সে আজ থেকে অনেক দিন আগে, প্রায় বছর চল্লিশ কি তারও একটু বেশি আগে, ও’দের মা মানে আমার গিন্নী যে আবার আমার সহপাঠিনীও, তার গল্প।
তখন আমি কর্মহীন। চাকরির সন্ধানে ব্যস্ত। আর সে চন্দননগরে এক নার্সিংহোমের আরএমও। সেই নার্সিংহোমের বৈশিষ্ট্য ছিল। ডাক্তার শ্যামলী ঘোষ সেই নার্সিংহোমের মালকিন। সেখানে মূলত ডেলিভারিই করা হতো। প্রেগনেন্ট মায়েরা, বড়লোক অবশ্যই, তাঁরা ডেলিভারির দশ পনেরো দিন আগে ভর্তি হতেন ওখানে।
ও বলতে ভুলেছি আমি তখন সে নার্সিংহোমের জামাই। সিঙ্গেল রুম কোয়ার্টার। আমিও সেখানে থাকি, খাই দাই, আর সারাদিন চাকরি খুঁজি।
তখন অধিকাংশ কেসেই কিন্তু নরমাল ডেলিভারি হত। আজকালকার মত সিজার হত কম।
সেই হবু মায়েরা মাঝের ক’দিন, যদ্দিন না ডেলিভারি হচ্ছে হয় গল্পের বই নইলে শখের সেলাই ফোঁড়াই।
আমার গিন্নীর, সেই সব প্রায় সমবয়সী মায়েদের সাথে, পনেরো দিন থাকা মানে অনেকগুলো দিন তো, এক ধরনের বন্ধুত্বই হয়ে যেত।
সেই রকম এক ডেলিভারি হতে আসা মায়ের কাছ থেকে আমার গিন্নি একটা ডিজাইন শিখে এল। তারপর সারারাত জেগে সে উল কাঁটা নিয়ে লড়াই করে সেই ডিজাইনটা তুলে সকালবেলায় শিক্ষিকাকে দেখাতে গেছে।
সেই যে শিক্ষিকা কিন্তু কাজটা দেখে প্রচণ্ড অভিমানী হয়ে পড়লেন।
ও ডাক্তারদিদি, আপনি এত ভালো একটা ডিজাইন জানেন আর আমাকে বলেনওনি, শেখানওনি?
মানে, হয়েছে কি উনি নিজে যে ডিজাইনটা শিখিয়েছিলেন সেটা শিখতে কিছু ভুল করেছে আমার গিন্নী এবং একই ভুল বার বার বার করে যাওয়ায় আর একটা নতুন প্যাটার্নের ডিজাইন তৈরি হয়ে গেছে। সেটা দেখতে নাকি অদ্ভুত সুন্দর।
এই ভাবে হে পাঠক এক মহান ডিজাইন আবিষ্কৃত হয়েছিল অনতিঅতীতে।
ইতিহাস বিশেষত বিজ্ঞানের ইতিহাস ঘাঁটলে এই রকমের বহু আবিষ্কারের কথা জানা যাবে।