নির্মীয়মান কাঠামো ভেঙ্গে একের পর এক ছোটখাটো এবং মাঝারি দুর্ঘটনা ব্যতিরেকে ২৭ জুলাই ১৯৯৫ শিবালিক বহুতল দুর্ঘটনা (১৬ মৃত্যু), ৩১ মার্চ ২০১৬ পোস্তা উড়ালপুল দুর্ঘটনা (২৭ মৃত্যু), ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনা (? ২ মৃত্যু) র পর ১৮ মার্চ ২০২৪ গার্ডেনরিচ বহুতল দুর্ঘটনা (এখনবধি ১০ মৃত্যু) পুনরায় বৃহত্তর কলকাতা – হাওড়া শিল্পাঞ্চলের গৃহ নির্মাণ ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি, ন্যূনতম পরিকল্পনাহীনতা, ব্যাপক পরিবেশের ক্ষতি, চূড়ান্ত অবৈধ ক্ষতিকর ও মানুষের নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কার্যকলাপ, রাজ্য সরকার ও পুরসভার ক্ষমাহীন গাফিলতি এবং রাজনৈতিক দল – নেতা – মন্ত্রী – জনপ্রতিনিধি – মাফিয়া – প্রোমোটর – পুলিশ চক্রের সিন্ডিকেট রাজের ভয়ানক কাণ্ডকারখানা নিয়ে সাধারণের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
গার্ডেনরিচ কথা: ত্রিবেণী থেকে যমুনা পূবে এবং সরস্বতী ও ভাগীরথী দক্ষিণে সাগর সঙ্গমের উদ্দেশ্যে তাঁদের নিজ নিজ পথ বেছে নেন। কলকাতার ওয়াটগঞ্জ এর দই ঘাট থেকে সাঁকরাইল অবধি নওয়াব আলিবর্দীর সময় ডাচ ইঞ্জিনিয়ার রা খাল কেটে ভাগীরথী ও সরস্বতী কে সংযুক্ত করেন নৌ বাণিজ্যের সুবিধার্থে। এরপর খিদিরপুর ও গার্ডেনরিচ এ খাল কেটে ব্রিটিশরা নির্মাণ করলেন খিদিরপুর ও কিং গর্জেস ডক।
আর কলকাতার দক্ষিণ – পশ্চিমে এই কাটা গঙ্গা তার বাম প্রান্তে যে নাকের মত এক খণ্ড ভৌগলিক এলাকার জন্ম দিল সেটাই পাহাড়পুর, রামনগর, ফতেপুর, বাতিকল, বাঁধাবটতলা, মেটিয়াবুরুজ, রাজাবাগান, বড়তলা, বদরতলা, নাদিয়াল অঞ্চলগুলিকে নিয়ে আজকের অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ গার্ডেনরিচ। একদিকে কেএমডিএ পৌর পরিষেবা ১০ টি ওয়ার্ড এবং ১৫ নম্বর বোরো নিয়ে। বিধানসভায় কলকাতার বন্দর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মেটিয়াবুরুজ আসন। অন্যদিকে কলকাতা দক্ষিণ ও ডায়মন্ড হারবার সাংসদ আসনের অংশ। পুরসভা থেকে সাউথ সাবার্বান ও যাদবপুরের সাথে এই added area টি ১৯৮৪ তে কলকাতা পৌর নিগমের অন্তর্ভুক্ত হয়।
গার্ডেনরিচ এর উত্তরে পূব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিনী নয়নাভিরাম গঙ্গা। তদানীন্তন ক্যালকাটা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার লরেন্স পিল এই সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে ১৮৫৫ তে চমৎকার একটি গথিক বাংলো নির্মাণ করে থেকে যান এবং এলাকাটির নাম দেন গার্ডেনরিচ। তিনি অবসর নিয়ে দেশে ফেরার পর আওধের রাজ্যহারা নওয়াব ওয়াজেদ আলি ইংল্যান্ডের রাণীকে অভিযোগ জানানোর চেষ্টায় কোলকাতায় এলে ব্রিটিশরা তাঁকে প্রথমে এখানে রাখে। তারপর ব্রিটিশদের বার্ষিক খোরপোষ নিয়ে তিনি সপার্ষদ মেটিয়াবুরুজে পুনর্বাসন নেন এবং মেটিয়াবুরুজকে দ্বিতীয় লখনৌ বানানোর কাজে মশগুল থাকেন। এখন ঐ সুদৃশ্য বাংলো টি দক্ষিণ পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের কোয়ার্টার। কাছেই বালুঘাট বা সুরিনাম ঘাট যেখান থেকে একসময় দাস ব্যবসায়ীরা বিহার, সংযুক্ত প্রদেশ প্রভৃতির গ্রাম থেকে গরীব ভূমিহীন কৃষক দের ধরে এনে সুদূর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের আখ ক্ষেত গুলিতে শ্রমিকের কঠোর কাজে জাহাজ ভর্তি করে পাঠিয়ে দিত।
আরও আগে শোনা যায় দক্ষিণ বঙ্গের প্রতাপশালী ভূঁইয়া প্রতাপাদিত্যের পর্তুগিজ সেনাপতি রদ্দা নৌপথে মগ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিরোধে দুটি মাটির কেল্লা বা বুরুজ নির্মাণ করেছিলেন। নদী সংলগ্ন এই জলাভূমি ও কৃষিজমি সম্পন্ন এলাকায় ছিল কৃষক ও মৎস্যজীবী দের গ্রাম। বাঙালি হিন্দু মুসলমান মিশ্র এই কৃষি ও ওস্তাগর অধ্যুষিত এলাকায় একদিকে ওয়াজেদ আলির হাত ধরে অবাঙালি মুসলমানদের আগমন, আবার ব্রিটিশ দের হাত ধরে বন্দর ও বন্দরকে কেন্দ্র করে শিল্প গুলিতে কাজের জন্যে বিহার, ইউ পি প্রভৃতি রাজ্য থেকে দলেদলে হিন্দু মুসলমান অবাঙালি শ্রমিকদের আগমন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস। জনচরিত্র পাল্টে গিয়ে উর্দু ও হিন্দি ভাষী অবাঙালির এবং মুসলমান ধর্মাবলম্বীর (প্রায় ৮০%) সংখ্যা বৃদ্ধি। পুরনো সেনসাস এ জনসংখ্যা ১৩,৩৩,২৭৬। তখনকার জন ঘনত্ব ১২১১২ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে। ১০০ পুরুষ প্রতি ৯১ নারী।
গার্ডেনরিচ এর অর্থনীতি ও পরিকাঠামো: উত্তর ও পশ্চিমে বাঁক নেওয়া গঙ্গা, তার উত্তরে হাওড়া শিবপুর ও সাকরাইল। পূবে খিদিরপুর, দক্ষিণ পশ্চিমে মহেশতলা ও দক্ষিণ পূবে তারাতলা। ধর্মতলা, খিদিরপুর হয়ে এর প্রাণ ভোমরা সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোড বা কার্ল মার্ক্স সরণী। এছাড়াও মাঝেরহাট থেকে গার্ডেনরিচ ফ্লাই ওভার, তারাতলা রোড, শিয়ালদহ – বজবজ লাইনের সন্তোষপুর রেল ষ্টেশন এবং আক্রা ফটক থেকে গার্ডেনরিচে প্রবেশ প্রস্থান করা যায়।
ব্রিটিশ আমলে এবং স্বাধীন ভারতের ৭০ দশক অবধি কলকাতা বন্দরের গরিমা বজায় ছিল। বন্দর এবং সহযোগী শিল্পাঞ্চল গুলিকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা ছিল। একে একে গড়ে উঠেছিল গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স, দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে (বি এন আর) সদর দপ্তর ও হাসপাতাল, বন্দরের ডক ছাড়াও বিভিন্ন অফিস ওয়ার্কশপ ড্রাই ডক গুদাম ডক হসপিটাল ইত্যাদি। রাজাবাগান ডক ইয়ার্ড, গার্ডেনরিচ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গার্ডেনরিচ জল শোধনাগার, ইন্ডিয়ান অয়েল ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম এর প্লান্ট, আই টি সির সিগারেট ফ্যাক্টরি, ব্রিটানিয়া, ফিলিপস, গ্লাকসো, পাহাড়পুর কুলিং, ট্রাক্টর ইণ্ডিয়া, জি ই সি, হিন্দুস্তান লিভার, বামা ও বিকো লোরী, আসবেষ্টস ফ্যাক্টরি, কেশরাম কটন মিল, বেশ কিছু জুট মিল সহ অজস্র শিল্প তারাতলা – ব্রেসব্রীজ – হাইড রোড – কোলবার্থ – ব্রুকলিন থেকে রাজাবাগান অবধি ছড়িয়ে পড়েছিল।
এছাড়াও এখানে গড়ে উঠল এশিয়ার বৃহত্তম রেডিমেড বস্ত্রের বাজার ও সংযুক্ত কুটির শিল্প এবং ঘুড়ি শিল্প।
গার্ডেনরিচ – দুশরা পাকিস্তান: দীর্ঘ সময় বন্দর এলাকায় বসবাস করায় এই অঞ্চলকে কিছুটা নিজের চোখে দেখেছি। এখানে কলকাতা পোর্টের দু দুটি ডক ও সংলগ্ন এলাকা ছাড়াও রয়েছে বিপুল সম্পত্তি, জমিজমা, কোয়ার্টার, অফিস, ডক জংশন সহ নিজস্ব বিস্তৃত রেলওয়ে ব্যবস্থা। খিদিরপুর ডকের উপর দুটি দুর্দান্ত ব্রিজ। জাহাজ চলাচলের সময় যাদের মধ্যে একটি পাশাপাশি খোলে, আরেকটি তিন ভাজ হয়ে যায়। আন্দামান যাওয়ার জাহাজ ঘাটা। অল্প বয়সে বাবা এই সব দেখিয়েছিলেন। তারপর পাড়ার বন্ধু ও দাদাদের সাথে ঘুরে দেখেছি। দেখেছি ঘিঞ্জি ঘেটোর গলি উপগলি, গরীব শ্রমজীবী মানুষের করুণ জীবনযাত্রা। এর বিভিন্ন মাঠে টুর্নামেন্ট খেলেছি, রাশিয়া পোল্যান্ড ইউক্রেন থেকে আসা জাহাজীদের সাথে ফ্রেন্ডলি ফুটবল ম্যাচ হয়েছে। মেটিয়াবুরুজের ঘরে ঘরে দেখেছি পুরুষ নারী অভিবাসী নির্বিশেষে দর্জিদের ব্যস্ততা। এর সাথে বন্দর মাফিয়াদের সংঘটিত অপরাধ। কেন্দ্রের অবহেলা, হুগলী নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, কান্দলা পারাদ্বীপ প্রতিযোগী বন্দর গড়ে ওঠা প্রভৃতি কারণে কলকাতা বন্দর মুখ থুবড়ে পড়ায় এবং শিল্প গুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অপরাধ, চুরি, ডাকাতি, চোরা কারবার বেড়ে যায়। ফ্যান্সি, ফাইভ স্টার চোরা বাজার গুলির তখন থেকে রমরমা শুরু হয়। উদয়রাজ, বালিয়া, সালাউদ্দিন বেশিরভাগ ডনরাই ছিলেন অবাঙালি। পরে কাসমা, মোগল দের দেখেছি। গরীব জনসমুদ্রের মাঝে কিছু রূপকথার নায়ক। প্রথমে রাজনৈতিকভাবে এদের সাথে কংগ্রেসের ওঠা বসা ছিল। লক্ষণ সিং এর মত ডন ছিলেন পুরোদস্তুর গান্ধীবাদী। সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরতেন, খালি পায়ে হাঁটতেন। বামফ্রন্ট এসে কলিমুদ্দিন শমসের মাধ্যমে প্রতিস্পর্ধি প্রভাব গড়ে তোলে। তবে সব আমলেই জনপ্রিয় দলিত জনপ্রতিনিধি রাম পিয়ারী রাম তাঁর প্রভাব বজায় রাখেন। নিকটবর্তী পোর্টল্যান্ড পার্ক কোয়ার্টার নিবাসী সৎ ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ বিনোদ মেহতা যিনি জয়েন্ট এন্ট্রান্স এর ফর্মে সংশাপত্রে সই করে দিয়েছিলেন ১৯৮৪ তে নৃশংস ভাবে বন্দর মাফিয়াদের হাতে খুন হলেন ফতেপুর এর ধানখেতি মসজিদের কাছে। দাঙ্গা কারী কুখ্যাত সমাজ বিরোধী ঝুনু আনসারি সুব্রত মুখার্জী দের হাত ধরে হয়ে গেলেন কংগ্রেস ও তৃনমূলের বড় নেতা এবং বোরো চেয়ারম্যান।
পরে যখন হুগলী ডক অ্যান্ড পোর্ট ইঞ্জিনিয়ার্স এর হাওড়ার নাজিরগঞ্জ ইউনিট এ চাকরি করি, তখনও দ্বিতীয় হুগলী ব্রিজ তৈরি সম্পূর্ণ হয় নি, প্রতিদিন সকালে অফিসের এক্সিকিউটিভদের জন্যে সংরক্ষিত বাসটি আমাদের নিয়ে পৌঁছে যেত গার্ডেনরিচ এর বিচালি ঘাট পর্যন্ত। সহযাত্রী বাঙালি সাহেবরা ছিলেন বেশিরভাগ শহুরে উচ্চবর্ণের হিন্দু। এই অঞ্চলের প্রায়শই গোলমাল লেগে থাকা, ই এফ আর এর মার্চ, প্রচণ্ড দারিদ্র্য ঘিঞ্জি নোংরা বসতি, ভাষা সংস্কৃতি, রাস্তা জুড়ে নামাজ পড়া, রাস্তার পাশে মাংসের দোকানে লোহার হুকে গোমাংস ঝুলে থাকা, ভারত – পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তান জিতলে উল্লাস… এই সব দেখেই হয়তো শহরের মধ্যে অচেনা আরেক ‘ দুশরা পাকিস্তান ‘ এর নাম দিয়েছিলেন আফগানিস্তান।
আরও পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিয়ে পালস পোলিও বা কোন সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব রুখতে এই অঞ্চলে ঘুরতাম। সরকারি আধিকারিকরা এই অঞ্চলে আসতেই চাইতেন না। প্রথমবার যেবার সেই সময়কার দুর্বল পরিষেবার গার্ডেনরিচ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে বিশৃঙ্খল ট্রাফিক জট ঠেলে এবং গেটের মুখে গা গুলিয়ে ওঠা আবর্জনার পাশ কাটিয়ে যাই হাসপাতাল কর্মীরা খুব খুশি হন। অনেক সমস্যার কথা বলেন। খাওয়ার জন্যে চার পাঁচ রকমের বিরিয়ানি আনান। তার কোনটার রং লাল, কোনটার রং সবুজ। কোন রকমে এড়িয়ে যাই।
বেআইনি বহুতল: আমাদের প্রবল জনবহুল দেশে দারিদ্র্য, কর্ম সংস্থানের অভাবের সাথে উপযুক্ত বাসস্থানের অভাব বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। আর এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ভূমি, পুর, পরিবেশ সহ যাবতীয় আইন কানুন কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, নেতা পুলিশ পুরসভার আধিকারিকদের পর্যাপ্ত দক্ষিণা দিয়ে, যেখানেই সামান্য জায়গা তা রাস্তাই হোক বা জলাভূমি, জলাশয় হোক কোনরকম বুজিয়ে অপরিকল্পিত কুৎসিত বাজে মাল মশলায় তৈরি বিপজ্জনক দেশলাই বাক্সের মত বহুতল বানিয়ে চলেছেন জ্যোতি বসু – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দের জমানায় জন্মানো ও বেড়ে ওঠা প্রবল প্রতিপত্তিশালী প্রোমোটর শ্রেণী। বিপুল কালো টাকার শক্তিতে বলীয়ান এই হিংস্র উৎকট আগ্রাসী শ্রেণীটি কোন বাধা মানতে চায় না। তাই রাজি না হলে জমি বাড়ির মালিক বৃদ্ধ বৃদ্ধা দের মৃতদেহ পাওয়া যায়, তপন দত্তের মত পরিবেশপ্রেমী নিজের দলের নেতাদের কিংবা তাপস চৌধুরীর মত পুলিশ অফিসার দের হত্যা করা হয়।
গার্ডেনরিচ, রাজাবাজার, পিলখানা, কাজীপাড়া, পি এম বস্তি, টিকিয়াপাড়া, বেলগাছিয়া বস্তি, কলাবাগান, কলুটোলা, তপসিয়া, পার্ক সার্কাস, বেনিয়াপুকুর, তাঁতীবাগান, ফুলবাগান, একবালপুর, মোমিনপুর প্রভৃতি মুসলিম ঘেটো গুলিতে কিংবা দমদম, যাদবপুর, গড়িয়া, টালিগঞ্জ, বেহালা প্রভৃতি পূর্ব বাংলার হিন্দু উদ্বাস্তু অঞ্চল গুলিতে বেশি, কিন্তু এই অবৈধ অবৈজ্ঞানিক দূষণপূর্ণ ক্ষতিকর নির্মাণ ও সম্প্রসারণ সল্ট লেক, ভিআইপি রোড, রাজারহাট, বড়বাজার, ভবানীপুর, আলিপুরের মত ধনী অভিজাত এলাকা থেকে বরানগর, বৌবাজার, বেলেঘাটা, ট্যাংরা, কসবা, কালীঘাট, চেতলা সর্বত্র।
আর এই ঘটনা একদিনে হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে সারা দেশ জুড়ে সারা রাজ্য জুড়ে হয়ে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক সংকট বেশি থাকায়, স্থান সংকুলানের চাইতে জনসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায়, সমাজের রাজনীতিকরণ ও রাজনীতির অপরাধিকরণ বেশি ঘটায় আরও বেশি করে হয়েছে। বামফ্রন্টের সময় কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে অক্ষম দল যুবদের গৃহ – সম্পত্তি – জমি দখল, পুকুর বোজানো, পুরনো বাড়ি ভাঙ্গা, বহুতল তৈরি, ইমারতি ব্যবসা, তোলাবাজির সিন্ডিকেট চক্রতে যুক্ত করে। পাশাপাশি দলীয় অনুগত্য, ভোট করানোর নিশ্চয়তা এবং বিপুল অর্থ লাভ করে। আর তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে থাকতেই এই প্রোমোটারি ও সিন্ডিকেট চক্রগুলি ক্ষমতার গন্ধ পেয়ে তৃণমূল দলে ভিড়ে যায় আর দুহাত ভরে লুঠপাট করতে থাকে নেতা, পুলিশ দের সন্তুষ্ট করে।
যার বলি হতে হয় গার্ডেনরিচের ফতেপুর এর ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের আজান মোল্লা রোডের পুকুর বুজিয়ে নির্মীয়মান বহুতলের বাসিন্দা, আশ্রিত ও পাশের বস্তির সাধারণ গরীব গুর্বো মানুষকে।
এই ঘটনায় আরও দেখা গেল ঐ নির্মীয়মান বাড়িটির প্রোমোটার ওয়াসিম ও স্থানীয় কাউন্সিলর শামস ইকবাল হরিহর আত্মা, দুজনেই দাগী দুর্বৃত্ত এবং মেয়র সহ শাসক দলের আস্থাভাজন। আরও দেখা গেল দুর্ঘটনা ঘটার পর পুলিশ প্রশাসন উদ্ধার কাজের চাইতে মুখ্যমন্ত্রীর ভিজিটের প্রতি বেশি মনোযোগী ছিলেন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম ক্রমান্বয়ে দোষী কাউন্সিলরকে আড়াল করে পুরসভার কিছু সরকারি কর্মচারীর শাস্তির বিধান করেছেন যাদের রাজনৈতিক দানবদের নির্দেশের বাইরে কিছু করার ক্ষমতা ছিলনা।
অত: কিম: অপরিকল্পিত নগরায়ন অথবা বহুতল বস্তিআয়ন করে আমাদের বৃহত্তর কলকাতা – হাওড়া কে যা করে রাখা হয়েছে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা খুব মুশকিল। তাছাড়া আমাদের স্বভাব কোন কিছু নিয়ে কয়েকদিন হৈ চৈ করা, তারপর সব ভুলে নতুন কোন উত্তেজক বিষয়ের প্রতি আকর্ষিত হওয়া। তাছাড়া লোক সভা ভোটের মেগা শো এসে উপস্থিত। ইতিমধ্যে উদয়ন আর নিশীথ দিনহাটায় হাতাহাতি শুরু করে দিয়েছেন।
আর সত্যি সত্যিই যদি আমরা ভদ্র সভ্য ভাবে মানুষের মত বাঁচতে চাই তাহলে গোড়া থেকে পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিকভাবে জমি পরীক্ষা থেকে আরম্ভ করে সমস্ত নিয়ম মেনে গৃহ নির্মাণ করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিচ্ছন্নতা বজায় এবং সৌন্দর্যায়নের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিটি বেআইনি গৃহ চিহ্নিত করে ভেঙ্গে ফেলতে ও দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। অত্যধিক ফসিল ফুয়েল পোড়ানোর বিপরীতে ইলেকট্রিক ট্রেন, ব্যাটারি গাড়ি ও ব্যাটারি ফেরির গণ পরিবহন গড়ে তুলতে হবে। যেটুকু জলাভূমি আছে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং পুরনো যতটুকু সম্ভব ফিরিয়ে দিতে হবে।অসংখ্য গাছ পুঁতে এবং তাদের যত্ন করে শহরের সমগ্র ভূভাগের ৩০ % সবুজায়ন করে তুলতে হবে। দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই যদি অনেকটা পারে, তাহলে কলকাতা পারবেনা কেন?
২০.০৩.২০২৪