কালো মানুষের মৃত্যুর হিসেব নেই তাই হিটলার ঘৃণ্য আর লিওপোল্ড ২ বিষ্মৃত (১৮৬৫- ১৯০৮)
যদি আমরা বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের কঙ্গো অববাহিকায় চোখ ফেলি তাহলে দেখবো কঙ্গো শান্তিপ্রিয় কালো মানুষদের একটা নদীমাতৃক সভ্যতা। বর্তমান কঙ্গো আসলে দুটো দেশ দিয়ে তৈরি। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (ডিআরসি) আর রিপাবলিক অফ কঙ্গো। এর মধ্যে আবার ডিআরসি হলো অন্ধকারের হৃদয় (heart of darkness)- গভীর অরণ্যে ঢাকা। বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়, কৃপন আলোর অতঃপুরে। সেই অন্ধকার দেশের কঙ্গো নদীর অববাহিকা ধরে তৈরি এই দেশদুটো। কঙ্গো লুয়ালাবা আর চাম্বেশি নদী মিলে প্রায় চার হাজার সাতশো কিমি লম্বা। লম্বা বলছি আসলে উল্টোনো ইউ এর মতো দেখতে। এই গভীর বর্ষা অরণ্য আসলে পৃথিবীর একটা বড়ো কার্বন সিঙ্ক। অর্থাৎ এখানে কার্বন জমা হয়। বড্ড গরীব এই দেশে শিপাঞ্জি, দুই রকমের হাতী, সিংহ, বেবুন, বনবো, সোনালী বেড়াল, ময়ূর, হাজার রকমের সাপ, পাখি ভর্তি। রবার গাছ, কফি, তুলো ছাড়াও হীরে, সোনা, টিন, ট্যান্টালাম, কোবাল্ট এদের খনিজ সম্পদ। তবু এরা গরীবস্য গরীব।
আসলে কালো মানুষ তো-অশিক্ষিত তাই না গো বাবু? এরা এই সবের মূল্য কী দেবে? বাঙালি কেলেসাহেবরা নিশ্চয়ই এটাই ভাবছেন?
এর পর এলো মানুষ ধরার দল, বেলজিয়ান রাজা লিওপোল্ড ২, গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে। এলো আর নগ্ন করলো আপন নির্লজ্জ অমানুষতা। না বেলজিয়ানরা হীরে, সোনার খোঁজ করে নি, এসবের জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়- খনি খোঁড়াখুঁড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি- হাজার ঝামেলি। এসেছিল রাবার আর হাতীর দাঁতের লোভে।যে কালো মানুষ প্রতিবাদ করলো তাকে হত্যা করা হলো। প্রায় আশি লক্ষ থেকে এক কোটি মানুষকে নির্বিচারে খুন করা হলো (history by Marietti Karfioti)। এর কিন্তু ন্যুরেমবার্গ ক্যাম্পের মতো বিস্তারিত বিবরণ নেই। বর্বর হিটলারের হাতে মৃত ঐ ষাঠ লক্ষ মানুষ ইহুদি হলেও চামড়াটা তো সাদা রঙের ছিলো তাই গোটা পৃথিবীর যাবতীয় অশ্রু ওরা পেয়েছে। যেহেতু সাদা মানুষ কেঁদেছিলো, তাই গোটা পৃথিবী আফ্রিকাকে ফিরে দ্যাখে নি- যতো ঘৃণা পেয়েছে হিটলার-হিমলার গ্যোয়েবেলস। রবীন্দ্রনাথ কেবল মুক্তধারায় এই তীব্র জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বলেছেন। কিন্তু ইহুদীদের জন্য কবির কবিতা কোথায়?
অথচ সেই ছায়াচ্ছন্ন, সেই তথাকথিত সভ্যতার আলোহীন দেশে-যারা ঠিক মতো কাজ করতে পারে নি তাদের হাত কেটে দেওয়া হলো (বিশদ বিবরণে যাবো না, শুধু গুগলে ছবি দেখুন)।হে আফ্রিকা, তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে, বাষ্পাকুল অরণ্যপথে- পঙ্কিল হলো ধূলি- তোমার রক্ত অশ্রুতে মিশে, দস্যু পায়ের কাঁটামারা জুতোর তলায়, বীভৎস কাদার পিন্ড চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে। সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায় মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘন্টা- দয়াময় দেবতার নামে -সকালে সন্ধ্যায়; শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে
এই সময়ে এলো যুগান্তের কবি, যে জালিয়ানওয়ালাবাগের জন্য গর্জে ওঠে, যে কৃষ্ণকলি লেখে, যে আফ্রিকা লেখে। ভেবেছিলাম লেখাটা তথ্যবহুল করবো। আমার কবি এসে কাজটা সহজ করে দিলে। এমনটা আমি হাজার লিখলেও হতো না।
তবু অকাব্যিক কিছু বলি। ‘স্যর’ হেনরি মর্টন স্ট্যানলির কৃপায় লিওপোল্ড ২ খৃষ্টধর্ম প্রচার আর ‘আরব’ দেশে দাসপ্রথা বন্ধ করার জন্য কঙ্গো দেশের সত্ত্বাধিকারী হ’ন (আরে কালো মানুষের আবার মতামত!)। খৃষ্টধর্ম? হা হা। হা আমার পোড়া কপাল! ব্যক্তিগত দাসপ্রথা, কুৎসিততম অত্যাচার, নারীধর্ষণ, শিশুমেধ, ব্যক্তিগত সৈন্যদল-এবং হাতীনিধন যজ্ঞ।বিস্তার করতে আমার বমি পাচ্ছে। না টিআরপি বাড়াতেও লিখবো না। চপলমতি পাঠিকা, শুধু ভেবে নিন, সেই শ্বেতপূজার যুগে দাসত্বের অন্ধকারে থেকেও এ্যামন কবিতা কবিকে ক্যানো লিখতে হলো?