফটো তুলি। দারিদ্র্য। মৃত্যু বীভৎসা। পাবলিক খাবে ব্বে। পোলিও আক্রান্ত পঙ্গু বাচ্চা লেংচে লেংচে চলেছে। সামনে একটা মোটা লোক থলি নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো থলিতে কিছু কাপড় আছে। হয়তো যন্ত্রপাতি। হয়তো খাবার। হয়তো বাচ্চা তাকে অনুসরণ করছে। অথবা এমনই যাচ্ছে। ক্লিক। ক্লিক। হচ্ছে না। কিচ্ছু হচ্ছে না। ইথিওপিয়া ঘুরে’, জাম্বিয়া ঘুরে’, শেষে সুদান। এখানে অনেক মৃত্যু। অনেক মরো মরো, ফেলে যাওয়া বাচ্চা। ঐ দ্যাখ ব্বে,মাঠের মধ্যে একটা বাচ্চা ধুঁকছে। বাড়ির লোক ফেলে গ্যাছে। আহা চমৎকার! একটা শকুন এসে বসেছে বাচ্চাটার পাশে।অপেক্ষা করছে। বাচ্চাটা মরলেই ঠুকরে খাবে। তখন আরও অনেক শকুন আসবে। তার আগে, বাচ্চাটা বেঁচে থাকতে থাকতেই ফটো তোল। মনে হচ্ছে এটা ভালো এসেছে। লাইট, বিবর্ণ রুক্ষ মাটি, মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা একটা হাড্ডিসার বাচ্চা। পাশে একটা মৃত্যুর জন্য, খাদ্যের জন্য অপেক্ষমান শকুন। চল্ চল্ প্রিন্ট নিয়ে টেলিপ্রিন্টারে পাঠাই। তখনও মোবাইলের যুগ আসে নি। পুরস্কারের পর পুরস্কার। কেবল একটা বাচ্চা জিগ্যেস করলো “ওগো তারপর বাচ্চাটার কী হলো? বেঁচেছিলো? তুমি কি ওকে খাবার, একটু জল দিয়েছিলে?”
সহস্র, লক্ষ, কোটি কন্ঠে প্রতিধ্বনি হলো “হ্যাঁ গো বাচ্চাটার কী হলো?” ফটোগ্রাফার কান চেপে বসে রইলো। মাথার ভেতরে অনুরণন হতে থাকলো “আব্বে বাচ্চাটার কী হলো?”
ফটোগ্রাফার আত্মহত্যা করলো। সে কিচ্ছু করে নি। জেমস বন্ড বলেছিলো লিভ অ্যান্ড লেট ডাই -ঠিক ত্যামন। আজ ঐ প্রশ্নটা করার লোক নেই।
ফটোগ্রাফার আত্মহত্যা করলো। মানে তার একটা বিবেক ছিলো।