১.
নাম রায়ান মোল্লা। বাড়ি সুন্দরবন। বয়স পাঁচ বছর। সে বেজায় ডানপিটে, সারাদিন মাঠে মাঠেই কাটে। এই সকালে একটা রুটি চায়ে ডুবিয়ে খেয়ে সেই যে বেরবে, বেলা গড়িয়ে যাবে- কিন্তু ঘরে সে ফিরবে না। অবশেষে তার আম্মি মাঠে গিয়ে কান ধরে বাড়ি এনে গোসল করিয়ে খাইয়ে যেই না পড়তে বসতে বলবে, বিকেলের মধ্যে ছেলে ঘর থেকে হাওয়া।
তা এহেন ছেলের মাসখানেক হলো আর খেলায় মন নেই। খেলার সঙ্গীদের সাথে আগের মতো পেরে ওঠে না রায়ান। একটু ছোটাছুটি করলেই মনে হয় বুকের মধ্যে কেউ ঢাক পেটাচ্ছে, মনে হয় এই বুঝি সব শেষ হয়ে এলো। এখন তাই ওকে ঘরেই পাওয়া যায় বেশির ভাগ সময়- একটা প্রাণবন্ত ছেলে কেমন যেন মুষড়ে পড়েছে।
২.
নাম পিঙ্কি সমাদ্দার। বাড়ি বেহালা। বয়স চার বছর। পিঙ্কির ইচ্ছা বড় হয়ে সে বিশাল বড় ডাক্তার হবে। কেন হবে, কী করে হবে, ডাক্তার হলে কী হয়- এসব তার জানা নেই। কিন্তু তার যখন জ্বর আসে বা সর্দিকাশি হয়, তখন যে কাকুর কাছে ও যায় উনি নাকি ডাক্তার। ওনার মতোই কষ্ট পাওয়া মানুষদের সারিয়ে তুলতে চায় পিঙ্কি।
কিন্তু দিনদিন জ্বর আসাটা ঘন ঘন হয়েই যাচ্ছে। পেটের বাঁদিকে কী যেন একটা টেনে রেখেছে মনে হয়। পিঙ্কির উচ্চতাও একইরকম রয়ে যাচ্ছে, খাবার খাচ্ছে কিন্তু কিছুই যেন গায়ে লাগছে না।
এরকমই আরো অনেক বাচ্চা প্রত্যেক মাসে উপস্থিত হয় শিশুবিভাগে, রক্ত নিতে। তাদের সবারই প্রায় একই গল্প, পরিণতিও প্রায় একই। কারো সমস্যা শুরু এক বছর বয়স থেকে,কারো বা তিন-চার বছর। থ্যালাসেমিয়া নামক রক্তাল্পতার রোগের শিকার এরা সবাই, যার প্রকৃত নিরাময় এখনো বিজ্ঞানীরা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।
তবে কি এই রোগের প্রতিরোধে করণীয় কিছুই নেই! অবশ্যই আছে। থ্যালাসেমিয়া একটা জিনগত রোগ। বাবা-মা দু’জনেই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে ২৫% ক্ষেত্রে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগ হতে পারে। আপনি এই রোগের বাহক কিনা সেটা সামান্য একটা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই ধরা পড়ে যায়। শুধু তাই নয়, নবজাতক শিশু এই রোগের শিকার হবে কিনা সেটাও গর্ভাবস্থায় পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিবাহের আগে এত জ্যোতিষগণনা করালেও এই সামান্য পরীক্ষা করতে মানুষের অনীহা, তার কারণও বিচিত্র। কেউ ভাবে, আমার তো রক্তাল্পতা নেই, তাই আমি থ্যালাসেমিয়া বাহক নই; কেউ ভাবে, আমাদের বংশে এসব রোগ নেই; কেউ ভয় পায়, এসব রোগ ধরা পড়লে লোকে কী ভাববে!!
প্রথমত বলি, থ্যালাসেমিয়ার বাহক একজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন- শুনলে অবাক হবেন প্রায় প্রতি দশ জনের মধ্যে একজন হলেন এই রোগের বাহক। সুতরাং রক্ত পরীক্ষা ছাড়া কেউ রোগের বাহক কিনা সেটা বলা অসম্ভব। আর সত্যি বলতে থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ায় লজ্জার কিছু নেই, কিন্তু সেই পরীক্ষা না করিয়ে নিজের শিশুকে একটা দুঃখময় জীবন উপহার দেওয়ার মতো লজ্জার কাজও আর দ্বিতীয়টা নেই। সুতরাং সচেতন হন, বিয়ের আগে অবশ্যই থ্যালাসেমিয়ার পরীক্ষা করান এবং বাকিদেরও তাতে উৎসাহ দিন। কে বলতে পারে, একদিন হয়তো থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগটাই হারিয়ে যাবে!!
আমি উত্তর কলকাতার এক কলেজে পড়াই।। আমাদের কলেজে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার একটি শিবির করতে চাই।। যদি কোনো যোগাযোগ নম্বর থাকে, please জানাবেন।।
ধন্যবাদ