পৃথিবী বললেন মাটি।
অমনি মানুষেরা কলকল করে কোলাহল করে উঠলো।
রাজা বললেন, অধিকার।
সরকার বললেন, খাজনা।
প্রোমোটার বললো, ছত্রিশটা থ্রি বি এইচ কে ফ্ল্যাট।
শহুরে মধ্যবিত্ত বললো, দেশের বাড়ি।
গরীব ঝুপড়িবাসী বললো,
পয়দা থেকে বেওয়ারিশ লাশ হওয়া ইস্তক ছফুটের আস্তানা।
পৃথিবী আবার বললেন. মাটি।
সৈনিক বললো, সীমান্ত।
উদ্বাস্তু বললো, স্বপ্ন।
নির্বাসিত বললো, কাঁটাতার।
নাবিক বললো, বন্দর।
জেলে বললো, গরম ভাতের গন্ধ।
চাষী বললো, ভরা ফসলের ঘ্রাণ।
কয়লা শ্রমিক বললো, খনি নামার দরজা।
রাস্তা কাটা শ্রমিক বললো, একশো দিনের কাজ।
বেকার শ্রমিক বললো, ওই দূরে, জংলা গাছ গজানো কারখানা।
পৃথিবী মাথা নাড়লেন, তারপর আবার বললেন,
মাটি।
মৃৎশিল্পী বললো, প্রতিমা।
মালি বললো, জীবিকা।
স্থপতি বললো, ভিত।
ভবঘুরে বললো, দিকশূন্যপুর।
শিশুরা বললো, খেলার মাঠ।
ধার্মিক বললো, মন্দির, মসজিদ, গির্জা।
নেতা বললেন, মূর্তি প্রতিষ্ঠার জায়গা।
কম্যুনিস্ট বললো, সবটা আনা চাই রাষ্ট্রের আয়ত্ত্বে।
গণতান্ত্রিক বললো, অধিকার চাই সবার সমান সমান।
ক্যাপিটালিস্ট বললো, যার যেমন ক্ষমতা, তত বড় জমি।
ভিখিরি বললো, রোজ বাটি নিয়ে বসবার জায়গা।
পকেটমার বললো, হাতসাফাইয়ের ময়দান।
পৃথিবী শুনলেন সব,
তারপর অস্ফুটে আবার বললেন, মাটি।
বিয়েতে অসুখী মেয়েটা বললো, বাপের বাড়ি।
বিয়েতে ভীষণ সুখী মেয়েটা বললো, শ্বশুরবাড়ি।
নিজের পায়ে দাঁড়ানো মেয়েটা বললো, আমার বাড়ি।
কাজ না পাওয়া মেয়েটা বললো, ধর্নার জায়গা।
বিশ্ব-বখাটে ছেলেটা বললো, রাতে শুতে যাই যেখানে।
ছেলেটার বাবা বললেন, আগলে রাখা শেষ সম্বল।
মৃতদেহ বললো, কবর আর চিতা।
খুন করে পুঁতে দেওয়া লাশ বললো, বিচারের অপেক্ষা।
ধর্ষিতা মেয়েটি বললো, ধরে উঠে দাঁড়ানোর অবলম্বন।
প্রেমিক-প্রেমিকা বললো, আকাশ দেখার জায়গা।
পৃথিবী একটা ঝড়ের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
তারপরে বললেন,
একজনও কেউ মা বললি না তোরা!