মনে রাখতে হবে যে বেশির ভাগ লোকই কোন স্থায়ী সমস্যা ছাড়াই ডেঙ্গু থেকে আরোগ্যলাভ করে। মৃত্যুহার চিকিৎসা ছাড়া ১-৫%, এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসায় ১%-এরও কম। ডেঙ্গু জ্বরের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। অধিকাংশ ডেঙ্গু রুগীই সাধারণ চিকিত্সায় সুস্থ হয়ে যান, তবে নিম্নলিখিতদের ক্ষেত্রে রোগ জটিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে:
(১) গর্ভবতী মহিলা;
(২) দুই বছরের নিচে শিশু;
(৩) যারা কিডনি, লিভার হার্ট বা ফুসফুসের অসুখে আক্রান্ত;
(৪) উচ্চ রক্ত চাপ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ইত্যাদির অসুখে আক্রান্ত।
যা করতে হবে:
দিন দুয়েকের মধ্যে জ্বর না কমলে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার টেস্ট করিয়ে নিন। ডেঙ্গু ধরা পরলে রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে৷ বাড়িতে নিয়মিত দেখাশোনার সঙ্গেরোগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে৷
ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনে ভালো হয়ে যায়।
ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত রোগীকে মশারীর মধ্যে রাখতে হবে।
“বিপদসূচক চিহ্ন”-এর উপর ভিত্তি করে, বিশেষ করে যাদের স্বাস্থ্যের সমস্যা আগে থেকেই আছে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে৷ প্রচুর তরল খাবার খেতে দিতে হবে -ডাবের জল, লিকার চা, ওআরএস, ফলের রস, ডালের রস, ঘোল। রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থার থেকে দিনে অন্তত ১ লিটার বেশি (পাঁচ গ্লাস)বেশি তরল/ জল খেতে হবে।
ভর্তি হওয়া রোগীর যে পরীক্ষাগুলি নিয়মিত দরকার:
(১) জ্বরের মাত্রা,
(২) নাড়ির গতি,
(৩) রক্ত চাপ,
(৪) প্রস্রাব এর পরিমাণ,
(৫) প্লেটলেট ও হিমাটোক্রিট জাতীয় রক্তের পরীক্ষা।
যা করা যাবে না:
ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না, জ্বর কমানোর জন্য কেবলমাত্র প্যারাসিটামল।
বিপদসূচক চিহ্নগুলি দেখা দিলে রুগীকে বাড়িতে ফেলে রাখা যাবে না। সেগুলি হল:
(১) তিন বা চার দিন পরেও জ্বর কমেনি;
(২) খুব দুর্বল, বসতে বা দাঁড়াতে পারছে না;
(৩) পেটে খুব যন্ত্রণা, বমি ভাব, বারবার বমি;
(৪) মাথা ঘোরা, বেহুঁশ ভাব
(৫) ছয় ঘন্টার বেশি প্রস্রাব বন্ধ বা খুব অল্প, গাঢ় রঙের;
(৬) রক্ত ক্ষরণ।
অযথা প্লেটলেট দেওয়া নিয়ে মাথা ঘামানো যাবে না, কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করা যাবে না।
মনে রাখতে হবে যে: ডেঙ্গু রোগীকে প্লেটলেট দেওয়ার প্রয়োজন হয় যদি (১) রক্তে প্লেটলেট এর মাত্রা ১০,০০০ এর নিচে নেমে যায়; (২) যদি বিপদ জনক মাত্রায় রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে।
জ্বরের রুগীর জ্বর সেরে গেছে অতএব রোগ সেরে গেছে ভেবে রাস্তায় নেমে লাফালাফি করা যাবে না। জ্বর কমে যাওয়ার পরেও সাত থেকে দশ দিন পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকতে হবে নইলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়ে যেতে পারে।
সর্বশেষ পরামর্শ: পেঁপে এর রস দিয়ে ডেঙ্গু সেরে যাওয়ার বা প্লেটলেট বেড়ে যাওয়ার কল্প কাহিনীতে বিশ্বাস রাখলে নিজ দায়িত্বে রাখবেন।
পাশ করা সঠিক ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সেগুলি মেনে চলুন।
অযথা ফ্লুইড চালিয়ে, স্টেরয়েড দিয়ে রোগীর অবস্থা সঙ্গীন করে দেয়ার হাতুড়েপনার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করবেন।